২১ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:২৩

এক দিনেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার ২২ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে আমানতের সুদহার। এতে ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে। কিন্তু এতেও কুলকিনারা না পেয়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ধার নিয়ে চলছে কিছু ব্যাংক। গতকাল এক দিনেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিল সঙ্কটে পড়া এমন ব্যাংকগুলো ধার করেছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এতে সর্বোচ্চ সুদ গুনতে হয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক দিকে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, অপর দিকে বেড়ে যাচ্ছে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপির পরিমাণ। সবমিলেই অনেক ব্যাংকই তহবিল সংস্থানে ব্যস্ততার মধ্যে পার করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত কয়েক দিন ধরে তারা গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে ধার নিচ্ছে। যেমন গত ১৪ মার্চ ব্যাংকগুলোকে ধার দেয়া হয়েছিল ২০ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। ১৮ মার্চ ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। আর গত ১৯ মার্চ দেয়া হয়েছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তুলনামূলক ঋণ আদায় কমে গেছে। অপর দিকে ঈদকেন্দিক ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের হার বেড়েছে। এতে অনেক ব্যাংক দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে নগদ টাকার সঙ্কটে পড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকেও কাঙ্ক্ষিত হারে ধার পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আগে বলা হতো বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। বিপরীতে ডলারের সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর এ কারণেই নগদ প্রবাহ কমে গেছে। কিন্তু গত কয়েক মাস যাবত বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে শুধু সরকারি কিছু কেনাকাটার জন্য সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে কিছু ডলার বিক্রি করা ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে না। সুতরাং ডলার বিক্রির কারণে টাকার সঙ্কট হচ্ছে এটা আর এখন বলা যাবে না। প্রকৃত বিষয় হলো ব্যাংকে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু ওই অর্থ আর ফেরত দিচ্ছেন না। কিন্তু আমানতকারীদের অর্থ ব্যাংকগুলোকে ঠিকই ফেরত দিতে হচ্ছে। এক দিকে ঋণ আদায় কমে গেছে, অপর দিকে তুলনামূলকভাবে উত্তোলন বেড়ে গেছে। বিশেষ করে চলমান পবিত্র রমজান ও সামনে ঈদকে সামনে রেখে গ্রাহকদের কেনাকাটা বেড়েছে। সবমিলেই নগদ টাকার উত্তোলন তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতেই কিছু ব্যাংকের নগদ টাকার টান পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৯ মার্চ একদিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় তিনটি ব্যাংক ৪৫০ কোটি টাকা ধার করেছে। ২৪টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১৩ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, সরকারের ঋণ দানে বাধ্য এমন ১৬টি ব্যাংক (যাদেরকে প্রাইমারি ডিলার বা পিডি নামে অভিহিত) ৭ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা ধার করেছে। আর ২টি ইসলামী ব্যাংক ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামী ব্যাংকের তারল্য সুবিধার আওতায় ৫০০ কোটি টাকা ধার করেছে। সবমিলে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধার নিতে ব্যাংকগুলোকে সর্বনিম্ন ৮ শতাংশ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদও দিতে হয়েছে।

এ দিকে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ হার আরো বাড়ানো হয়েছে। চলতি মাসে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়বে। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদ হার বেড়ে গেছে। একই সাথে বাড়ছে আমানতের সুদ হারও। ঋণের সুদ হার বাড়ার কারণে ব্যবসা খরচ বাড়ছে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ার সাথে দামও বাড়ছে। ফলে বিপাকে পড়ছেন দেশের উদ্যোক্তারা। পণ্যের দাম বাড়ার কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি আরো বাড়বে।

এ দিকে ঋণের সুদ হার বাড়ানোর সাথে আমানতের সুদ হারও বাড়ছে। ব্যাংকের আমানতের সুদ হার বাড়ানোর কোনো সীমা নেই। ব্যাংকগুলো আয়ের সাথে ব্যয়ের তুলনা করে তা বাড়াতে পারবে। ইতোমধ্যে আমানতের সুদ হার অনেক ব্যাংক বাড়িয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ সুদেও আমানত নিচ্ছে। তবে বেশির ভাগ যেভাবে বাড়ছে তাতে ব্যবসা খরচ আরো বেড়ে ব্যাংকেই এ হার ডাবল ডিজিটে রয়েছে।

উদ্যোক্তারা বলেছেন, ঋণের সুদ হার
যাচ্ছে। অন্য দিকে ডলারের দামও চড়া। সব মিলে আমদানি পণ্যের দাম আরো বাড়বে। এতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার থেকে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলোর সুফল কতটুকু মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ দিকে সুদ হার বাড়ানোর ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কিছুটা কমেছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। তবে এতে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি কমে গেছে। নতুন শিল্প স্থাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/822970