১৬ জানুয়ারি ২০২২, রবিবার, ৬:৫২

দুই ডোজ টিকাতেও কাজ হচ্ছে না তাহলে বুস্টার ডোজে হবে কি?

আসিফ আরসালান : কথায় বলে, আমি কমলিকে ছাড়তে চাইলে কি হবে, কমলি তো আমায় ছাড়ে না। করোনার ওপর আর লিখতে চাই না। কিন্তু চাইলে কি হবে, করোনা তো আমাদেরকে ছাড়েনা। যেটা দিয়ে করোনা শুরু হয়েছিল সেটিকে প্রথম বলা হয় উহান করোনা। তারপর এল কত ধরনের করোনা। আলফা, বিটা, গামা, ডেলটা আরো কত কি। এখন চলছে বিশ্বজুড়ে করোনার তৃতীয় ঢেউ। এই ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনের নাম ওমিক্রন। এসব ধরনের নাম করা হয়েছে ইংরেজি বর্ণমালার ক্রম অনুযায়ী। যেমন ইংরেজী বর্ণমালায় ১৫ নং বর্ণ বা অক্ষর হলো O. এই O দিয়ে হয়েছে ওমিক্রন।

অরিজিনাল করোনা ছিল উহানের করোনা। এটি ব্যাকটেরিয়া নয়, ভাইরাস। এই ভাইরাসটির মিউটেশন হয়। অর্থাৎ রূপ বদল হয়। মিউটেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। পরিবর্তিত রূপকে বলা হয় একেকটি ভ্যারিয়েন্ট বা স্ট্রেইন বা ধরন। এ পর্যন্ত যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ডেল্টা। যেমন ছিল বিধ্বংসী, তেমনি ছিল তার সংক্রমণ বা রোগ ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা।

মানুষের নাক বা গলা থেকে সোয়াব বা নমুনা নিয়ে সেখান থেকে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। অতঃপর ঐ ভাইরাসের জেনোম সিকুয়েন্সিং করে নির্ণয় করা হয় যে ভাইরাসটির ভ্যারিয়েন্ট বা স্ট্রেইন কি। বাংলাদেশে জেনোম সিকুয়েন্সিংয়ের ব্যবস্থা খুব অপ্রতুল। ইংরেজিতে বরং সঠিকভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে, Poor. গত বুধবারের একটি ইংরেজি পত্রিকায় দেখলাম (১২ জানুয়ারি) যে ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দুইটি ওমিক্রন কেস শনাক্ত হয়। তারপর থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত জেনোম সিকুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে ৩০ টি কেস শনাক্ত হয়েছে।

গত এক মাসে যাদের করোনা হয়েছে তাদের অধিকাংশেরই সিম্পটম বা আলামত ছিল মৃদু। কোনো রোগীর ক্ষেত্রেই বড় ধরনের কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। ঐ ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম পৃষ্ঠার রিপোর্ট মোতাবেক, কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে কোনো আলামতই দেখা যায়নি। কেউ কেউ শুধুমাত্র ঠান্ডা লাগার আলামত, যথা নাক দিয়ে পানি পড়া এবং গলা খুশ খুশের কথা বলেছেন। তবে চিকিৎসকরা যেসব কেসকে ওমিক্রন বলে কনফার্ম করেছেন তারা বলছেন যে ওমিক্রনে কাশি থাকবেই।

॥ দুই ॥
ডেল্টার মত ওমিক্রন কেসে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল, অর্থাৎ অক্সিজেন লেভেল নেমে যায় না। মুগদা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী পরিচালক নিয়াতুজ্জামান বলেন যে ওমিক্রন কেসে কারো ফুসফুসে ক্ষতি হয়েছে, এমন কেস পাওয়া যায়নি।

বিশিষ্ট অনুজীব বিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল বলেছেন যে ওমিক্রন সংক্রমণে জ¦র একটি অত্যাবশকীয় উপসর্গ নয়। তবে বিজন শীলের মতে বিদেশে ওমিক্রন রোগীদের মধ্যে হাঁচি, মাথা ব্যথা এবং নাক দিয়ে পানি পড়তে দেখা গেছে। আবার কোনো কোনো রোগী ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং মাংসপেশীতে ব্যথা অনুভব করেছেন। এসব উপসর্গ আক্রান্ত হওয়ার দুই দিনের মধ্যেই দেখা দিতে পারে। এত কিছুর পরেও মানুষের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো এই যে এবার রোগীর ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে না।

ওমিক্রন আক্রান্ত একাধিক রোগীর চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে টিকা দান এক্ষেত্রে কোনো বিবেচ্য বিষয় হযনি। এই কলাম লেখকের ৭ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বিগত ১৫ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, যারা অন্তত: তিন মাস আগে টিকার দুইটি ডোজই নিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন নিয়েছেন ফাইজারের দুইটি ডোজ। অপর তিনজন নিয়েছেন এ্যাস্ট্রাজেনেকার দুইটি ডোজ।

আসলে করোনা সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। যেমন, ৩/৪ মাস আগে বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা খুব জোরে শোরে বলা হচ্ছিল। এই দাবির মুখে বুস্টার ডোজ মার্কিন সরকার অনুমোদন করে। আমেরিকার দেখাদেখি ইউরোপীয়রাও বুস্টার অনুমোদন করে এবং আমেরিকা ও ইউরোপের স্বাস্থ্য কর্মী এবং ৬০ ও তদূর্ধ্ব ব্যক্তিরা বুস্টার দেয়া শুরু করে। বুস্টার দেয়ার সপক্ষে যুক্তি হলো এই যে টিকার দুই ডোজ দেয়ার ৬ মাস পর ঐ টিকার কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়। এখন প্রয়োজন হয় তৃতীয় ডোজের। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে যে বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ দেয়ার পরেও মানুষের করোনা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই কথা উঠছে, এরপর তাহলে কি হবে?

এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে ইসরাইল। তারা তাদের দেশে করোনার চতুর্থ ডোজ অনুমোদন দিয়েছে। বলা হয়েছে যে কম রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা ওমিক্রনে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। এই আশঙ্কার কারণে টিকার চতুর্থ ডোজের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

॥ তিন ॥
ব্যক্তিগতভাবে আমার বোধগম্য হচ্ছে না যে পৃথিবীব্যাপী এই যে টিকা দেয়া হচ্ছে তার নীট রেজাল্ট কি দাঁড়াচ্ছে? আমার পুত্র সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকে। সে ফাইজারের দুই ডোজই দিয়েছিল। সে সিডনিতে ফিরে গেছে। আজ খবর পেলাম, সেখানে তার টেস্টে পজিটিভ এসেছে। আমার পুত্রবধূ এই মুহূর্তে ঢাকায় আমার বাসায়। সে ঢাকায় পজিটিভ। আমার মেয়ে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় থাকে। ওরাও ঢাকায় এসেছিল। ওরা ক্যানবেরায় ফাইজারের ডবল ডোজ দিয়েছিল। আমার ছেলেও ফাইজারের ডবল ডোজ দিয়েছিল। আমার মেয়ে ঢাকায়। সে এবং তার ছেলে পজিটিভ। আমার ভাগ্নীর ছেলে এবং মেয়ে সপরিবারে সুইডেন এবং স্কটল্যান্ডের গ্ল্যাসগোতে থাকে। ওরাও ঢাকায় এসেছিল। ভাগ্নের ছেলে পজিটিভ। সে ঢাকায় আটকে গেছে। তার স্ত্রী নেগেটিভ। সে গ্ল্যাসগোতে চলে গেছে। আমার ছোট ভাই মান্নার মেয়ে নীলম কানাডার টরোন্টোতে থাকে। সেও ফাইজারের ডাবল ডোজ নেয়। তারপরেও ৩১ ডিসেম্বর তার পজিটিভ হয়। ৯ জানুয়ারি তার নেগেটিভ হয়।

আমার আরও আত্মীয় স্বজন বিদেশে আছে। তাদের কথা বলে আর তালিকা দীর্ঘ করলাম না। আমার প্রশ্ন হলো, আমরাসহ আমাদের আত্মীয় স্বজন হয় ফাইজার, না হয় মডার্না, না হয় এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছে। বিশ্ব বাজারে যতগুলো টিকা আছে তার মধ্যে এই তিনটিকেই সর্বোত্তম টিকা হিসাবে গণ্য করা হয়। শ্রেষ্ঠ টিকা নিয়েও যদি কোভিডে আক্রান্ত হতে হয় তাহলে সেই টিকা নেয়ার অর্থ কি?

করোনা নিয়ে যত কথা বিশ্লেষকরা বলছেন, সেসব শুনে মানুষ চরম বিভ্রান্ত হবেন। ভারতের ডিজিজ কন্ট্রোল এবং জাতীয় ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন জয় প্রকাশ মৌলি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের মত। কোভিড-১৯ আর ভয়ঙ্কর নাই। কারণ নতুন ধরনের সংক্রমণ অপেক্ষাকৃত মৃদু। তবে একই নিঃশ্বাসে একথাও তিনি বলেন যে প্রায় সবাই এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হতে পারেন। ওমিক্রন যত দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে সেটা বুস্টার ডোজ দিয়ে থামানো যাবে না।

তাহলে প্রশ্ন ঃ করোনা থেকে এখন বাঁচার বা রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?

Email: asifarsalan15@gmail.com

https://dailysangram.com/post/477661