১২ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১০:১৫

ফোন ট্র্যাকিং-এর আওতায় আসছেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা

ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মোবাইল ট্রাকিংয়ের আওতায় আসছেন সরকারি কলেজের প্রায় ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক। কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েও শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি বন্ধ ও শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে না পারায় এ উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এপ্রিল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের সব সরকারি কলেজের শিক্ষকের প্রতি নজরদারি কার্যক্রম শুরু করা হবে। পর্যায়েক্রমে সারা দেশের সব সরকারি কলেজকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাকিং আওতায় আনতে প্রথমে শিক্ষকদের একটি মোবাইল সিম দেবে সরকার। এই সিমে জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস (জিপিআরএস) পদ্ধতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) বসেই শিক্ষকদের অবস্থান নিশ্চিত করবেন মাউশির কর্মকর্তারা। সেখানে কারও বিরুদ্ধে ক্লাস ফাঁকি দেয়াসহ অন্যান্য অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষের মাধ্যমে তাকে সর্তক করা হবে। পরবর্তীকালে সংশোধিত নোটিশ দিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, এর মাধ্যমে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আসবে।

মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সরকারি কলেজগুলো সব পর্যায়ে শিক্ষার মান কমে যাওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী ক্ষুব্ধ। এর রহস্য উদ্‌্‌ঘাটন করতে গিয়ে বেশকিছু কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিত না থাকা। শিক্ষকদের ক্লাসে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই ডিজিটাল মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটক, বাংলালিংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষককে মোবাইল সিমকার্ড দেবো। জিপিআরএস পদ্ধতিতে মাউশিতে বসেই শিক্ষকদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারবো।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষরা প্রশাসনিক কাজে বেশির ভাগ সময়ে কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। এই সুযোগে শিক্ষকরা ক্লাস ফাঁকি দেন। এক্ষেত্রে তারা অন্যান্য শিক্ষকদের নানাভাবে ম্যানেজ করে থাকেন। অনেক শিক্ষক পছন্দের কলেজ, মাউশি, শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রকল্পে পদায়নের জন্য তদবির করতে ভিড় করেণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। বসতবাড়ি থেকে কর্মস্থল দূরে থাকায় অনেক শিক্ষক সপ্তাহে দুই তিনদিনের বেশি কলেজে যান না। কলেজে গেলেও ঠিকমতো পাঠদান করেন না। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ভিড় করায় শিক্ষামন্ত্রীও চরম ক্ষুব্ধ। কয়েক পৃষ্ঠা ২ কলাম ৬

দফা নির্দেশনা জারি করেও শিক্ষকদের তদবির ঠেকাতে পারেননি। সর্বশেষ মাউশি থেকে সব ধরনের বদলি বন্ধ করে রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি ও পাঠদানে অনিহার কারণে সরকারি কলেজ শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রতি বছরই পাবলিক পরীক্ষায় তুলনমূলক খারাপ ফল করছে। সর্বশেষ মাউশির এক জরিপে সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ফলাফল খারাপ হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে অধ্যক্ষদের উদ্দেশে বলেন, পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। যিনি যেখানে আছেন তাকে সেটার ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষকদের বলে দেবেন, কোনো রকমে ক্লাস নিয়ে চলে আসার মধ্যে সার্থকতা নেই। ব্যর্থতার জন্য প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন, আপনাদের কাজ কলেজে শিক্ষা দেয়া। কিন্তু অনেকেই আসেন অফিসার হতে। তা না পারলে ঢাকায় পোস্টিং চান। দৈনিক আমি একশতজনকে সাক্ষাৎ দিলে ৮০ জনই পাই এই তদবিরের। এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার বার্তা আপনারা শিক্ষকদের পৌঁছে দেবেন। ওই সম্মেলনে অধ্যক্ষদের বিভাগওয়ারি ভাগ করে গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার জন্য কয়েক দফা সুপারিশ তুলে আনা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিয়মিত হাজিরা নিশ্চিত, সময়মত শ্রেণিকক্ষে গমন, সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নেয়া, দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে পৃথকভাবে পরিচর্যা করা।

মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিত করতে গত জানুয়ারি থেকে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে সারা দেশের ৩২৯ কলেজের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষকের সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রবিশাল অঞ্চলের পরিচালক ও অধ্যক্ষদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় সভা করেন। সভায় ডিজিটাল হাজিরার বিষয়ে শিক্ষকদের অবগত ও তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। একই বিষয়ে আজ ঢাকা ও সিলেট অঞ্চলের অধ্যক্ষদের সঙ্গে মহাপরিচালকের সভা করার কথা রয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=57097