১৪ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:২৪

ভোক্তার খরচ ১১৮ টাকা পর্যন্ত বাড়বে

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে শিল্পকারখানার পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তার খরচ বাড়বে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে ভোক্তাকে শীতকালে গড়ে অতিরিক্ত ১০৬ টাকা আর গরমে ১১৮ টাকা বাড়তি বিল দিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ক্যাপাসিটি চার্জের অযৌক্তিক বোঝা গ্রাহকের ওপর চাপানো হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। সংস্থাটির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। উপস্থিত ছিলেন গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি, মাশফিক আহসান হৃদয় এবং প্রোগ্রাম সহযোগী ফয়সাল কাইয়ুম প্রমুখ। তাদের মতে, সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে বিদ্যুতের দাম আরও দুদফা বাড়ানো হলে অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে। সংস্থাটির প্রশ্ন, সরকার কোন প্রেক্ষাপটে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিল। আইএমএফের পরামর্শে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা বলে যেভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, এটার প্রয়োজনই পড়বে না। আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকারকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়াসহ ৪টি বিকল্প পথরেখাও দিয়েছে সিপিডি।

১ মার্চ থেকে নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। আর চলতি বছরের ২ মাসে বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিদ্যুতের বর্ধিত ক্যাপাসিটি না কমিয়ে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। আর এর সম্পূর্ণ বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ভোক্তার কাঁধে। এটি অযৌক্তিক। বক্তারা বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ইউনিট প্রতি ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত। শতকরা হিসাবে যা ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে দর বাড়ানো হয়। এতে শিল্পকারখানার খরচের পাশাপাশি ভোক্তার খরচ বাড়বে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে ভোক্তার খরচ বেড়েছে সাড়ে ১৭ শতাংশ। সিপিডি বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। এতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। অবিলম্বে সরকারকে বিদ্যুৎ জ্বালানি অ্যাক্টের ওই ধারা রহিত করে বিইআরসির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং ও গণশুনানির মাধ্যমে মূল্য সমন্বয় করতে হবে। ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’র ভিত্তিতে সরকারকে যেতে হবে।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুতের চাহিদায় সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০৪১ সালে দেশ উন্নত হবে, মাথাপিছু আয় বেড়ে হবে ১২ হাজার ডলার। এই মানদণ্ডকে মাথায় রেখে বিদ্যুতের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। এক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়া কোম্পানিগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। আর সাধারণ ভোক্তাদের এর মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। বর্ধিত ক্যাপাসিটি না কমিয়ে ভর্তুকির চাপ সম্পূর্ণ ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া অযৌক্তিক। তিনি বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জের পাশাপাশি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির আরও কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি, এলএনজি ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝোঁক এবং বিদ্যুৎ কেনায় প্রতিযোগিতার অভাব। বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতি পরিবারে মাসিক ব্যয় গড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র শিল্পে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ, ব্যবসা ও অফিসে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, শিল্পে ১০ শতাংশ এবং সেচে ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও এর সঙ্গে বেড়েছে। অনুষ্ঠানে বলা হয়, আরও দুবার দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা বলছে সরকার। এতে অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে। তাই বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য সমন্বয়ে বিইআরসির গণশুনানির পদ্ধতি পুনর্বহাল জরুরি।

সিপিডি বলছে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় বাসাবাড়িতে গড়ে বাড়তি বিল দিতে হবে। উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার দায় সরকার ভোক্তার ওপর চাপিয়েছে। এ মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাকে বাড়তি চাপে ফেলবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে গণশুনানির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি বা কমানো উচিত। সংস্থাটি বলছে, যে হারে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, তা ভোক্তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে। যদিও সরকার বলছে ভোক্তার ওপর চাপ পড়বে না। সরকার এই ৪ পদক্ষেপ নিলে ২০২৯ সাল থেকে আর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে না। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ক্রমান্বয়ে তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বের হওয়া এবং ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ অর্থ পরিশোধ না করে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ সিস্টেম চালু করা। সংস্থাটির মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়ালেই বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/784441