১৫ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১২:০৯

এক প্রকল্পেই ১৫ ধরনের অতিরিক্ত ব্যয় চিহ্নিত!

যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙন রক্ষা

প্রস্তাবিত এক প্রকল্পে বিভিন্ন অজুহাতে ১৫ ধরনের অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে বিপুল অংকের অর্থ অপচয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমন সব অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে যার অধিকাংশই বাদ দিতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি হচ্ছে, ৬৩৮ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে ‘যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার খুদবান্দি, সিংড়াবাড়ী ও শুভগাছা এলাকা সংরক্ষণ’ প্রকল্প। এ ছাড়া বেশকিছু ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের আওতায় অফিস ও আবাসিক ভবনে দুই কোটি টাকা, প্রিন্টিং ও পাবলিকেশনে সাড়ে ৬ লাখ টাকা, ব্যাংক লাইন ও সার্ভে খাতে ৩০ লাখ টাকা, চার সেট সার্ভে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩০ লাখ টাকা, অফিস ফার্নিচারে ১০ লাখ টাকা প্রস্তাব উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পে দুটি জিপ গাড়ির জন্য দেড় কোটি টাকা, দুটি মোটরসাইকেলের জন্য ৫ লাখ টাকার প্রস্তাবের মধ্যে একটি জিপ গাড়ি ক্রয়ে ৭৫ লাখ টাকা ও দুটি মোটরসাইকেলের জন্য তিন লাখ টাকা রেখে বাকি টাকা বাদ দেয়া এবং একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয়ে ৫০ লাখ ও একটি স্পিডবোর্ড ক্রয়ে ১০ লাখ টাকা বাদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটি পর্যালোচনা করে অতিরিক্ত এসব ব্যয় চিহ্নিত করে পরিকল্পনা কমিশন। গত সোমবার প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে অ্যাপ্রেইজাল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী যুগান্তরকে বলেন, এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ভালোভাবে দেখেছে বলেই বিষয়গুলে ধরা পড়েছে। তা না হলে ধরাই পড়ত না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রকল্প প্রস্তাব সিরিয়াসলি দেখে না। ফলে এ রকম ঘটনা ঘটছে। মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা সেলগুলোকে শক্তিশালী করা উচিত। না হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে এ রকম অপচয় হতেই থাকবে।
সার্বিকভাবে প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প প্রস্তাব আসলেই যে পাস করে দেয়া হয় তা নয়। পরিকল্পনা কমিশন ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করছে। যাচাই-বাছাই করে তারপরই সুপারিশ প্রতিপালনসাপেক্ষে একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আমি নিজেই প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে থাকি। আমরা চেষ্টা করছি ভালো করার। পরিকল্পনা কমিশন তার নিজের দায়িত্ব পালন করছে। সেখানে আমিও হস্তক্ষেপ করি না।’ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে- যমুনা নদীর ভাঙন থেকে ব্রহ্মপুত্র ডানতীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত কাজিপুর সদর উপজেলা কমপ্লেক্স, স্কুল, মসজিদ, বাজার, ইউনিয়ন কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ইত্যাদিসহ সরকরি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষা করা। এ ছাড়া টেকসই নদী ব্যবস্থাপনার জন্য গভীরতম টেকসই স্রোতধারায় নদীর বিন্যাস ও এলাইনমেন্ট বজায় রাখা। নদীর তীর রক্ষার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্যই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে মঙ্গলবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘অ্যাপ্রেইজাল সভা বিভাগ প্রধানের সভাপতিত্বে হয়ে থাকে। সুতরাং আমার কাছে এখনও আসেনি। এ বিষয়ে বলতে পরছি না। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় আমি সভাপতিত্ব করে থাকি।’
অন্যদিকে প্রকল্পের আওতায় চার কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ বাবদ ২৪১ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, গ্যাস ও ফুয়েল বাবদ ১৪ লাখ টাকা, পেট্রুল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ ১৬ লাখ টাকা, অফিস স্টেশনারি-সিল ও স্ট্যাম্প তৈরির জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা, প্রচার ও বিজ্ঞাপনে ৩ লাখ, বিদ্যমান যানবাহন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ২০ লাখ, দুই সেট কম্পিউটার ক্রয়ে পাঁচ লাখ, অফিস যন্ত্রপাতিতে চার লাখ এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে দুই লাখ টাকার প্রস্তাব যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে।


http://www.jugantor.com/last-page/2017/03/15/109107