মৌচাক-রামপুরা সড়কটি প্রায় পরিত্যক্ত। যানবাহন যেমন চলে না, তেমনি মানুষের পক্ষেও এপার-ওপার হওয়া প্রায় অসম্ভব। গতকাল মৌচাক রেলগেট সংলগ্ন সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে থেকে তোলা ছবি। ছবি : শেখ হাসান
১৪ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:২৮

সীমাহীন দুর্ভোগ সীমানা ছাড়িয়ে

 

কোথাও পা ফেলার মতো মাটি নেই। রাস্তার পাথরকণা বহু আগেই মাটির নিচে ঢুকে গেছে। ওপরে বইছে জলের ধারা। পারাপারের জন্য সাজানো হয়েছে ইট। একটা ইটের ওপর ঠিকঠাক পা না পড়লেই বিপদ—পোশাক লেপ্টে যাবে কাদাপানিতে। গত ৯ মার্চ দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে এভাবে পথ চলতে গিয়ে ইকবাল হোসেনের শার্ট-প্যান্ট ভরে যায় কাদায়। কাদাপানি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এ কোন গ্রহে এলাম?’
কোথাও বড় বড় গর্ত, কোথাও লম্বা খাদ, কোথাও পথ বন্ধ। মাথার ওপর দিয়ে ওঠানো হচ্ছে ভারী গার্ডার। পানি জমে থাকে বলে যানবাহনের চালকরা আগে থেকে বুঝতেই পারেন না তাঁদের জন্য কী অপেক্ষা করছে সামনে। হঠাৎ করেই গর্তে বা খাদে আটকে পড়ে বাস, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা। পেছনে তৈরি হয় যানবাহনের দীর্ঘ জট। আর পথচারীদের পোশাক লেপ্টে যায় আবর্জনার পানিতে, পায়ের জুতা যায় ছিঁড়ে। বাসা থেকে বের হওয়া অনেকে গন্তব্যস্থলের জরুরি যাত্রাও বাতিল করে।
রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, মালিবাগ লেভেলক্রসিং, চৌধুরীপাড়া, মৌচাক থেকে শান্তিনগর, সেখান থেকে রাজারবাগ, শান্তিনগর থেকে কাকরাইলে আর মগবাজার ওয়্যারলেস থেকে মৌচাক এলাকায় নেমে এসেছে এ রকমের ‘নরক যন্ত্রণা’। এসব এলাকার বাসিন্দারাই শুধু নয়, এখান দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনের যাত্রী, আরোহী, পথচারী, এমনকি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জরুরি কাজে ঢাকায় আসা বা ঢাকা পাড়ি দিয়ে অন্যত্র যাওয়া লোকজনকেও ভোগ করতে হয় ওই যন্ত্রণা। আর এর জন্য দায়ী চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নির্মীয়মাণ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এ প্রকল্পের কারণে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে প্রকল্পটির আট কিলোমিটার অংশের আশপাশের এলাকাগুলো হয়ে উঠেছে ‘দুর্ভোগ-ফাঁদ’। এ ফ্লাইওভার ঘিরে সড়কগুলোর অর্ধেক দখল হয়েছে পিলার ওঠানোয়, পিলারের দুই পাশের সড়কের ওপর স্তূপ করে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। কোথাও দিনে ও রাতে ওঠানো হচ্ছে গার্ডারসহ নানা ভারী বস্তু। সড়কের অবশিষ্টের পাথর ক্ষয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের ভারী ট্রাকের চাকায়। অথচ উন্নয়ন প্রকল্প ছক-ডিপিপি অনুযায়ী নির্মাণকাজের সঙ্গে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার কথা ছিল। তবে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৫৮ শতাংশ প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়েছে; কিন্তু সড়ক সংস্কারের ১৮ কোটি আট লাখ ২০ হাজার টাকার বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। প্রকল্পের অন্য সব অংশের ব্যয় বাড়ানো হলেও পথচারী, যাত্রী ও যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক সচল রাখার এ বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে সংশোধিত ডিপিপি থেকে। আর এ ‘খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত’ই আজ লাখো মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অংশ ও শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুরে যাতায়াতে যানবাহনের সিংহভাগকেই এ প্রকল্প এলাকা দিয়ে যেতে হয়। কাকরাইল-শান্তিনগর-মালিবাগ ও রাজারবাগ-মালিবাগ হয়ে প্রগতি সরণি-কুড়িল দিয়ে গাজীপুর হয়ে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করে। প্রগতি সরণি-কুড়িল দিয়ে টঙ্গী-গাজীপুরসহ বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করে মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, রাজারবাগ হয়ে। মৌচাক-মগবাজার-সাতরাস্তা-মহাখালী হয়ে যেতে হয় মহাখালী বাস টার্মিনালে। এ টার্মিনাল থেকে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে দূরের যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে মালিবাগসহ প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রাজধানীতে জনমানুষকে চলাচল করতে হয়। রাস্তার দুরবস্থার জন্য মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, রাজারবাগ হয়ে রাজধানীতে ও রাজধানী থেকে কমপক্ষে ৯০টি রুটে গাড়ি চলাচল অর্ধেকে নেমেছে। এ কারণে বিকল্প পথে গাড়ি চালাতে হচ্ছে চালকদের। শান্তিনগর ও কাকরাইলে দুরবস্থার জন্য সুপ্রভাতসহ বিভিন্ন পরিবহনের বড় একটি অংশ সদরঘাট থেকে কাকরাইল হয়ে চলাচল না করে ঘুরে খিলগাঁও ফ্লাইওভার হয়ে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া দিয়ে চলাচল করছে। বিকল্প পথে চলাচলের ফলে রাজধানীর রমনা, মিন্টো রোড, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, খিলগাঁও, মালিবাগের বিভিন্ন অলিগলি, রামপুরাসহ বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট নিত্যদিনের দৃশ্য। রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের গাড়ির চাপ অন্যান্য অঞ্চলে পড়ে যানজটের তীব্রতা আরো বাড়ছে।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রাজু আহমেদ বলেন, গত বুধবার থেকে আজমেরী, প্রভাতীসহ বিভিন্ন বাস কাকরাইল-মালিবাগ অংশ ব্যবহার করছে না।
রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য শিল্পী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজারবাগ হয়ে খিলগাঁও ফ্লাইওভার দিয়ে মালিবাগের অলিগলি পার হয়ে আবুল হোটেল মোড়ে গিয়ে তারপর টিভি কেন্দ্রে যান। ভুক্তভোগী পলাশ চৌধুরী বলেন, ‘মাসখানেক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে এসে কমলাপুর রেলস্টেশনে নামি। সেখান থেকে রাজারবাগ হয়ে মৌচাক মোড় পর্যন্ত গিয়ে দেখি রাস্তা বন্ধ। বিটিভি ভবনে যেতে পরে রিকশা ছেড়ে অটোরিকশা নিয়ে রওনা করি। খিলগাঁও ফ্লাইওভার হয়ে অলিগলি দিয়ে আবুল হোটেলের পাশ দিয়ে সেখানে পৌঁছাই। দুই কিলোমিটার বেশি ঘুরে, এক ঘণ্টা যানজটে থেকে পরে গিয়ে দেখি, নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে পারিনি। অথচ ৫০ টাকার রিকশাভাড়ার পরিবর্তে অটোতে দিতে হয়েছে ৩০০ টাকা। ’
হোয়াইট হর্স নামের একটি ওষুধ কম্পানির কর্মকর্তা মাহফুজ আলম মগবাজার ওয়্যারলেস থেকে মানিকনগরে নিয়মিত চলাচল করেন মৌচাক হয়ে। মোটরসাইকেল নিয়ে চলতে চলতে মৌচাকে এর আগে কয়েকবার দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন। মৌচাক মার্কেটের সামনে থেকে মালিবাগ রেলগেটের অবস্থা বর্ণনা করে স্থানীয় ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে মৌচাকে রিকশায় আসা-যাওয়া করি। রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে মনে হয় কোমর ভেঙে যাচ্ছে। ’
মালিবাগ-মৌচাক সড়কের পাশে ফুটপাতে বেল্ট বিক্রি করেন শাহ আলম। তিনি বলেন, গত রমজানে রাস্তা একবার মেরামত করেছিল। তার কিছুদিন পর ভেঙে গেছে। পানি জমলে ব্যবসা গুটিয়ে বাসায় ফিরতে হয়।
নাগরিক কমিটি গঠনের সুপারিশ : ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে যাতায়াতে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের বেশি কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি পদপ্রার্থী সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাসা ইস্কাটনে। এখান থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসে বলেছি, রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী রাখা যাবে না। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। রাস্তা বন্ধ রাখতে চাইলে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। ইস্কাটন থেকে মগবাজার অংশে ভালোভাবে কাজ হলেও তার পর থেকে আর তা হচ্ছে না। এসব এলাকাবাসী নাগরিক কমিটি করতে পারেন। ’
তুরাগ পরিবহনের নিয়মিত যাত্রী যাত্রাবাড়ী থেকে গত রবিবার দুপুরে প্রগতি সরণিতে নেমে বলেন, যানজট ও খারাপ রাস্তা এড়াতে বিকল্প রাস্তা ধরেও লাভ হয় না। ঢাকার কোথাও যানজট হলে তা আশপাশের ব্যাপক এলাকায় তীব্র হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, মালিবাগ, মৌচাক এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দ্রুত জনভোগান্তি শেষ করতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া দরকার। সিটি সার্ভিসে যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে, গাড়িরও ক্ষতি হচ্ছে। বাধ্য হয়েই এসব ভাঙা রাস্তায় গাড়ি না চালিয়ে অনেকেই বিকল্প রাস্তায় চালাচ্ছেন।
গত ৯ মার্চ দুপুরে মৌচাক মোড়ে ট্র্যাফিক পুলিশের সার্জেন্ট অমলেশ পাইন পরিস্থিতি খুব খারাপ উল্লেখ করে বলেন, ‘মৌচাক থেকে মালিবাগে যাওয়ার পথ অনেকটাই বন্ধ। মালিবাগ লেভেলক্রসিংয়ে যাওয়ার আগেই গাড়িগুলোকে পাশের লেনে উল্টো পথে ঢুকতে হয় কাটা পথ দিয়ে। এক লেনে দুই লেন ও উল্টো পথের গাড়ির জট সৃষ্টি হয়। পাবলিক আমাদের ওপর চড়াও হয়। জট সরাতে সরাতে কয়েক ঘণ্টাও লেগে যায়। ’ মগবাজার ওয়্যারলেস থেকে মৌচাক মোড়ে আসার পথে বাঁ দিকে রাস্তায় পুরো অংশ খাদে রূপ নিয়েছে। একটি প্রাইভেট কার উল্টে গিয়ে গত ৮ মার্চ গাড়ি চলাচল এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল বলে তিনি জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মৌচাক মোড় থেকে মালিবাগ লেভেলক্রসিং পর্যন্ত বাম লেনে হেঁটে চলারও উপায় নেই। ৫০০ মিটারের বেশি এই অংশে আছে গর্ত ও খাদ। ৯ মার্চ দুপুরে প্রায় দেড় ঘণ্টায় দেখা গেল তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের একটি বাস (নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৩৫৬৩) এ পথ অতিক্রম করছে। যাত্রীদের অনেকে বাসের জানালা দিয়ে গলা বের করে সামনের গর্তগুলো দেখছে। গর্ত পার হতেই কেউ কেউ আর্তচিৎকার করছিল। কাত হতে হতে কোনো রকমে লেভেলক্রসিং পার হয়ে আবার থেমে থেমে চলছিল বাসটি। বিভিন্ন পরিবহন সমিতির নেতারা জানান, ফাল্গুন, লাব্বাইক, ছালছাবিল, তুরাগ, সুপ্রভাত, গ্রেট তুরাগ, ভিক্টরসহ বিভিন্ন পরিবহন কম্পানির অর্ধেক বাসই এ পথ দিয়ে চালানো হচ্ছে না। গুলিস্তান থেকে মালিবাগ হয়ে গুলশান রুটে মহেন্দ্র পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট যানবাহনের চলাচল এক সপ্তাহে অর্ধেকে নেমেছে।
সাতরাস্তা থেকে মগবাজার হয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের অংশ চালু করা হয় নির্মাণ শেষে গত ৩০ মার্চ। ইস্কাটন থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস অংশ চালু হয় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর। এসব অংশের নিচের রাস্তা এবড়োখেবড়ো।
ইস্কাটন থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস পর্যন্ত ওপর দিয়ে ও নিচ দিয়ে গাড়ি চলতে পারে। তবে রাশমনি হাসপাতালের সামনে থেকে মৌচাক মোড় পর্যন্ত যেতে বাঁ পাশে তৈরি হয় যানজট। বৃষ্টি না হলেও জমে থাকে পানি। স্থানীয়রা জানায়, দুই মাস আগে রাস্তার অংশ কেটে নেওয়া হলেও তা পুরো মেরামত করা হয়নি। গর্তে গাড়ি আটকে থাকে। চাংপাই চায়নিজ রেস্টুরেন্টের বিপরীতে এখানকার দুর্দশার প্রত্যক্ষদর্শী মিস্ত্রি আবদুল মান্নান বলেন, ‘মোটরসাইকেল থেকে পড়ে চালকরা হাত-পা ভেঙে ফেলেন। তাঁদের তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাই। এক সপ্তাহ ধরে অবস্থা খারাপ। ’
দেখা গেছে, এসব এলাকার পথচারীদের জন্য প্রকল্প এলাকায় কোনো ফুট ওভারব্রিজও নেই। নির্মাণকাজের জন্য সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার মৌচাক থেকে মগবাজার পর্যন্ত চলতে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর দিয়েই পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে। মৌচাকে ফুট ওভারব্রিজ নেই। ফলে মৌচাকে যান ও জনজট পাকিয়ে থাকে বেশির ভাগ সময়। মৌচাক থেকে মালিবাগ লেভেলক্রসিংয়ে যাওয়ার জন্য ফুটপাতের বেশির ভাগ ভেঙে গেছে, দখল হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, যাত্রীরা বাস থেকে নেমে ফুটপাত ধরে যে হেঁটে যাবে, তার ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। পথচারীরা প্রকল্প এলাকায় তাই প্রাণভয়ে থাকে।
সড়ক মেরামতে বরাদ্দ বাতিল, অন্যান্য বরাদ্দ বেড়েছে : প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ব্যস্ততম এলাকাগুলোয় উন্নয়নকাজের কারণে প্রকল্পের তিনটি অংশে সড়ক মেরামতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল প্রায় ১৯ কোটি টাকা। তবে ব্যয় করা হয়েছে ৮৮ লাখ টাকা। বাকি টাকার বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। জানা যায়, দুই অংশেরই মেরামতের বরাদ্দ পুরোটাই বাতিল করা হয়। সাতরাস্তা-হলি ফ্যামিলি সড়ক মেরামতে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ব্যয় করা হয় ৮৮ লাখ টাকা। শান্তিনগর থেকে মালিবাগ লেভেলক্রসিং অংশে মেরামতের জন্য বরাদ্দ ছিল পাঁচ কোটি ৪৯ লাখ টাকা—তা সংশোধিত এডিপিতে বাতিল করা হয়।
প্রাণখেকো, ধীর প্রকল্প : ঢাকা মহানগরীতে এ যাবৎ ছয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বেশি সময়ক্ষেপণে জনদুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে উঠেছে মগবাজার-মালিবাগ প্রকল্পটি। প্রকল্পের নির্মাণকাজে অসতর্কতায় প্রায় এক বছরের ব্যবধানে দুটো তাজা প্রাণ ঝরে যায়। গত রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় মালিবাগ লেভেলক্রসিংয়ের পাশে ক্রেন দিয়ে গার্ডার ওঠানোর সময় গার্ডার পড়ে স্বপন নামের এক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে। এরও আগে গত বছরের ১৬ মার্চ ইস্কাটনে রডে মাথা থেঁতলে ঘটনাস্থলে নিহত হন নির্মাণ শ্রমিক ইমন (২৮)।
এ ছাড়া গত পাঁচ মাসে দুটি দুর্ঘটনায় ২৬ জন আহত হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩ মার্চ ২৪ জন আসামিসহ একটি প্রিজন ভ্যান উল্টে যায় ফ্লাইওভারের সাতরাস্তায় নামার র্যাম্পে। গত ৯ অক্টোবর রমনা অংশে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। সেখানে একজন পথচারী ও একজন বাসযাত্রী গুরুতর আহত হন।
প্রকল্পে সময়ক্ষেপণও হচ্ছে বেশি। সাড়ে তিন বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ বাড়ানো মেয়াদ অনুসারে, আগামী জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে ২০ শতাংশ কাজ এখনো বাকি রয়ে গেছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জুনের মধ্যে কোনোভাবেই কাজ শেষ হবে না। মগবাজার-মৌচাক উড়াল সেতুর তিনটি অংশের মধ্যে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া থেকে রাজারবাগ এবং শান্তিনগর অংশের কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের অগ্রগতি এ যাবৎ ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের তিনটি অংশের মধ্যে সাতরাস্তা থেকে মগবাজার হয়ে রমনা পর্যন্ত ২ দশমিক ১ কিলোমিটার, ইস্কাটন থেকে মগবাজার হয়ে মৌচাক পর্যন্ত ২ দশমিক ২ কিলোমিটার।
এ ব্যাপারে জানতে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাজমুল আলমের মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জানা গেছে, মালিবাগে গার্ডার দুর্ঘটনার পর সাংবাদিকদের তিনি এড়িয়ে চলছেন। এর আগে অবশ্য প্রকল্প পরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানি ও পয়োনিষ্কাশন সংযোগ লাইন অপসারণ না করেই উড়াল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতে হয়েছে। ভিত্তি স্থাপনের পাঁচ মাস পর আমরা প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন কারণে কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। ’
একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, ওয়াসা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। এটা জোরদারে আন্ত মন্ত্রণালয় সভাও হয়েছে; কিন্তু ফল হয়নি।
http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/03/14/474177