৬ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৭:৫৪

খুচরায় অস্থিরতা

বাড়ছে চিনির দাম

কর্ণফুলী নদীর তীরে চিনি পরিশোধন কারখানার গুদামে ভয়াবহ আগুনে প্রায় ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছে ওই প্রতিষ্ঠান। রমজানের এক সপ্তাহ আগে এই চিনি ভষ্মীভূত হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। আগুনের কিছুটা প্রভাব দেখা গেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চিনির পাইকারি আড়তে। সেখানে চিনির মণপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। খুচরা বাজারেও চিনির দাম নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। শুধু রমজান মাসে চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে ৩ লাখ টনে দাঁড়ায়। সোমবার বিকালে কর্ণফুলী থানার ইছাপুর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের চারটি গুদামের মধ্যে একটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এতে প্রায় ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা। আগুনে পুড়তে থাকা চিনির গুদাম দেখতে এসে এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ জানান, আগুন নেভার পর দুইদিনের মধ্যে চিনি পরিশোধনে ফিরতে চান তারা।

তিনি বলেন, আমরা প্রোডাকশন চালু করবো। আমার বানানো মাল আছে। ওইটা দিয়ে এক সপ্তাহ মিনিমাম চলবে। প্রোডাকশনে যেতে লাগবে দুইদিন। বাজারে চিনির দামে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনারা জানেন কিছু ব্যবসায়ী আছে, দুয়েক দিনের জন্য করে এরা; এগুলো ঠিক হয়ে যাবে।

চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, গতকাল থেকে প্রতি মণ চিনিতে ৭০ থেকে ৮০ বেড়েছে। প্রতি মণ চিনির দাম ছিল ৪ হাজার ৯৭০ টাকা। এই দাম বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০ টাকায়। রমজানের আগে এমনিতেও চিনির চাহিদা বেশি থাকে।

রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় অবস্থিত তালতলা বাজার ও কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, পূর্বের দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। খুচরা বাজারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় প্যাকেটজাত চিনি বিক্রয় হচ্ছে। কাওরান বাজারে অবস্থিত সোনালী ট্রেডার্স, আমিন জেনারেল স্টোর, ইবরাহিম স্টোর, বেঙ্গল স্টোরের ব্যবসায়ীরা ৫০ কেজির চিনির বস্তা বিক্রয় করেন। তাদের প্রতিটি দোকানেই যথেষ্ট পরিমাণে চিনির মজুত রয়েছে। চিনির একটি গুদামে আগুন লাগায় ব্যবসায়ীরা চিনির দাম বৃদ্ধির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা মানবজমিনকে বলেন, যে কোনো সময়েই বাড়তে পারে চিনির দাম।

আমিন স্টোরের পরিচালক তানভীর হোসেন বলেন, ১৫ দিন ধরে এখনো দাম একই আছে। এখন বলতে পারছি না সামনে কি হবে। ইবরাহিম স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, চট্টগ্রামে আগুন লাগছে। ঢাকার কী হয়েছে? বাজারে ইন্ডিয়ার চিনি ভরপুর রয়েছে। সংকট পড়বে না। প্রতিনিয়ত চিনি আসছে। দাম বাড়ার কথা বলতে পারি না।

কাওরান বাজারে অবস্থিত জামাল ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফ্রেশ চিনির ডিসট্রিবিউটর রুবেল হোসেন বলেন, বাজারে চিনির চাহিদা আছে। সব কোম্পানির পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি রয়েছে। একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এজন্য বাজারে কী পরিমাণে প্রভাব পড়ে, এটি পরবর্তীতে বোঝা যাবে। এমন ক্রাইসিস মুহূর্তে চিনির দাম একটু বাড়ে। তবে এখন পর্যন্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তথ্য দেয়া হয়নি। আগের দামেই বিক্রি করছি। আমরা কোম্পানির পক্ষ থেকে পাইকারি বাজারে ১৪২ টাকা করে বিক্রি করছি। এর নিট মূল্য ১৪৬ টাকা।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীরা এখন বড় অজুহাত পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন এটাকে ইস্যু করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে। আরও তো রিফাইনারি কোম্পানি আছে। তাদের যথেষ্ট পরিমাণে পণ্য মজুত আছে। প্রতিটি রিফাইনারি গ্রুপেরই রমজানের চাহিদা মেটানোর জন্য ৩ লাখের বেশি চিনি মজুত আছে।

https://mzamin.com/news.php?news=100491