১৫ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১০:৫৮

জাতীয় অর্থনীতিতে ছন্দপতন

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে দেশের বোঝা মনে করা হলেও কথাটা সর্বাংশে সঠিক বলে মনে করেন না বোদ্ধামহল। তারা মনে করেন, মানুষ শুধু ক্ষুধার্ত পেট নিয়েই জন্মায় না বরং তার সাথে থাকে বলিষ্ঠ দু’টো হাতও। তাই শুধু জঠরজ্বালা মেটানোই মানবজীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয় বরং তাদের অনেক কিছুই করারও থাকে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলো মানুষের হাত দু’টো হয়ে ওঠে কর্মের হাতিয়ার হিসাবে। তারা নিজের জন্য যেমন কিছু করতে পারে, ঠিক তেমনিভাবে দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতেও সক্ষম হয়। যদি তাদেরকে মানবসম্পদ হিসাবে গড়ে তোলা যায়।
মূলত বর্ধিত জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে পারলে তা মানবসম্পদে রূপ দান করা সম্ভব। কিন্তু আমরা সে কাজটা যথাযথভাবে করতে পেরেছি বা পারছি বলে মনে হয় না। দেশে পশুসম্পদ উন্নয়নে প্রকল্প থাকলে মানবসম্পদ উন্নয়তে তেমনটি আছে বলে মনে হয় না। আর যা আছে তা কিছুটা দায়সারা গোছের। একথা দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, দেশে পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় থাকলেও মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় তো চোখে পড়ে না। ফলে জনসংখ্যার চাপটা আমাদের জন্য ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে। তাই অধিক জনসংখ্যা আমাদের জন্য মানবসম্পদ না হয়ে জাতীয় বিপর্যয় সৃষ্টির ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বিষয়টি নিয়ে নির্লিপ্ত থাকার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
আসলে বর্ধিত জনসংখ্যাকে আমরা মানবসম্পদে পরিণত করতে পারিনি। ব্যর্থতা আমাদের সেখানেই। একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, এক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতাও কম নয়। কিন্তু আমাদের যতটুকু সামর্থ্য ও সম্ভাবনা রয়েছে তাও আমরা কাজে লাগাতে পারছি না পুরোপুরি। বিশেষ করে দেশে সুস্থধারার রাজনীতি চর্চার অভাবেই আমরা গঠনমূলক বা সৃজনশীল কিছুই করতে পারছি না। রাজনীতি গণমানুষের কল্যাণের জন্য হলেও আমাদের দেশের রাজনীতি এখনও কল্যাণমুখী হয়ে ওঠেনি বরং তা ক্ষমতায় গমনাগমনের প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। আর এই অশুভ প্রতিযোগিতা আমাদের দেশ ও জাতিসত্ত্বাকে ক্রমেই হীনবল করে দিচ্ছে। আর এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে তা আমাদেরকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলবে তা অন্তত দিব্যি দিয়ে বলা যায়।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ে আমাদের অপার সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগাতে পারছি না। তার পরেও তো এর একটা ইতিবাচক দিক আছে। তা হলো বিদেশে জনশক্তি রফতানি। আমাদের দেশে দক্ষ জনশক্তি অপ্রতুল হলেও আধাদক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তি রফতানি এবং এর মাধ্যমে আহরিত রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে এবং জাতীয় অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করছে। তাই জাতীয় অর্থনীতিকে সচল রাখতেই বৈদেশিক শ্রমবাজার অটুট রাখা ও নতুন করে বাজার অনুসন্ধান করা ছিল সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। ফলে একদিকে যেমন ক্রমবর্ধমান আধাদক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থানের সাথে সাথে জাতীয় অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তো। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি বরং বিগত বছরগুলো বৈদেশিক শ্রমবাজার তো সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়-ই নি বরং আশঙ্কাজনকভাবে শ্রমবাজার সংকোচিত হয়েছে। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে রেমিট্যান্স। যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেতই বলতে হবে।
দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটির টান পড়ার ক্ষেত্রে সরকার পক্ষ নানা বক্তব্য ও অজুহাত উপস্থাপন করলেও তা অনেকাংশেই সত্য নয়। বিগত বছরগুলোতে আমরা যে বৈদেশিক শ্রমবাজার হারিয়েছি একথা তারা স্বীকার করতে চান না বরং তারা এজন্য হুন্ডিসহ কিছু ছোটখাট অনুষঙ্গকে দায়ি করেই নিজেরা দায়মুক্ত থাকতে চান। মূলত সরকারের ভ্রান্তনীতি ও কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। শ্রমবাজার সম্প্রসারণ তো দূরের কথা আমরা আগের বাজারগুলোও অনেক ক্ষেত্রেই হারিয়েছি। আর এসব বাজার দখল করে নিচ্ছে আমাদের নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো। আর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতেও স্বাচ্ছন্দ্য বা নিরাপদবোধ করছেন না। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত বলা ছাড়া উপায় আছে বলে মনে হয় না।
বিগত বছরগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্দাভাব লক্ষ্য করা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই মাত্রাটা বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মূলত প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের পরিমাণ গত কয়েক মাস থেকেই আরও বেশী নিম্নমুখী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল এবং সে ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত আছে। ফলে এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমে আবার ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। এ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কম এসেছে ২০ কোটি ডলার, শতকরা হিসাবে ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
অন্যদিকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আট মাসের হিসাবে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৮১১ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৯৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এ মাসে কমেছে ১৬৬ কোটি ডলার বা ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নবেম্বর ও ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স ১০০ কোটি ডলারের নিচে নামলেও জানুয়ারিতে তা আবার ১০০ কোটি ডলারের ঘরে পৌঁছায়। এক মাস পরই ফেব্রুয়ারিতে তা আবারও হোঁচট খেয়ে ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমেছে। এর আগের তিন অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে কখনও রেমিট্যান্স ১ হাজার ১৫০ ডলারের নিচে নামেনি।
অবৈধ পথে রেমিট্যান্স দেশে আসা ও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন কারণে গত অর্থবছর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ওঠানামা করেছে বলে সরকারি তথ্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বৈদেশিক শ্রমবাজারে ধস ও প্রবাসীদের অস্থার অভাবের কথাটা ভুলেও স্বীকার করা হচ্ছে না। পরিসংখ্যান বলছে, বছর শেষে আড়াই শতাংশ কম রেমিট্যান্স এসেছে। আর চলতি অর্থবছরেও নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন। এরপর আগস্টে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১০৫ কোটি ৬৬ লাখ, অক্টোবরে ১০১ কোটি ডলার, নবেম্বরে ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ও জানুয়ারিতে ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে।
রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক এ নিম্নমুখী ধারায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি কয়েক দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে বলে এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজছেন নীতিনির্ধারকরা। এ ব্যাপারে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোরও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবুও রেমিট্যান্স বাড়ানো যাচ্ছে না। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার মূল কারণই সনাক্ত করা হচ্ছে না। ফলে সমস্যাটা যেখানে ছিল সেখানেই থেকে যাচ্ছে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের মতো বাংলাদেশের রফতানি আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ রফতানি আয় কম এসেছে। এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা এ জন্য ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে পোশাকের দাম কমায় রফতানিতে ধীরগতি চলছে। আশা করা হয়েছিল যে, গত অর্থবছরের মতো এবারও ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলেও গতবারের চেয়ে বেশ কম হবে।
গত ৮ মার্চ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো রফতানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৬২ লাখ (২২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ কম। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আট মাসে মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। এই খাতে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭২ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২৮৫ কোটি ৪২ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। এই ফেব্রুয়ারি মাসে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক খাত থেকে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি ৮৮ লাখ (১৮.৬৩ বিলিয়ন) ডলারের রফতানি আয় দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের এই আট মাসে পোশাক রফতানি থেকে ১ হাজার ৮১২ কোটি ডলার আয় হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ কমেছে। অন্যান্য খাতের আয় জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে ৮২ কোটি ৭৬ লাখ, পাট ও পাটজাত পণ্যে ৬৪ কোটি ৬৬ লাখ, কৃষিজাত পণ্যে ৩৫ কোটি ২৬ লাখ, হিমায়িত খাদ্যে ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ, প্রকৌশল পণ্যে ৩৩ কোটি প্লাস্টিক পণ্যে ৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পোশাকের দরপতন হয় ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। ওই বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশে গড়ে দরপতন হয় দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পোশাকের দরপতন হয় ১ দশমিক ১ শতাংশ। ইউরোপের বাজারে দর কমেছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি (৩৭ বিলিয়ন) ডলার। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি আয়ে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমছে ক্রমাগতভাবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে স্বর্ণের মজুদ সর্বনিন্ম পর্যায়ে। বর্তমানে সাড়ে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ রিজার্ভ হচ্ছে ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রায়। বাকি মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ রয়েছে স্বর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বর্ণের এ মজুদ হার সর্বনিম্ন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।
ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি; প্রায় ৭৪ শতাংশ। দেশটিতে সংরক্ষিত মোট স্বর্ণের পরিমাণ ৮ হাজার ১৩৩ টন। এছাড়া ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলোর মোট রিজার্ভের ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ হচ্ছে স্বর্ণ।
ওই সব দেশে সর্বমোট ১০ হাজার ৭৮৬ টন স্বর্ণ মজুদ রয়েছে। আর বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৮ টন, যা দেশের মোট রিজার্ভের ১ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশের মধ্যে রিজার্ভে স্বর্ণের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানের। দেশটি তার মোট রিজার্ভের ১২ দশমিক এক শতাংশ স্বর্ণ সংরক্ষণ করছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত মোট স্বর্ণ ৬৪ দশমিক ৫০ টন। ভারতের স্বর্ণ রিজার্ভের বিষয়ে একই ধারাবাহিকতা দেখা যায়। দেশটির ৩৫৭ দশমিক ৭ টন স্বর্ণ রিজার্ভ ছিল ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ওই বছর ২০০ টন স্বর্ণ যোগ করা হয় এর সঙ্গে। বর্তমানে দেশটির মোট স্বর্ণ প্রায় ৫৬০ টন, যা জাতীয় রিজার্ভের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
তবে নেপালে ৪ দশমিক ৯ টন স্বর্ণ মজুদ রয়েছে, যা দেশটির জাতীয় রিজার্ভের ২ দশমিক ৮ শতাংশ। আফগানিস্তানে ২০০৮ সালের আগের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য নেই। তবে ২০০৮ সালে প্রায় ২২ টন স্বর্ণ মজুদ করা হয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এটা দেশটির জাতীয় রিজার্ভে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার রিজার্ভের পরিমাণ অবশ্য ওঠা-নামা করেছে গত এক দশকে বেশ কয়েকবার।
২০১০ সালের দিকে দেশটি তার রিজার্ভের প্রায় অর্ধেক স্বর্ণ বিক্রি করে দেয়। তখন রিজার্ভের পরিমাণ ২১ টন থেকে ১০ দশমিক ৭ টনে নেমে আসে। পরে ২০১৩ সালে দেশটি আবারও স্বর্ণ কিনে রিজার্ভে যুক্ত করে। বর্তমানে রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ ২২ দশমিক ৩ টন, যা মোট রিজার্ভের ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এদিকে চীনের জাতীয় রিজার্ভের মধ্যে স্বর্ণের হার ভারতের কাছাকাছি।
দেশটির ব্যাংকে ১ হাজার ৮৩৮ টন স্বর্ণ মজুদ রয়েছে, যা দেশটির মোট রিজার্ভের ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ডব্লিউজিসির ২০১৪ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স্বর্ণ রিজার্ভে বিশ্বে প্রথম স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন দেশটির রিজার্ভে ৮ হাজার ১৩৩ টন স্বর্ণ ছিল, যা ওই দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৭৫ দশমিক ১ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জার্মানির রিজার্ভ ৩ হাজার ৩৯৫ দশমিক ৫ টন, যা দেশটির মোট রিজার্ভের ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ। ইতালির ২ হাজার ৪৫১ দশমিক ৮ টন, যা মোট রিজার্ভের ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ কম ছিল। সে সময় রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণও ছিল কম, সাড়ে তিন টন। ওই বছর একসঙ্গে কয়েক টন স্বর্ণ রিজার্ভে যোগ করা হয়।
দেশের ক্রমহ্রাসমান রেমিট্যান্স প্রবাহ, রফতানি আয়ে মন্দাভাব ও স্বর্ণ মজুদে নিম্নগামিতা দেশের অর্থনীতিকে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ফেলেছে। কিন্তু এ থেকে উত্তরণে শুধুই দেন-দরবার, বাগাড়ম্বর আর দায়চাপানো ছাড়া তেমন কোন উল্লেখযোগ্য তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বৈদেশিক শ্রমবাজারে ধ্বস নামলে তা মোকাবেলায় সরকার প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছে। তাই বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্প্রসারণের বিষয় আপাতত কল্পনা করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। দেশের রফতানী আয় বাড়ানো বা দেশীয় পণ্যের বহির্বিশ্বে বাজার সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রেও আমাদের তেমন কোন অগ্রগতি নেই। তাই শুধুমাত্র কথা মালার ফুলঝুড়ি দিয়ে রাষ্ট্রকে সফল ও সার্থক করা যাবে না।
হয়তো এভাবে বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠীর কিছু দিনের জন্য ক্ষমতা চর্চার সুযোগ থাকবে। কিন্তু দেশের অর্থনীতির চাকা যদি সচল রাখা না যায় বা রাষ্ট্রই যদি হীনবল হয়ে পড়ে তখন ক্ষমতা চর্চার সার্থকতাটাই বা কোথায় থাকবে? তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার জন্য সম্ভাব্য সব কিছুই করতে হবে। অন্যথায় আমাদেরকে এজন্য এক সময় প্রায়াশ্চিত্যই করতে হবে বৈকি!
smmjoy@gmail.com

 

http://www.dailysangram.com/post/275702