২২ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ৪:০৯

ক্ষেতের মূল্যের চেয়ে বাজারের মূল্য দ্বিগুণ

ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের প্রান্তিক চাষি ওমর ফারুক কোনাপাড়া বাজারে এক মণ বেগুন এনে প্রতি কেজি বিক্রি করলেন ২০ টাকা দরে। ছোট সাইজের ১৫০টি কাঁচা মিষ্টি লাউ বিক্রি করলেন প্রতি পিস ১০ টাকা করে। গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাসুদ সেই বেগুন আর মিষ্টি লাউ কিনে ময়মনসিংহ নগরীর মিন্টু কলেজ রেলগেট বাজারে বিক্রি করেছেন ৪০ টাকা কেজি ও ৪০ টাকা পিস হিসেবে। ওই বাজারের বেগুন ও মিষ্টি লাউ ফড়িয়া ও পাইকাররা কিনে নগরীর আড়তে বিক্রি করেছেন ২৫ টাকা ও ১৫ টাকায়।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কোনাপাড়া, অম্বিকাগঞ্জ, জয়বাংলা, সিরতা, বোররচর, সারবাজার, অষ্টাধর সবজির অন্যতম গ্রামীণ হাট। প্রতিদিন এখানে নানা রকমের সবজির হাট বসে। ভোররাত থেকে বেচাকেনা শুরু হয়ে চলে সকাল সাতটা-আটটা পর্যন্ত। আবার কোনো কোনো বাজার বিকেলেও বসে। বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা নাগাদ চলে বেচাকেনা। এইসব বাজারের ক্রেতা প্রায় সবাই স্থানীয় ফড়িয়া, পাইকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এলাকার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা এই বাজারে নানা রকমের সবজি বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। গ্রামের ফড়িয়া, পাইকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই বাজার থেকে সবজি কিনে ময়মনসিংহ নগরীসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করেন।

একাধিক সবজি বিক্রেতার সাথে আলাপকালে জানা যায়, মঙ্গলবার ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের বাজার থেকে কেনা সবজি নগরীর আড়ত ও খুচরা বাজারে প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হয়। গ্রামীণ বাজারে টমেটো প্রতি কেজি ২২ টাকা থেকে ২৪ টাকা, আড়তে ৩০ টাকা এবং নগরীতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। একইভাবে বেগুন ২০ টাকা, আড়তে ২৫ টাকা এবং নগরীতে ৪০ টাকা, শিম ২০ টাকা, আড়তে ৩০ টাকা এবং নগরীতে ৪০ টাকা, শসা ২৫ টাকা, আড়তে ৩০ টাকা এবং নগরীতে ৪০ টাকা, শীত লাউ শিম ২০ টাকা, আড়তে ২৫ টাকা এবং নগরীতে ৪০ টাকা, পাতাকপি ২০ টাকা, আড়তে ২২ টাকা এবং নগরীতে ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, আড়তে ২৫ টাকা এবং নগরীতে ৩০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, আড়তে ৩৫ টাকা এবং নগরীতে ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩০ টাকা, আড়তে ৩৫ টাকা এবং নগরীতে ৬০ টাকা, পুঁইশাক ১০ টাকা, আড়তে ১২-১৩ টাকা এবং নগরীতে ২৫ টাকা, লেবু প্রতি পিস ৫-৬ টাকা, আড়তে ৬-৭ টাকা এবং নগরীতে ৮-১০ টাকা, ক্ষিরা ২০ টাকা, আড়তে ৩৫ টাকা এবং নগরীতে ৫০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, আড়তে ৪৫ টাকা এবং নগরীতে ৬০ টাকা, এবং পাটশাক প্রতি গোছা ৫ টাকা, আড়তে ৬-৭ টাকা এবং নগরীতে ১০-১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।

ময়মনসিংহ নগরীর মেছুয়াবাজারের আড়তে গতকাল টমেটো কেজি প্রতি ২০-২২ টাকা, বেগুন ২০-২৫ টাকা, শসা ও ক্ষিরা ২০-২৫ টাকা, ছোট সাইজের কাঁচা মিষ্টি লাউ ১০-১২ টাকা, গাজর ২৫ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৬৫ টাকা, চাল কুমড়া ৩০ টাকা পিস, করলা ২৫-৩০ টাকা, শিম ১০-১৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৩০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে। এসব সবজি আড়ত থেকে কিনে সামনে রাস্তায় বিক্রি করা হচ্ছে টমেটো কেজিপ্রতি ৩০-৩৫ টাকা, বেগুন ৩৫-৪০ টাকা, শসা ও ক্ষিরা ৫০-৬০ টাকা, ছোট সাইজের কাঁচা মিষ্টি লাউ ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৩৫ টাকা পিস, করলা ৪০ টাকা, শিম ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আড়তদার হেলাল মিয়া ও জহিরুল ইসলাম জানান, সবজির চাহিদা ও দাম দিনদিনই কমছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সকল সবজির মূল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। রমজানের কারণে হোটেল বন্ধ ও চাহিদা কম থাকায় বাজারদর কমে গেছে।

চরাঞ্চলের বোররচর টমেটোর জন্য প্রসিদ্ধ। সেখানকার কাচারিবাজার থেকে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে পাঁচশ ট্রাক টমেটো ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। বোররচরের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁর ছোট ভাই এবার ২২ কাঠা (প্রতি ১১ শতাংশে এক কাঠা) জমিতে টমেটো চাষ করে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার তিনি ২৪ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। অষ্টাধর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়সার জানান, অষ্টাধরে ২২ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করে চাষিরা কমপক্ষে পাঁচশ’ টন টমেটো উৎপাদন করে লাভবান হয়েছে। তিনি আরো জানান, অষ্টাধরের এক কৃষক নিজের জমি ও শ্রম বাদে বিঘাপ্রতি টমেটো চাষে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে আড়াই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) তাহমিনা ইয়াসমিন জানান, চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহ জেলায় ২১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ৯২২ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৯৭৬ কোটি টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/823243