১৩ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৯:৫৬

আগরতলায় মাছ রপ্তানি এক সপ্তাহ বন্ধ

বাজার ধ্বংসে ‘ফরমালিন’ ষড়যন্ত্র

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার বাজারগুলোয় সে দেশের অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আসা মাছ বিক্রি হয়। তবে সুস্বাদু হওয়ায় এসব মাছের তুলনায় বাংলাদেশি মাছের চাহিদা অনেক বেশি। ফলে আগরতলায় অন্ধ প্রদেশের মাছের বাজার ধরতেই এখন ‘ফরমালিন ষড়যন্ত্র’ শুরু হয়েছে বলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখান থেকে যে মাছ রপ্তানি হয় এর বেশির ভাগই স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত ও পরীক্ষা করে সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত। যে কারণে এসব মাছে ফরমালিন মেশানোর সুযোগ নেই। শুধু অন্ধ্র প্রদেশের মাছের বাজার ধরতে বাংলাদেশি মাছ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাঁরা বলেন, সেখানে যদি বাংলাদেশের বাজার নষ্ট করা যায় তাহলে অন্ধ্র প্রদেশের মাছের চাহিদা বেড়ে যাবে, সে কারণেই এ কৌশল নিয়েছে তারা।

এদিকে গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভায় মাছ রপ্তানি দ্রুত চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল রবিবার আগরতলায় যাওয়ার কথা ছিল। তারা সেখানকার ব্যবসায়ীসহ কাস্টম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবে।

অন্যদিকে আরেকটি সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ চাইছে, বাংলাদেশ থেকে আসা মাছ এখন থেকে তারা নিজেরা পরীক্ষা করবে। এ জন্য ফরমালিন শনাক্তকরণ যন্ত্র আনতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটি আলোচনা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগরতলার বাজার থেকে ৪০টি মাছ নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে ১১টিতে ফরমালিন পায় সে দেশের একটি সংস্থা। এ অবস্থায় গত ৬ মার্চ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ আমদানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় ভারতীয়রা। ফলে গতকাল রবিবারও এ বন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশের মাছ ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার বিভিন্ন বাজার থেকে সম্প্রতি বেশ কিছু মাছ সংগ্রহ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট একটি সংস্থা। পরে এসব মাছ পরীক্ষা করে বেশ কয়েকটিতে ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় বলে দাবি করা হয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে মাছ নিতে অনীহা প্রকাশ করে ভারতীয় কাস্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরে বাংলাদেশ থেকে মাছ নেওয়া হবে না বলে এ দেশের ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়। যদিও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মাছে ফরমালিন পাওয়া গেছে—এমন তথ্য এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভারতীয়রাও জোর দিয়ে এ কথা বলতে পারছে না।

স্থানীয় পর্যায় থেকে মাছ সরবরাহকারী মো. ইসমাইল বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব মাছ ভারতে যায় সেগুলোর বেশির ভাগই আখাউড়া ও এর আশপাশ থেকে সংগৃহীত। ভোর থেকে প্রক্রিয়াজাত করে এগুলো ভারতে পাঠানো হয়, যা কিছু সময়ের মধ্যেই সে দেশের বাজারে বিক্রি হয়ে যায়। যে কারণে এসব মাছে ফরমালিন দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এ বন্দর দিয়ে সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী থেকে আসা কিছু মাছও ভারতে যায়। কিন্তু এসব মাছও জিয়ল অবস্থায় আসে। যে কারণে এগুলোয় ফরমালিন মেশানোর সুযোগ নেই। কিন্তু ভারতীয়রা যদি এসব মাছ তাত্ক্ষণিক না বিক্রি করে ফরমালিন দিয়ে রেখে দেয় তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। তবে যত দূর জেনেছি, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মাছ নয়, সে দেশের অন্ধ্র প্রদেশের মাছে ফরমালিন মেশানো হয়। সেসব মাছেই ফরমালিনে অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আগরতলার ক্রেতারা এমনিতেই অন্ধ্র প্রদেশের মাছ কিনতে চায় না। আর এখন আমাদের দেশের মাছের ওপর দোষ চাপিয়ে তাদের দেশের মাছের চাহিদা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আগরতলায় বেশ কিছু পুকুরে মাছ চাষ শুরু হওয়াও এর অন্যতম কারণ। ’

মাছ রপ্তানির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টে কাজ করা মো. আব্বাস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘ফরমালিনের বিষয়টি একটি চক্রান্ত বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে। আমাদের মাছ তো পরীক্ষার পর ভারতে যায়। তাহলে এতে ফরমালিন থাকে কী করে? এখন শুনেছি, ভারতীয়রা ফরমালিনের মেশিন আনবে। ওই পর্যন্ত মনে হয় আমরা মাছ রপ্তানি করতে পারছি না। তবে বাংলাদেশে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় সেটি দেখিয়ে মাছ নেওয়া যায় কি না, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। ’

আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সভায় এ নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি দল আগরতলায় যাবে। সে দেশের ব্যবসায়ী ও কাস্টম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি ভালো সুরাহা পাওয়া যাবে বলে আশা করি। ’

আখাউড়া উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া মাছ পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এসব মাছে ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আর ফরমালিন পাওয়া গেলে তো সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কবে থেকে মাছ রপ্তানি শুরু হবে এ বিষয়টি নিশ্চিত নই। তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে প্রতিনিয়তই ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।

প্রসঙ্গত, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দিনকে দিন বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমে আসছে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় মাছ। এ অবস্থায় মাছ রপ্তানি একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ বন্দরটি ব্যবসায়িক দিক দিয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়বে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2017/03/13/473822