৭ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:১৭

১১০০ রেস্টুরেন্টে অভিযান

৩ দিনে রাজধানীতে আটক ৮৮৭ : হয়রানির অভিযোগ

বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁয় ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে রাজউক, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ অভিযানে গত তিন দিনে ১১ শতাধিক হোটেল-রেস্টুরেন্টে অভিযানে মালিক-কর্মচারীসহ ৮৮৭ জনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। একই সাথে এসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০টি। এ দিকে এভাবে রেস্তোরাঁ রেস্তোরাঁয় অভিযান এবং কর্মীদের ধরে নেয়াকে হয়রানি হিসেবে দেখছেন রেস্তোরাঁর মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দ। ঢাকার হোটেল-রেস্তোরাঁ, গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ও কেমিক্যাল গোডাউনে এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে অনেক নামীদামি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০৭টি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান এবং আটটি রাসায়নিকের গুদামেও অভিযান চালানো হয়।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রেস্তোরাঁর ভবনগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা না থাকায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। গত ৩ মার্চ থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ডিএমপির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার হোটেল, রেস্তোরাঁ ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার দোকান ও কেমিক্যাল গোডাউনে এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার কেএন রায় নিয়তি জানান, ৩ মার্চ ২৭৫টি হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে ৩৪৭ জনকে। ওই দিন ২০৪টি প্রসিকিউশনে দায়ের করা হয়েছে ৫টি মামলা। জানা গেছে, অন্তত ৮০০ জনকে সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে গ্যাস সিলিন্ডার রাস্তায় রেখে জনসাধারণ-যানচলাচলে বাধা সৃষ্টি করা, চিৎকার-চেঁচামেচি-হুল্লোড় করে জনসাধারণের বিরক্তি সৃষ্টির চেষ্টাসহ ডিএমপি অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়। আদালতে জরিমানা দেয়ার পর প্রত্যেকে ছাড়া পেয়েছেন।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিএমপির রমনা, লালবাগ, ওয়ারী, মতিঝিল, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা বিভাগ মোট ৫৬২টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বা রেস্তোরাঁই ৪৫৫টি। এর বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রাখার দোকান ১০৪টি এবং তিনটি রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। এসব অভিযানের ঘটনায় মোট ৫টি নিয়মিত মামলা করেছে পুলিশ। আর ২২৯টি ঘটনায় ননএফআইআর প্রসিকিউশন করা হয়েছে।

এ দিকে পুলিশ এভাবে রেস্তোরাঁর কর্মীদের ধরে নেয়াকে হয়রানি হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বেইলি রোডের আগুনের পর বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁর কর্মীদের যেভাবে গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে, সেটি হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো: ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডারসহ দোকানের সরঞ্জাম রাখাসহ ডিএমপি অধ্যাদেশসহ আইনের পরিপন্থী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

এ দিকে গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে রাজউক, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ। এ সময় গুলশান, বনানী, খিলগাঁও এলাকায় কয়েকটি রেস্তোরাঁয় জরিমানা করা হয়েছে।

এর আগে ৫ মার্চ ৪০২টি হোটেল-রেস্তোরাঁ, ১০৩টি ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রাখার দোকান এবং ৫টি কেমিক্যাল গোডাউনে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ২২৮ জনকে। ওই দিন ১৯২টি প্রসিকিউশনে দায়ের করা হয়েছে ১০টি মামলা। সবমিলিয়ে ৩ দিনে অভিযান চালিয়ে মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ৮৭২ জনকে। একই সাথে ৮৮৭টি প্রসিকিউশনে ২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গুলশানের কাচ্চি ভাই ও ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁকে জরিমানা : অগ্নিনিরাপত্তাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম অনুমোদন নেই ঢাকার বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয়। গত কয়েক দিন যাবৎ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হলে এ সত্যটি বেরিয়ে আসছে। গতকাল বুধবারও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গুলশানের বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায়। প্রয়োজনীয় অনুমোদন না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট কিছু সময় দিয়ে জরিমানা করেছে কয়েকটি রেস্তোরাঁকে। এর মধ্যে কাচ্চি ভাই ও ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁ অন্যতম। এ দিকে বাথরুমে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করে, সিলিন্ডারে গ্যাস না থাকার কারণে সেটি বাথরুমে রেখে দেয়া হয়েছে।

ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত গুলশান-২ নম্বর মোড়ে দু’টি ভবনে অভিযান চালায় গতকাল বুধবার সকালে। অভিযানকালে রেস্তোরাঁর মালিকরা তাদের রেস্তোরাঁ পরিচালনার জন্য যেসব অনুমতির প্রয়োজন হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেসব দেখাতে পারেনি। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণেরও যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না এসব প্রতিষ্ঠানের। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র না থাকা ও নানা অনিয়মের কারণে গুলশানের কাচ্চি ভাই ও ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁকে জরিমানা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। গুলশান ও বনানী এলাকায় চালানো এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ন। তার সাথে ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা। ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ন বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকি পরিদর্শন করে অনিয়মে জড়িতদের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
অগ্নিনির্বাপণেরও যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না এসব প্রতিষ্ঠানের। জরুরি মুহূর্তে বের হওয়ার পথে নানা সামগ্রী রেখে বন্ধ করে রাখা ছিল চলাচলের পথ। গুলশান-২ গোলচত্বর সংলগ্ন ৪৬ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লটের পাঁচতলা ভবনের দোতলার একপাশে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট। অভিযানে নিরাপদ খাদ্য আইনে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়ন বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি কাচ্চি ভাই। তিনি বলেন, ‘রেস্তোরাঁটিকে অন্য সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নিতে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন না পেলে কোম্পানিটি সিলগালা করে দেয়া হবে।

এ ছাড়া ডিএনসিসির ম্যাজ্রিস্ট্রেট গুলশানের সেবা হাউজ নামে একটি ভবনের মালিককে ৫০ হাজার টাকা এবং ধানসিঁড়ি নামের একটি রেস্টুরেন্টকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই দুই রেস্তোরাঁ অগ্নিনিরাপত্তা ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলেও এখনো অনুমোদন পায়নি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/819472