৫ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩:০৯

পদ্মা-যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট

ধারণক্ষমতার অর্ধেক পণ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়ছে বাঘাবাড়ী বন্দরে

পাবনার বেড়ায় পদ্মা ও যমুনা নদীতে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এরফলে রাসায়নিক সার, ক্লিংকার ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ ধারণক্ষমতার অর্ধেক পণ্য নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আসছে। ছেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জাহাজ মালিকরা এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে বন্দরে আগের মতো জাহাজ জট নেই। এ দিকে নাব্যতা সঙ্কট নিরসনে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং অব্যাহত রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রাসায়নিক সারের চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী নৌবন্দর থেকে জোগান দেয়া হয়। কিন্তু নাব্যতা সঙ্কটের কারণে রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী লাইটারেজ করে বাঘাবাড়ী বন্দরে নিয়ে আসা হচ্ছে। বোরো মওসুমে এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। এ কারণে নাব্যতা সঙ্কট দ্রুত নিরসন না হলে এ অঞ্চলে সার সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে কৃষি বিভাগ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর প্রবাহ একসাথে ধারণ করে যমুনা নদী বিশাল জলরাশি নিয়ে বিস্তীর্ণ জনপদের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান। কিন্তু ভারত সেচের জন্য তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এতে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় যমুনা নদীতে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ না বাড়লে যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাভাবিকভাবে রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য নদীতে ১০ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। বাঘাবাড়ী বন্দর নৌচ্যানেলের নাকালিয়া ও মোল্লারচরে নাব্যতা সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া মোহনগঞ্জ থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার নৌপথের মোহনগঞ্জ, চরশিবালয়, নাকালীসহ ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে ৭ থেকে ৮ ফুটে দাঁড়িয়েছে। সরু হয়ে গেছে নৌচ্যানেল। দেখা দিয়েছে নাব্যতা সঙ্কট। ফলে জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে তেলবাহী জাহাজ ১০ লাখ লিটারের স্থলে ৭ লাখ লিটার নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে আসছে। রাসায়নিক সার, ক্লিংকার, চাল, গমসহ অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ পাটুরিয়াতে কিছু মালামাল খালাস করে ছোট ছোট নৌকা ও লাইটারেজ জাহাজে করে বাঘাবাড়ী বন্দরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের জাহাজপ্রতি ৫৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

এমভি তূর্য কার্গোজাহাজের মাস্টার নাজিম উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের ৭টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ ফুট। চ্যানেলে জেগে উঠছে ডুবোচর। মোল্লারচর ও পেঁচাকোলা পয়েন্টে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই পয়েন্টে জেগে ওঠা চরের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন চ্যানেলটি আরো সরু হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাঝে মধ্যেই ডুবোচরে পণ্যবাহী জাহাজ আটকা পড়ছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিসের একটি সূত্র জানায়, প্রতি বছরের এ সময়ে দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। বর্তমানে এ রুটে ৮ থেকে ৯ ফুট আবার কোথাও কোথাও ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নৌচ্যানেল সচল রাখার জন্য নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং করা হবে। বাঘাবাড়ী বন্দর নৌরুটে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ফুট ড্রাফটের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কার্গোজাহাজগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে।

বিপিসির বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপোর একটি সূত্র জানায়, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ আছে। নাব্যতা সঙ্কটে জাহাজগুলো ধারণক্ষমতার কমলোড নিয়ে বাঘাবাড়ী ডিপোতে আসছে। তবে চলতি বোরো মওসুমে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল (ডিজেল) সঙ্কটের কোনো আশঙ্কা নেই বলে সূত্র জানিয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/818860