১৮ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ৩:২৬

কাগজ উৎপাদনে ঘাটতি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ বন্ধ

এখনো বই পায়নি অনেক স্কুল; খালি হাতেই ক্লাসে যাচ্ছে শিক্ষার্থী

গ্যাস সঙ্কটের কারণে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ সংস্থাকে নির্ধারিত সময়ে কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। ফলে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় বিনামূল্যের বইয়ের মুদ্রণ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়েও বই পাচ্ছে না অনেক স্কুল। আর স্কুল খোলা থাকায় খালি হাতেই স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানিয়েছে গ্যাসের সরবরাহ লাইনের সংস্কার ও মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। কাগজ উৎপাদন ও বইয়ের মুদ্রণ কাজও আবার শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সব বই ছাপা শেষ হবে। এনসিটিবি আশা প্রকাশ করছে চলতি মাসের মধ্যেই বই না পাওয়া বাকি জেলা উপজেলায় সব বই পৌঁছে যাবে। সব শিক্ষার্থীও হাতে হাতে নতুন বই পাবে।

যদিও প্রতি বছরের মতো এ বছরেও শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার টার্গেট নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু বেশ কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সাথে রিটেন্ডার করার কারণে বই ছাপার কাজ শুরু করতেই এক মাসের বেশি সময় অপচয় হয়েছে। এরপরেও মধ্য জানুয়ারির মধ্যে সব স্কুলে বই পৌঁছে দেয়ার টার্গেট নির্ধারণ করেছিল এনসিটিবি। কিন্তু জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে গ্যাস সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণে তা মেরামত করতে সময় লেগে যায়। ফলে কাগজ উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পুস্তক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে ঠিক সময়ে কাগজ সরবরাহ করতে পারেনি। এ কারণে পুরো এক সপ্তাহ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজ বন্ধ ছিল। ফলে বই ছাপতে ও স্কুলগুলোতে বই পৌঁছাতেও সময় লেগে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান নয়া দিগন্তকে জানান, শুধু গ্যাস সঙ্কট এবং কাগজ উৎপাদনের ঘাটতির কারণে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে বিলম্বিত হচ্ছে না। শেষ সময়ে এসে কিছু দুর্বল প্রতিষ্ঠানও বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে পিছিয়ে পড়েছে। যাদের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সক্ষমতা দুই লাখ কপি বই তাদেরকে দেয়া হয়েছে চার লাখ কপি বই ছাপার কাজ। ফলে বাধ্য হয়েই তারা পিছিয়ে পড়ছে। তিনি আরো জানান, আমাদের টার্গেট ছিল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপার কাজ শেষ করার। কিন্তু এখন এই সময়ের মধ্যেও এটা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে কবে নাগাদ বিনামূল্যের বই সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছবে এটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর মো: মশিউজ্জামান গতকাল সোমবার বিকেলে নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা দেশের সব জেলা-উপজেলায় বেশির ভাগ বই পৌঁছে দিয়েছি। কিছু বই এখনো যায়নি। এর কারণ হচ্ছে কিছু বইয়ের জন্য রিটেন্ডার করতে হয়েছে। সেখানেই বেশ কিছু সময় চলে গেছে। আর মধ্য জানুয়ারিতে শতভাগ বই পৌঁছে দেয়ার টার্গেট থাকলেও জানুয়ারির শুরুতে গ্যাস সঙ্কট ও লাইনের সমস্যার কারণে কাগজ উৎপাদনকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সময়মতো মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপার কাগজ সরবরাহ করতে পারেনি। ফলে বই ছাপার কাজও এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল। যদিও ইতোমধ্যে সঙ্কট কেটে গেছে। এখন বই উৎপাদন আবার শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই শতভাগ বই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীরাও হাতে হাতে নতুন বই পেয়ে যাবে।

অন্য দিকে ঢাকা ও আশপাশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলার স্কুলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব শ্রেণীর পুরো সেট বই কোনো স্কুলই এখনো পায়নি। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত কোনো শ্রেণীরই সব বই এখনো আসেনি। ফলে অনেক স্কুল পুরো সেট বই না আসায় সেট ভেঙে বই বিতরণ করছে না। যেমন অষ্টম শ্রেণীর মোট বই ১৪টি। এর মধ্যে বই পাওয়া গেছে ৮টি বা ১০টি। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই বই পাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা বই না পেলেও স্কুল খোলা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী খালি হাতেই শুধু খাতা নিয়েই ক্লাসে আসছে। শিক্ষকরাও ক্লাসে পড়া দিতে বা আদায় করতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুল খোলা থাকলেও আমাদের পড়ালেখা কিছুই হচ্ছে না। আমরা শুধু স্কুলে এসে হাজিরা দিচ্ছি মাত্র।

উল্লেখ্য সরকার এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৩৫ কোটি বই ছেপেছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৪টি, আর মাধ্যমিকে ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬টি বই আছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/637382