১১ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ৫:০৫

‘আবার তোরা মানুষ হ’

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

মানুষ শব্দটি এসেছে ‘মনুষ্য’ বা ‘মানব’ শব্দের অপভ্রংশ হিসেবে। ‘মুক্ত বিশ্বকোষে’ মানুষের সংজ্ঞা এমনÑ মানুষ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জীব। এরা দু’পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং দলবদ্ধভাবে সামাজিক জীবন যাপন করে। চিন্তার ক্ষমতা এবং জটিল ও বিশদ ভাষার ব্যবহার এদেরকে প্রাণিজগতের মধ্যে স্বকীয় করে তুলেছে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় প্রাইমেট গণভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘হোমোসেপিয়ান’। এ বর্ণনা দেখে ছোটবেলার গরুর রচনা লেখার কথা মনে পড়ল। এভাবে যদি মানুষের বর্ণনা দেয়া হয় তাহলেই কি ‘মানুষ’-এর সবটুকু বলা হলো? মানুষ তার আকৃতির জন্য নয়, বরং প্রকৃতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। সব ধর্মেই মানবজাতির মহত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামের পরিভাষায়, মানুষ হলো ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। নীতি-প্রবাদে বলা হয়েছে, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’ সৃষ্টির সেরা জীব এ কারণেই যে, মানুষকে ‘আকল’ দেয়া হয়েছে। আকলের ব্যাপক অর্থ জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেচনা। তাত্ত্বিকেরা একে বিবেক বলে থাকেন।

ছোটবেলায় বাবা-মা এবং স্বজনেরা বলতেন, ‘মানুষ হও।’ আরো ব্যাখ্যা করে বলতেন, ‘মানুষের মতো মানুষ হও।’ আমার শিক্ষক বাবা চার দিকের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অবশেষে বলতেন, ‘বাবা তুমি মানুষ হও, আদর্শ মানুষ হও।’ মুক্ত বিশ্বকোষ যেভাবে মানুষের বর্ণনা দিয়েছে, সে অনুযায়ী আমি মানুষ। আমার একটি মাথা, দু’টি পা, দু’টি হাত আছে ইত্যাদি। তাহলে আর কী বেশি দরকার, যে কারণে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন মানুষ হতে বলে। মানুষ হওয়ার অর্থ হচ্ছে মানবিক গুণাবলি অর্জন করা। সমাজ ও রাষ্ট্রে যেসব গুণকে মহৎ ও ইতিবাচক বলে বিবেচনা করা হয়, সেসব বিষয়ই হচ্ছে মানবিক গুণাবলি। এই গুণাবলির দুটো দিক। একটি স্বকীয় সত্তাকে প্রকাশ করে। যেমন ব্যক্তিগত সাহস, সততা, দয়া-মায়া,  স্নেহ বাৎসল্য ও ভালোবাসা।

দ্বিতীয়টি সমষ্টিকে লালন করে। যেমন- ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের প্রতিরোধ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, পরোপকারিতা ও সামাজিকতা। মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত গুণাবলির বিপরীতের মধ্যে রয়েছে অন্তর্নিহিত কিছু দোষ। ধর্ম ও দর্শন আমাদের এসব দোষকে চিহ্নিত করেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ অসংখ্যবার মানুষের জন্য আক্ষেপ, অনুশোচনা, অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতার কথা বলেছেন। সনাতন ধর্মে ‘কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য’ এই ষড়রিপুর কথা বলা হয়েছে। মনীষী হবস মানুষকে প্রকৃতিগতভাবে ‘ স্বার্থপর, হীন, সঙ্কীর্ণ, নিঃসঙ্গ, নৃশংস, নোংরা ও পাশবিক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘কেবল বহুসংখ্যক লোককে অক্ষরজ্ঞানবিশিষ্ট করলেই তাদের মানুষ করা হলো না। মানুষের মধ্যে পাশবিক স্বভাব আছে এবং ঐশ্বরিক গুণও আছে। পাশবিক স্বভাব দমন করে যদি তার ঐশ্বরিক গুণকে ফুটিয়ে তোলা যায়, তবেই তাকে প্রকৃত মানুষ করা হলো। শিক্ষকের কাজ এই লেজ-শিংবিহীন পশুকে মানুষ করা। ধর্ম ও নীতি এই কাজ সহজ করে দেয়।’ মানুষের সামাজিক দায়িত্ব হচ্ছে, এসব অন্তর্নিহিত দোষের পরিবর্তে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিককে এসব মানবিক গুণের অধিকারী করে গড়ে তোলা। শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে যেকোনো রাষ্ট্রে কাক্সিক্ষত নাগরিক গড়ার পদ্ধতি। জাতীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থাসহ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সৎ, সাহসী, নৈতিক ও কর্তব্যপরায়ণ, নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল যোগ্য নাগরিক তৈরি করা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কর্ণধার অভিভাবক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বিগত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রদত্ত বক্তৃতায় এরূপ বিষয়ের অবতারণা করেছেন।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সঙ্কট ও সম্ভাবনা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার স্বভাবসুলভ রসিকতার মধ্য দিয়ে অনেক অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ করেছেন। এগুলোকে জাতীয় নির্দেশনার ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যায়। রাষ্ট্রপতির এই নাতিদীর্ঘ বক্তব্য তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

ক. ব্যক্তিগত নির্দেশনা : শিক্ষার্থীদের প্রতি ব্যক্তিগত নির্দেশনা দিয়ে তিনি তাদের দেশের প্রতি দায়িত্ব সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তোমাদের আজকের এই অবস্থানে পৌঁছানোর পেছনে রয়েছে তোমাদের বাবা-মা শিক্ষকমণ্ডলীসহ সমাজ, দেশ ও জনগণের বিপুল অবদান। তোমরা তাদের কাছে ঋণী। সমাজ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তোমাদের মেধা প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে জাতির আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সব সময় নৈতিক মূল্যবোধ, বিবেক ও দেশপ্রেম জাগ্রত রাখবে। কখনো অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথা নত করবে না। রাষ্ট্রপতি বলেন, তরুণেরাই জাতির কর্ণধার। ভবিষ্যতে তারা এ দেশ পরিচালনা করবে। আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে অধিক যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবেলায় সব সময় সাহসী ও উদ্যোগী হতে হবে। তোমাদের সঠিক নেতৃত্বে দেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ। রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, জাতি তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে রাখতে হবে নিজের আত্মপরিচয়ের কথা। মাতৃতুল্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার কথা, আমাদের প্রিয় দেশটির কথা। ভুললে চলবে না তোমাদের সামান্যতম নেতিবাচক কর্মকাণ্ডও আমাদের বিশাল অর্জন ম্লান করে দিতে পারে। কর্ম উপলক্ষে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, এ দেশ ও জনগণের কথা ভুলবে না।

সমাবর্তন বক্তা কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওয়ের প্রেসিডেন্ট ও ভিসি অধ্যাপক অমিত চাকমা বলেন, জীবনে সফল হওয়ার জন্য তিনটি বৈশিষ্ট্য জরুরি। তা হলোÑ যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা ও চারিত্রিক গুণ। নিজের দক্ষতা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে এসব গুণ অর্জন করতে হবে। ভালো ও মন্দের বিচার করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। নীতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নীতিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সব গ্র্যাজুয়েট নেতৃত্ব দিলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও ব্যক্তিগণ পর্যায়ে গুণাবলি অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু সার্টিফিকেট অর্জন বা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে দেশে কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের ভালো মানুষ হতে হবে।’

খ. ছাত্ররাজনীতি-বিষয়ক সমালোচনা : বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট বর্তমান ছাত্ররাজনীতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতির বর্তমান হালচাল দেখে মনে হয়, এখানে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের প্রাধান্য বেশি। গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে হলে দেশের সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই। তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে অছাত্র এ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে ছাত্ররাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের এমনকি সাধারণ আস্থা, সমর্থন ও সম্মান ক্রমান্বয়ে কমছে। রাষ্ট্রপতি তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাত্রদের কাছে ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরও ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। কিন্তু সেই সময়ের রাজনীতি আর আজকের রাজনীতির মধ্যে তফাত অনেক। ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্ররাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলাম, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশ ও জাতির কল্যাণ। দেশের মানুষকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোনো স্থান ছিল না। সাধারণ মানুষ ছাত্রদের সম্মানের চোখে দেখত।’ নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা খোলামেলা আলোচনা করেন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই বিয়ে করে ফেলেছি। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রসংগঠনের সভাপতি-সেক্রেটারির বয়স ৪৫-৫০ বছর। আমি একটু আর্লি করেছি। তবে ২৫-২৬ যদি বিয়ের বয়স ধরা হয়, তবে তো তার ৫০ বছর বয়সে এক সন্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। বাপ-বেটা মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কথা। বাপ নেতা আর ছেলে ছাত্র। এটা হতে পারে না।’

গ. ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্পর্কে পরিকল্পনা : ছাত্ররাজনীতির প্রতি দেশের মানুষের অনাস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদÑ ডাকসুর নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতির সূতিকাগার উল্লেখ করে বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির সুফল বয়ে আনতে সত্যিকারে নিয়মিত ছাত্রদের হাতেই নিয়ন্ত্রণ দিতে হবে। আর তাই ডাকসু নির্বাচন অতি জরুরি। নির্বাচন না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে শূন্যতার সৃষ্টি হবে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ইজ অ্যা মাস্ট।’

সামগ্রিকভাবে মনুষ্যত্বহীনতা বা মানবিক বিপর্যয়ের যে কাহিনী আমরা নিত্যদিন দেখছি, শুনছি এবং অনুভব করছি তা রাষ্ট্রপতিকে বিচলিত না করে পারে না। আমরা সমাজের এক সর্বাত্মক ধ্বংসের চিত্র অবলোকন করছি। হত্যা, রাহাজানি, রক্তারক্তি সমাজের নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতার অবাধ প্রতিযোগিতা এবং অর্থের লোলুপতা আমাদেরকে অমানুষ বানিয়ে ফেলেছে। আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি? যেখানে মা তার সন্তানকে হত্যা করছে, পিতার হত্যাকারী হচ্ছে সন্তান। সম্পত্তির মোহ ভাইকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। নরপশুদের পৈশাচিকতা থেকে শিশুও রক্ষা পাচ্ছে না। প্রেমের নামে নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা পশুত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ক্যাম্পাসগুলোতে যারা হত্যা ও অর্থের রাজনীতি করে রক্ত ঝরাচ্ছে, তাদের কি আদৌ মানুষ ভাবা যায়? প্রেসিডেন্টের সমাবর্তন বক্তৃতায় এসব অমানবিক ও অস্বাভাবিক ঘটনার কষ্টবোধ রয়েছে।

এসব বক্তব্যের মাধ্যমে মূলত প্রেসিডেন্ট অতীত বিশ্লেষণ করে মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মানুষ হলে ব্যক্তিগত জীবন যেমন সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হবে, তার প্রতিফলন ঘটবে ছাত্রজীবনে। জাতীয় নেতৃত্বে প্রতিফলিত হবে ছাত্রজীবনে অনুসৃত নীতি, আদর্শ ও নিষ্ঠা। প্রেসিডেন্টের বক্তৃতায় যে সার্বিক হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে তা হতাশাব্যঞ্জক। আমরা এই হতাশার দায় ও উত্তরাধিকার এড়াতে পারি না। প্রেসিডেন্ট যেমন অতীতের একটি দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের দায়িত্বে ছিলেন, তেমনি অনেক রাষ্ট্রনায়ক তাদের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। আমাদের জাতিকে তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যদি রাষ্ট্রপতি নির্দেশিতভাবে- ব্যক্তিগতভাবে সৎ, সমষ্টিগতভাবে সাহসী ও সামগ্রিকভাবে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই তাহলে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। সে পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি নৈতিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে।

নৈতিক বিপ্লবের প্রধান প্রতিপাদ্য হবে- রাজনীতি থেকে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, শঠতা, কপটতা ও প্রতারণার বিদায় দেয়া। যদিও যথেষ্ট সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, তবুও আমাদের জাতির নৈতিক মানস পরিশুদ্ধ করার জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। গণমাধ্যমকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পরিবারকে জাতীয় আদর্শের সাথে সমন্বয় করে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিতে হবে। রেজিমেন্টেশন বা বিধিনিষেধের নাগপাশ কোনো জাতিকে সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়তা দেয় না। সুস্থ অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের জন্য আমাদের অবশ্যই একটি মুক্ত সমাজের অঙ্গীকার করতে হবে। গণতন্ত্র এই মুক্ত সমাজের অধিকার দেয়।

সুতরাং যত দ্রুত আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি ততই মঙ্গল। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে আমাদের যে প্রাথমিক অবক্ষয় গোটা জাতিকে অমানবিকতার দিকে ধাবিত করেছিল, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতা তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন- ‘আবার তোরা মানুষ হ’। আজকে অবক্ষয়ের দ্বিতীয় ধাপে আবার আমাদের আহ্বান নতুন প্রজন্মের প্রতিÑ ‘আবার তোরা মানুষ হ’।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/202537