২০ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ৬:০৮

করোনায় বাজেটে সুদ ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

বর্তমানে সুদ পরিশোধে খরচ হচ্ছে জিডিপির ২.৫%

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে আরো অধিক হারে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এই অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুরো অর্থবছরের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আট মাসে পূরণ হয়ে গেছে। আগামী এক মাসে বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারকে দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে আরো বেশি ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হবে। এতে করে সুদ পরিশোধের খরচও বাড়বে। বর্তমানে সুদ পরিশোধেই ব্যয় করতে হচ্ছে জিডিপির আড়াই শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা আরো খানিকটা বাড়বে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ছয় অর্থবছরের ব্যবধানে বাজেটে সরকারের সুদ ব্যয় আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অর্থ বিভাগের হিসাবে, সর্বশেষ গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছে ৫১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে ৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। বছর শেষে এই ব্যয় ৬২ থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে বলে প্রাথমিক প্রাক্কলনে মনে হচ্ছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের কারণে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশ কমে গেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়া মানে সরকারের সুদ ব্যয়ও বৃদ্ধি পাওয়া। এবার মনে করা হয়েছিল, যেহেতু সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে তাই সুদের ব্যয়ও কিছুটা কমবে। কিন্তু সুদ ব্যয় কমিয়ে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্যাকেজের কিছু অংশ (ভতুর্কিসহ আনুষঙ্গিক) ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। এই ব্যাংক ঋণের সুদ সরকারকেই বহন করতে হবে। শুধু তাই নয়, করোনা কারণে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হচ্ছে। এতে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এই অর্থের অনেকটা নেয়া হচ্ছে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। আর এই ঋণের সুদের কারণে বছর শেষে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে যাবে।

এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার শুধু ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেই ঋণ নিয়েছে ৫২ হাজার ১৩৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা।

সরকারের বাজেট ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি বছর সরকারের সুদ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৪১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যয় বেড়ে হয় ৫১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। সেই বছর বিগত ৫ বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সুদ ব্যয় বেড়েছিল। পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৈদেশিক ঋণের চেয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত ঋণের সুদের পরিমাণ অনেক বেশি। অন্য দিকে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। বাজেট ডকুমেন্ট তথ্য মতে, সুদ পরিশোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৬ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ২৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ২৮ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৩৩ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সরকার।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/496828