৪ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ৭:০৭

উজানে বহু বাধ নির্মাণ ॥ পাহাড়ি নদী ভোগাই এখন পানিশূন্য

নালিতাবাড়ি (শেরপুর) ভারত থেকে বয়ে আসা লক্ষ্মী ডুবা ভোগাই নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে
আল-হেলাল, নালিতাবাড়ি, শেরপুর : ভারতের নখরেক গ্রীশিকর থেকে নেমে আসা মেঘালয়ের রাজ্যের বুকচিরে দক্ষিণ দিকদিয়ে ১৮৪টি ঝর্ণার উৎস্যমুখ মিলিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আসা ভোগাই নদী কালের স্রোতেধীরে ধীরে ভরাট হয়ে বর্তমানে পানিশূণ্য হয়ে মরাগাঙ্গে পরিণত হয়েছে। এক সময় ভোগাই নদী দিয়ে অনেক বড় বড় পাল তোলা নৌকা চলতো বিভিন্ন মালামাল নিয়ে। মাঝি-মাল্লাদের ভাটিয়ালী গানের সুর শুনে পাড়া মহল্লার বৌ-ঝিরা থমকে দাঁড়াতো। এসবই এখন আদি কথা। দু’যুগ থেকেই নেই কোনো পণ্যবাহী মালামালের নৌকা, নেই মাঝি-মাল্লাদের সেই ভাটিয়ালী গান। আজ খরস্রোতা ভোগাই নদীর বুকে জেগে উঠেছে এখানে ওখানে চর। ভারতের উজানে পানির সাথে আসা পাহাড়ি পলি ও বালি মাটিতে দূরন্ত ভোগাই নদীর অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে। এ কারণে ভোগাই নদী নাব্যতার অভাবে মরা গাঙ্গে পরিণত হয়েছে। এক সময়ে আশীর্বাদ ছিলো ভোগাই নদী, আজ মানুষের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি শূণ্যতা আর বর্ষা এলেই প্লাবন-বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে ভোগাই নদী শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলাবাসীর জন্য দুঃখই ডেকে এনেছে। এ নদীর তীরে গড়ে উঠেছিলো বেশ কিছুবাজার ও খেয়াঘাট। নদীতে পাওয়া যেত অনেক বিভিন্ন জাতের মাছ। নিম্নবিত্তের মানুষ নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতো। খেয়ামাঝি খেয়া পার করে সংসারের অভাব মোচন করতো। নদী ভরাটের কারণে এদের দুর্ভোগ এখন চরমে। কোনো সময়েই এ নদীতে ড্রেজিং এর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে খরস্রোতা নদী ভোগাই আজ ধূ-ধূ চর ছাড়া কিছুই পরিলক্ষিত হয় না। বছরের পর বছর ধরে উজানের পাহাড় থেকে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ঢলের পানির সাথে নেমে আসছে পাহাড়ী মাটি আর নূরী পাথর, সেই পাহাড়ি মাটি ও পাথর ভরাট করে দিচ্ছে নদী। এতে নদীতে জেগে উঠছে ছোট-বড় বালির চর। স্থানে স্থানে চর জেগে ওঠায় নদী হয়ে পড়েছে পানিশূণ্য। ফলে নদীতে সেচ কার্যে ব্যবহৃত শতাধিক সেচ পাম্প পানির অভাবে সমস্যার সৃষ্টি আশংকা করা হচ্ছে। ভারত উজানে নদীর বিভিন্ন শাখায় বাঁধ নির্মাণ করে, অভিন্ন নদীতে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে চলতি বোরো আবাদ মারাত্মক ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। নদীতে যে পানি এখানে-সেখানে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে আছে তা দিয়ে সেচ দেয়া এ মৌসুমে আদৌ সম্ভব নয় বলে অনেকেই বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হবেন। নদী ড্রেজিং-এর জন্য বিভিন্ন সময়ে গণমানুষের দাবি উথিত হলেও কোনোসরকারই তাতে কর্নপাত না করার উপজেলাবাসীর ক্ষোভের শেষ নেই। দৈর্ঘে প্রায় ১৫কি. মি. নদীটি পূর্ণ খনন হলে বদলে যাবে নদী তীরের বসবাসকারী জনপদের অর্থনৈতিক অবস্থা।

https://www.dailysangram.info/post/550369