১৬ মার্চ ২০২৪, শনিবার, ১:০৭

দাম বেশি বিক্রি কম

নামিদামি রেস্টুরেন্ট। জমজমাট ইফতার বাজার। হরেক রকম খাবার। পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। ক্রেতা ভেড়াতে নানা হাঁকডাক। ক্রেতাদের কেউ দরদাম করে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার চড়া দামেই কিনছেন। অনেকে একাধিক পদের ইফতারি নিতে এসে এক পদ নিয়ে ফিরছেন। গেল বারের চেয়ে এবার দাম বেশ চড়া। এনিয়ে ক্রেতাদের নানা অভিযোগ-অনুযোগ আছে।

তারপরেও অনেকটা বাধ্য হয়েই কিনছেন কেউ কেউ। বেচাবিক্রিতেও কোনো ভাটা নেই। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তই ভিড় লেগে আছে। তবে রেস্টুরেন্ট মালিকরা বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় খাবারের দাম বাড়াতে হয়েছে। ফলে অর্ধেক ক্রেতাও আসছেন না। আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় খাবার থেকে যাচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে তাদের ব্যবসা। অভিজাত এলাকায় পশ্চিমা ঘরানার খাবারের চাহিদা একটু বেশি। যাদের যেটা পছন্দ, তাদের জন্য বাহারি ইফতারির আয়োজন আছে ধানমণ্ডির স্টার হোটেল অ্যান্ড কাবাব রেস্টুরেন্টে। দাম যেহেতু চড়া, তাই ইফতারিতে বিদেশি খ্যাতনামা খাবারের স্বাদ নিতে গেলে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ পদের খাবার তৈরি হয়। সবগুলোই সাজিয়ে রাখা আছে। ঝিগাতলা থেকে ইফতারি নিতে আসা ইমতিয়াজ উর রহমান বলেন, বাসায় মেহমান আছে। তাই একটু ভিন্ন ধরনের ইফতারি নিতে স্টার কাবাবে এসেছি। কিন্তু খাবারের যে দাম, এই দামে খাবার কেনা সম্ভব না।

এক পদের দাম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। অথচ আমার পুরো দিনের ইফতারের বাজেটও এত না। তাই কমদামি কিছু আইটেম নিয়ে ফিরতে হবে। আমার মতো আরও অনেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন। এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জানালেন, এই বছর খাবার তৈরিতে খরচ দ্বিগুণ। আবার বাড়তি ভ্যাট। ক্রেতাও আগের চেয়ে অনেক কম। এসব বিবেচনা করে ইফতারির আইটেম তারা কিছু কমিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা প্রায় ২৫ রকমের খাদ্য তৈরি করছেন। আগে অর্ধশত পদ থাকতো। তাদের জনপ্রিয় পদগুলোর মধ্যে আছে- হালিম গরু ৬৫০ টাকা কেজি, হালিম খাসি ৮৯০ টাকা কেজি। এরপর চিকেন চিলি ৭০০, ব্রেন মাসালা ১১০০, চিকেন ঝাল ফ্রাই ৪২০, বিফ চাপ কেজি ১২০০, খাসির গ্রিল চাপ ১৩০০, খাসির লেগ রোস্ট ৬৫০, খাসির লেগ কাবাব ৬৫০, গরুর কালা ভুনা ১১০০, কলিজা ভুনা ১২০০, ছোট লেগ রোস্ট ৩৫০, চিকেন চাপ ১৫০, চিকেন ফুল রোস্ট ৩২০, চিকেন রোস্ট ৪২০, চাইনিজ সবজি ৬৮০, চিকেন ঝালবড়া ৪৬০, চিকেন সাসলিক ২০৪, চিকেন উইংস ৩৫০, চিকেন ফ্রাই ২৪৮, চিকেন টিক্কা ২৪০, চিকেন বটি কাবাব ১২৫, গ্রিল চিকেন টিক্কা ২৪০, চিকেন চিজ কাবাব ২০০।

নানা ধরনের বিরিয়ানি তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানি ৬৪৯, চিকেন বিরিয়ানি ৬৪৯। দই বড় বাটি ২৫০ টাকা, মালাই টিক্কা ১৮০ টাকা, মোরগ পোলাও ১৫০ টাকা, ফালুদা ২২৬, ফিরনি ২৭৭, জাফরান ফিরনি ৩৯০, লাবাং ৩৬১, মরিয়ম খেজুর ১০৮৭, আজওয়া খেজুর ১০৮০,বাটার পরাটা ৬৫, টানা পরাটা ৪০, চিকেন পরাটা ৬৫, চিকেন রোল ৩০, চাইনিজ রোল ৩০, চিজ রোল ৩৫, জালি কাবাব ২৫, চিকেন তাওয়া ফ্রাই ৮০, চিকেন ক্রাম ফ্রাই ১৫০, ভেজিটেবল রোল ৫০, চিকেন অনথন ২৫, জিলাপি স্পেশাল ৬৮০, জিলাপি নরমাল ৪০০, মালাই জিলাপি ৪৫০। কাচ্চি বিরিয়ানি ও তেহারির দাম হাফ প্লেট ২১০ টাকা, গরুর চাপ বা ভুনা কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা, খাসির চাপ কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা, চিকেন টিক্কা প্রতিটি ৪০ টাকা, শিককাবাব ১৬০ টাকা, হালিম ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় জিলাপি ২০০ টাকা। কমদামি পদের মধ্যে আছে, ছোলা ১৬০ টাকা, বেগুনী ১৩৮, পিয়াজু ১৩৮, আলুর চপ ১৩০, ডিমের চপ ২৩৩ টাকা।

ধানমণ্ডির স্টার হোটেল অ্যান্ড কাবাবের ম্যানেজার সিহাবুল আলম বলেন, খাবারের দাম তুলনামূলক কমই। গতবারের চেয়ে খুব বেশি নয়। তবে খাবার তৈরিতে খরচ অনেক বেড়েছে। তাই দামও একটু বাড়াতে হয়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা সবসময় ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে খাবার সরবরাহ করার চেষ্টা করি। আগে দুপুর থেকেই ভিড় লেগে থাকতো। এখন বিকালে কিছুটা ভিড় হয়। কিন্তু দুপুরে ক্রেতার দেখা মেলে না। আমরা কোয়ালিটি সম্পন্ন খাবার তৈরি করি তাই ক্রেতাদের আস্থা আছে। এজন্য ঢাকার দূর-দুরান্ত থেকে তারা ধানমণ্ডিতে ছুটে আসেন। কাওরান বাজার স্টার হোটেলের ক্যাশিয়ার আলম রায়হান বলেন, বেচাবিক্রি একবারে খারাপ না। তবে অতীতের তুলনায় এই বছর একটু কম। মানুষের আয় রোজগার কম। উঁচুশ্রেণির ক্রেতা ছাড়া মধ্যবিত্তরা তেমন আসে না। কেউ কেউ আসলেও আমাদের বিশেষ আইটেমগুলো তারা নেন না। ছোলা, বুট, জিলাপি, চাপ, পিয়াজু, হালিম নিয়েই চলে যান। আশা করি সামনে বিক্রি আরও বাড়বে।

https://mzamin.com/news.php?news=101911