৫ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩:১৭

সিদ্দিকবাজার ট্র্যাজেডি

১ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি

২০২৩ সালের ৭ই মার্চ বিকালে রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেটের ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন বহু মানুষ। দু’দিন ধরে চলে উদ্ধার অভিযান। ভবনে গ্যাস জমে একপর্যায়ে তা বিস্ফোরিত হয় বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন। এতে ভবনের বেজমেন্ট ও প্রথমতলা ধসে পড়ে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, ভবন মালিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের গাফিলতিতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এদিকে তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে এবং নিজেদের বাঁচাতে তিতাস গ্যাসের তৎকালীন কর্মরতদের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সূত্র। এর আগে বিস্ফোরণের ঘটনায় লালবাগ থানায় একটি মামলা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার গুলিস্তান ট্র্যাজেডির এক বছর পূর্ণ হবে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।
এরইমধ্যে মামলা অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সিটিটিসির তদন্ত সূত্র জানায়, গুলিস্তানের কুইন স্যানিটারি মার্কেট ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাসের যে সকল কর্মকর্তাদের গাফিলতি পাওয়া গেছে তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে সিটিটিসি। ভবনটিতে দুই যুগের বেশি সময় আগে বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ ছিল। সামান্য কাঠের টুকরো দিয়ে সেটির লাইন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তখন ভবন থেকে পুরোপুরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। এতে পুরাতন গ্যাস লাইনে মরিচা ধরে ধীরে ধীরে গ্যাস লিকেজ হয়ে ভবনে গ্যাস জমতে থাকে। পরে তা বিস্ফোরিত হয়। তিতাস গ্যাসের সংশ্লিষ্টদের এই দায়িত্বে অবহেলায় তৎকালীন যারা কর্মরত ছিলেন তাদেরকে খুঁজে বের করার পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদ করতে কাজ করছে সিটিটিসি। সূত্র জানায়, সিটিটিসি’র তদন্ত দল একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সেখানে তারা তিতাসের পরিত্যক্ত গ্যাস সংযোগের ছিদ্রে কাঠের টুকরা ঢোকানো দেখতে পান। যেটি ভবনের বেজমেন্টে এবং পরিত্যক্ত বাণিজ্যিক সংযোগ লাইন। দুই যুগের বেশি সময় আগে বেজমেন্টে রান্নাঘর ছিল আর নিচতলায় ছিল রেস্তরাঁ। ২০০১ সালে গ্যাসের ওই লাইনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও লাইনটি অপসারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত সিটিটিসি’র (বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট) তদন্ত কর্মকর্তা এসি মাহমুদুজ্জমান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিতাসের তৎকালীন কর্মকর্তাসহ প্রায় ১০ জনেরও বেশি কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আরও অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। তিতাসের ফাইল গায়েব প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, তিতাসের ফাইল গায়েব হয়েছে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। বিষয়টি যেহেতু তদান্তাধীন তাই এর বেশি বলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কবে নাগাদ তদন্ত কার্যক্রম শেষ হবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। সম্প্রতি সময়ে একইভাবে রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ড এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এদিকে সিটিটিসি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার- এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, তদন্তে কার্যক্রম চলছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করা হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশে তিতাস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। এই সময়ে কারা কারা দায়িত্বে এবং জড়িত ছিলেন তাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। উল্লেখ্য, ঘটনার পর গত বছরের ৮ই মার্চ ভবনের দুই মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন- ভবন মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনে থাকা বাংলাদেশ স্যানিটারির মালিক আব্দুল মোতালেব মিন্টু। মিন্টু জামিন পেলেও ভবনের দুই মালিক এখনো কারাগারে রয়েছেন।

https://mzamin.com/news.php?news=100337