১৬ মার্চ ২০২৪, শনিবার, ১:০৮

অভিযানেও কমছে না ভোগ্য পণ্যের দাম

রোজার আগে থেকে চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে ভোগ্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান চলমান রেখেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন। গত ১৫ দিনের অভিযানে ৭৭টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এর পরও পণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালে রাখা যাচ্ছে না।

জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, রমজান শুরুর ১২ দিন আগে থেকে তারা অভিযান শুরু করে।
১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৪২ প্রতিষ্ঠানকে ছয় লাখ ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে সাত লাখ ৮৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত তিন মাসে ছোলা, চিনি, খেজুর ও ভোজ্য তেল খালাস হয়েছে সাত লাখ ৮৬০ টন। এসব পণ্য এরই মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

রজমানকে কেন্দ্র করে আনা আরো প্রায় ৫ শতাংশ পণ্য খালাসের প্রক্রিয়ায় আছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর পর্যাপ্ত আমদানি সত্ত্বেও ডলারের বাড়তি দামের কারণে দাম বেড়েছে ছোলার। এখন পাইকারি বাজারে মানভেদে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি। আর খুচরা বাজারে ১০০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অথচ গত বছর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৯০ টাকায়।
একইভাবে পাইকারি বাজারে চিনির কেজি এখন ১৩০ থেকে ১৪২ টাকা। খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়ে প্রতি কেজি ১৪২ থেকে ১৪৫ টাকা হয়েছে, যা গত রমজানে বিক্রি হয়েছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি। তবে কমেছে ভোজ্য তেলের দাম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা।

এটি গত বছর ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা লিটার।
রোজা শুরুর এক দিন আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। অতি সাধারণ বা নিম্নমানের খেজুরের দাম ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং অতি পরিচিত জাহিদি খেজুর ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। কিন্তু ওই দামে কোনো খেজুর বাজারে নেই। চট্টগ্রামের চকবাজারে সাফভি খেজুর প্রতি কেজি এক হাজার ২৫০ টাকা, প্রিমিয়াম মাবরুম এক হাজার ৪০০ টাকা, আজোয়া এক হাজার ৩০০ টাকা, মরিয়ম ৮০০ টাকা এবং ছড়া খেজুর ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানের সময়ই খেজুরের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেশি করে শুল্ক আরোপ করায় এবার দাম অনেক বেড়েছে।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার বৈঠক করে অনুরোধ করেছি, রোজায় পণ্যের দাম না বাড়াতে। অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমদানি ও দেশে উৎপাদনের তথ্য যাচাই করে নিয়মিত বাজার তদারকি করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোছাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে চিনির দাম অতিরিক্ত রাখার দায়ে এক ব্যবসায়ীকে লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী গড়ে প্রতিদিন আয় করেন কোটি টাকা। অল্প পরিমাণের জরিমানা করায় অসাধু ব্যবসায়ীদের গায়ে লাগছে না।’

ক্যাবের সহসভাপতি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইনে বলা আছে, জরিমানা করার পরও কেউ যদি পুনরায় দাম অহেতুক বাড়িয়ে মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আমাদের তদারকি সংস্থাগুলো বাজার ফলোআপ করে না। ফলে জরিমানা করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘রোজাকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের পকেট কাটছেই। জরিমানা করেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। এখন থেকে আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা নয়, জেল দেব।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2024/03/16/1371906