১১ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ১২:৫৫

বেগুনের দামে লাফ

রমজান শুরুর আগেই ইফতার আয়োজনের অন্যতম তিনটি অনুষঙ্গের দামে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে বাজারে। লাফিয়ে বাড়ছে বেগুনের দাম। শসা ও লেবু বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। ইফতারে ব্যবহার হয় এমন অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে গত দু’দিনে। রমজানে বেশি ব্যবহার হয় এমন বেশির ভাগ কাঁচা পণ্যের দাম বাড়তির দিকে।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি বেগুন সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। কয়েকদিন আগেও পণ্যটি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাওরান বাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে ৮০ টাকা কেজিতে বেগুন বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। মিরপুরের দুয়ারিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী রকিবুল বলেন, এতদিন ৬০ টাকা দরে বেগুন বিক্রি করেছি। হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে। কেন বেড়েছে জানি না।

বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।
এদিকে ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে লেবুর দাম। বাজারে ভালো মানের প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ফলে একটি লেবু কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। এ ছাড়া শতক ছাড়িয়েছে শসা। মান বিবেচনায় পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ক্ষিরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে যে লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে গত দু’দিন ধরে তা ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। শসার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলেন, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রোজার আগে পণ্যগুলোর দাম বাড়ার কারণ জানেন না বিক্রেতারা। তারা বলছেন, রোজা আসলে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, প্রতিবছরই রোজা এলেই জিনিসের দাম বাড়ে। পরে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষগুলো কিছুদিন লোক দেখানো অভিযান চালাবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে এবং পণ্যের দাম ১০০ টাকা বাড়ার পর ৫ টাকা কমবে। এটাই নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। এতে সাধারণ জনগণের কষ্ট ভোগ করতে হবে।

রাজধানীর তালতলায় বাজার করতে আসা আতাউর রহমান বলেন, এবারের রোজাটাও আমাদের কষ্টে কাটাতে হবে। কোনো উপায় নাই। বলেও কোনো লাভ নাই। কারণ পণ্যের দাম ১০০ টাকা বাড়লে ৫ টাকা কমানো হবে। কিছুদিন আগে দেখলাম ডিজেল-পেট্রোলের দাম ৩০-৪০ টাকা বাড়ার পর মাত্র ২-৪ টাকা কমেছে।

আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে লেবু, শসা ও বেগুনের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু পণ্যগুলোর দাম বাড়ানো হয়েছে। বিক্রেতারা আগের মতোই বলছে যে, তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে- এজন্য বেশি দামে বিক্রি করছে। তিনি বলেন, অন্য দেশগুলোতে যেখানে দাম কমানো হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

দাম বেড়েছে আটা, চিনি, চাল ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম। বাজারে মোটা চালের দাম ২ টাকা বেড়ে ৫২ টাকা হয়েছে। আর চিকন চালের দাম বেড়ে ৭৬ টাকা হয়েছে। অন্যদিকে আটার দাম বেড়ে ৬২ এবং ময়দার দাম বেড়ে ৬৮ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা বেড়ে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে।

রোজায় পণ্যের দাম বাড়া প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু গতকাল বলেছেন, উৎপাদনস্থলের ৫ টাকার লেবু কীভাবে ঢাকায় ১৫ টাকা হয়, তা বোধগম্য নয়। নানা হাত বদলে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এসব নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। তবে রাতারাতি নয়, কয়েক মাসের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। তিনি বলেন, তদারকির জন্য নিয়মিত টিমের পাশাপাশি আলাদা টিম বাজারে কাজ করবে। বাজারে কিছুটা দাম বাড়লেও কোনো পণ্যের সংকট নেই। পিয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করছে।
এদিকে বাজারে চড়া প্রায় প্রতিটি সবজির দাম। ৬০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না গ্রীষ্মকালীন কোনো সবজি। কচুরমুখি ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। করলা ১০০, ঢেঁড়স ৮০, বরবটি ১৪০, ধুন্দল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, ঝিঙ্গা ৮০, পটল ১১০, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এ ছাড়া ধনে পাতা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, পিয়াজকলি ৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি এবং গরুর মাংস।

https://mzamin.com/news.php?news=101194