১৩ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৯:১৯

বহমান এই সময়ে

দালালনির্ভর জনশক্তি রফতানি আর কত দিন?

জি. মুনীর

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি। ২০১৭ সালের ১০ মার্চ যখন এই লেখা তৈরি করা হচ্ছে, জাতিসঙ্ঘের দেয়া তথ্য মতে, তখন বাংলাদেশের মোট লোকসংখ্যা ১৬ কোটি ৪২ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৭ জন। বিশ্বের ২ দশমিক ১৯ শতাংশ মানুষের বসবাস এই বাংলাদেশে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এখানে প্রতি বর্গমাইলে বাস করে তিন হাজার ২৭৯ জন, প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজার ২৬৬ জন। এর ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষের বসবাস শহর এলাকায়। এর জনসংখ্যার ঘনত্ব ভয়াবহ। একটি উদাহরণ কল্পনা করলে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্বের তীব্রতা বা ভয়াবহতা সহজেই অনুমান করা যাবে।

ধরা যাক, বিশ্বের প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক অবস্থাটা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেল, যার ফলে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের বাকি সব দেশ মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকল না। তখন বিশ্বের সব দেশের মানুষের যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বসবাস ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না। তাই, বিশ্বের সব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করল। ভাবুন তো, তখন যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার ঘনত্ব কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে। আসলে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব সে পর্যায়ের চেয়েও খারাপ অবস্থায় রয়েছে। অতএব বাংলাদেশকে বর্তমানে জনসংখ্যার ভয়াবহ এক চাপের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করতে গিয়ে আমরা নাস্তানাবুদ। ফলে এক ভয়াবহ বেকারত্বের চাপের মধ্যে আমাদের দেশ। এই বিপুল বেকার জনগোষ্ঠী আমাদের ঘাড়ের বোঝা। এই বোঝা কমাতে আমাদের দৃষ্টি এখন বিদেশে জনশক্তি রফতানির দিকে। আমরা যদি সুষ্ঠু নীতিমালা ও পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের কর্মসংস্থানের উদ্বৃত্ত জনগোষ্ঠীকে বিদেশে রফতানি করতে পারতাম, তবে এই জনগোষ্ঠী আমাদের জন্য বোঝা না হয়ে হয়ে উঠতে পারত মূল্যবান জনসম্পদ। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতিমালা ও পরিকল্পনা বলতে মূলত দু’টি কাজ নিশ্চিত করার তাগিদটুকুই দিতে চাচ্ছি। প্রথমটি, হচ্ছেÑ বিদেশে গিয়ে কাজ করতে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করেই শুধু বিদেশে পাঠাতে হবে। আর দ্বিতীয় কাজটি, জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে যাবতীয় দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে। এই দু’টি কাজের ক্ষেত্রেই আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা সীমাহীন। এই ব্যর্থতার কারণে আমরা যাদের বিদেশে কাজ করার জন্য পাঠাচ্ছি, তারা দু’ভাবে ঠকে চলেছেন। প্রথমত, এরা অশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত হওয়ায় নামমাত্র বেতনে তাদের শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অপর দিকে, অমর্যাদাকর পরিবেশে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন-নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সুষ্ঠু জনশক্তি রফতানি নীতি না থাকায় এরা বিদেশ যেতে দালালনির্ভর হয়ে পড়ছে। আর এসব দালাল তাদের সীমাহীন প্রতারণার ফাঁদে আটকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। সরকার আন্তরিক হলে, সুষ্ঠু নীতিমালা ও পরিকল্পনা নিয়ে এ দু’টি কাজ সম্পন্ন করে জনশক্তি রফতানিতে নামলে, যাবতীয় দুর্নীতির অবসান যেমন ঘটতে পারে, তেমনি বিদেশগামীরা রক্ষা পেতে পারেন দাললদের খপ্পর থেকে। একই সাথে বাড়িয়ে তুলতে পারে আমাদের জাতীয় প্রবাসী আয় বা প্রেষিতক।

কিন্তু উল্লিখিত দু’টি ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি রফতানির পুরো প্রক্রিয়াটিই যেন থেকে গেছে দালালনির্ভর। আর এই দালালদের দৌরাত্ম্য যে কতটা প্রবল তার একটি চিত্র পাওয়া যায় টিআইবির সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু তুলে ধরে সহযোগী প্রায় সব দৈনিক এ ব্যাপারে গত শুক্রবার যে খবর প্রকাশ করেছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক।

টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেÑ ভিসা কেনাবেচা আর ধাপে ধাপে দালালদের কারণে জনপ্রতি তিন লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে বিদেশগামীদের। এই বিষয়গুলো দেখভাল করার কথা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু উল্টো সেখানেও ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়েছেন টিআইবির গবেষকেরা। টিআইবি পরিচালিত গবেষণা মতে, বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে যাওয়া বিদেশগামীদের ৯০ শতাংশ পুরুষ কর্মীই দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। আর ভিসা বা চাহিদাপত্র কিনতে শুধু ২০১৬ সালেই পাচার হয়েছে পাঁচ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ‘শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন : সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ২০১৬ সালের মে থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার, শ্রম অভিবাসনসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনা, সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও দলিল পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

ধাপে ধাপে ভিসা কেনাবেচা সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়Ñ বিদেশে দীর্ঘ দিন ধরে আছে এমন একটি চক্র নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে ভিসা কিনে চড়া দামে বাংলাদেশে বিক্রি করে। এ অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কমপক্ষে সাতবার এই ভিসা কেনাবেচা হয়। এখানেই শেষ নয়। ভিসা কেনাবেচার পর দূতাবাসে সত্যায়ন, ছাড়পত্র, আঙুলের ছাপ দেয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশি যাচাইসহ পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। বিদেশগামী এসব কর্মীর ছাড়পত্র দেয় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। অভিযোগ আছে, বিএমইটি বহির্গমন শাখা থেকে ছাড়পত্র দিতে ঘুষ-বাণিজ্য চলে। মালয়েশিয়ায় পেশায় অদক্ষ কর্মী পাঠানোর নামে বিএমইটি কর্মকর্তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া গত বছর বিদেশে যাওয়া সাত লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জনকে বহির্গমন ছাড়পত্র দিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা ঘুষ-বাণিজ্য হয়েছে। থানা থেকে পুলিশি ছাড়পত্র নেয়ার সময় ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে বিদেশগামীদের।

সাধারণত বিভিন্ন কোম্পানিতে যারা দলীয় ভিসায় কাজ করতে যান, তাদের অনুমোদন দেয় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এখানে একটি চক্র ভিসাপ্রতি ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয় বলে অভিযোগ। টিআইবি বলছে, ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয় যে ৬১ হাজার ১২২ জন কর্মীর ভিসার অনুমোদন দিয়েছে, তাতে প্রতি ভিসায় ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ-বাণিজ্য চলেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ হলোÑ নারীদের বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যেতে কোনো টাকা না লাগলেও তাদের অনেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নেয়া হয়। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী হিসেবে চাকরি করতে গিয়ে অনেক নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

আমরা মাঝে মধ্যেই গণমাধ্যম সূত্রে সরকারি দলের নেতানেত্রীদের গদগদ ভাষায় গর্বের সাথে বলতে শুনিÑ আমরা এ বছর মধ্যপাচ্যে বিপুলসংখ্যক নারী গৃহকর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের দেশের এসব নারী এখন বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছেন। বলা হচ্ছে, সরকারের নারী-উন্নয়ন নীতিমালার ফলেই এমনটি সম্ভব হচ্ছে। আমাদের নারীরা এখন সব খাতে পুরুষের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে নানাবিধ কর্মে নিয়োজিত হচ্ছেন।

আসলে এই নারী গৃহকর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠানোর নামে আমরা কার্যত জেনেশুনে তাদের বিষপানের পথটাকেই উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। আমরা এদের সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছি কিংবা পাঠাতে উৎসাহিত করছি। আর এই কাজটিকে সরকারপক্ষ তাদের সাফল্যের এক উপাদান হিসেবে দেখছে। সুযোগ পেলেই বিষয়টিকে সাফল্যের হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরছে। কিন্তু আসলে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে কিংবা অধিকতর ভালো থাকার আশায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে। নানা ধরনের নির্যাতনসহ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশের এসব নারী গৃহশ্রমিক। এমন নির্যাতনের শিকার হয়ে শুধু ২০১৬ সালেই দেশে ফিরে এসেছেন ৫০০ নারী কর্মী। আরো অনেকে দিন কাটাচ্ছেন দূতাবাসের শেল্টার হোমে। গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যেই খবর আসে, এক শ্রেণীর দালাল নারী শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে বিশেষ তৎপর।

দালাল প্রথা ভাঙতে সরকার তথ্যভাণ্ডার থেকে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। সমস্যা সমাধানে টিআইবি আইনের সংস্কার, ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু, দালালদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা, দলীয় ভিসাপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ব্যবস্থা বাতিল করার সুপারিশ করেছে।

এ দিকে দীর্ঘ আট বছর পর নতুন প্রক্রিয়ায় আবারো মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু হয়েছে। নতুন ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে ৯৭ জন শ্রমিক গত শুক্রবার মালয়েশিয়া গেছে। তবে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন এরই মধ্যে অভিযোগ করেছেনÑ মালয়েশিয়ার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার কিভাবে বন্ধ করা যায়, সে ব্যাপারে এখনো সক্রিয় দুই দেশের সিন্ডিকেট। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নির্ধারিত খরচে যাতে শ্রমিকেরা এবার কাজ এবং বেতন-বোনাস নিশ্চিত করে মালিয়েশিয়া যেতে পারে, একই সাথে এই শ্রমবাজার যাতে দীর্ঘমেয়াদি হয় সে ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের নজরদারি বাড়াতে হবে।

জানা যায়, ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সোয়া আট লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক কলিং ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তাদের বেশির ভাগই যাওয়ার পর চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা, ব্রিজের নিচে খেয়ে না খেয়ে কিংবা শেল্টার হোমে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার মালয়েশিয়া সরকার বিনা নোটিশে ৫৫ হাজার শ্রমিকের ভিসা বাতিল করে। সেই সাথে মালয়েশিয়া থেকে আর শ্রমিক না নেয়ার ঘোষণা দেয়। এতে বিপাকে পড়ে দেশে আটকাপড়া হাজার হাজার শ্রমিক এবং তাদের রিক্রুটিং এজেন্সি। বলা হচ্ছে, এবার যাতে ওই পরিণতি কোনো শ্রমিকের ভাগ্যে না ঘটে, সে বিষয়টির ওপর নজর রাখছে বায়রা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, বিদেশগামী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধে সরকার ও বায়রার পক্ষ থেকে অতীতে অনেক কিছুই বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। বার বার বিদেশগামীদের দালাল বা সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়তেই হয়েছে। এই প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত। এরই মধ্যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, নতুন পদ্ধতিতে দুই দেশের সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় দু’টি সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা এই শ্রমবাজারটি বন্ধ করার জন্য এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে আমাদের এখন থেকেই সজাগ থাকতে হবে বৈকি। অভিযোগে প্রকাশ, সেই ২০১২ সালেও সে সময়ের বায়রার কিছু নেতাসহ একটি সিন্ডেকেট জিটুজি প্লাস পদ্ধতি বন্ধ করার জন্য এই দুই দেশে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নানা তৎপরতা চালিয়েছিল। আমরা ভালো করেই জানি, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার রয়েছে। কিন্তু নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলা সে বাজারে আমাদের শ্রমিক রফতানি বারবার বাধার মুখে পড়েছে। অথচ সুষ্ঠু নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে আমরা যদি জনশক্তি রফতানি করতে পারতাম তবে এই বিশাল শ্রমবাজারটি বলা যায়, আমরা স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে পারতাম।

বিদেশগামী শ্রমিকদের সাথে দালালচক্রের প্রতারণা-হয়রানি নতুন কোনো বিষয় নয়। এর বিরুদ্ধে আমরা এমন একটি নিশ্চিত কৌশল বের করতে পারলাম না, যার মাধ্যমে এই প্রতারণা আর হয়রানি থেকে ভুক্তভোগীদের বাঁচানো যায়, আমাদের জনশক্তি রফতানিকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায়। এক শ্রেণীর দালাল অবৈধভাবে বাংলাদেশের শ্রমিক পাঠিয়ে এক দিকে যেমন এসব শ্রমিকদের অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, অপর দিকে তেমনি আমাদের জাতীয় ভাবমর্যাদাও বিনষ্ট করছে। বিদেশীদের কাছে আমরা পরিচিত হচ্ছি দুর্নীতিবাজ একটি জাতি হিসেবে। অতএব দালালনির্ভর জনশক্তি রফতানির দুষ্টচক্র থেকে আমাদের বের হয়ে আসাটা জরুরি। সরকারপক্ষের মধ্যে সে উপলব্ধি আসুক, সে প্রত্যাশায়ই এ লেখা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/203120