১১ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ৫:০২

আত্মপক্ষ

বাংলাদেশের বাংলা ভাষা গড়ে তুলতে হবে

এবনে গোলাম সামাদ

ইংরেজি ডায়্যালেক্ট (Dialect) শব্দটার বাংলা সাধারণত করা হয় উপভাষা। ডায়্যালেক্ট শব্দটা বাংলা হিসেবে উপভাষা শব্দটি ভাষাতাত্ত্বিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯) তার বহুল পঠিত বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত গ্রন্থে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ভাষাতাত্ত্বিক শ্রী সুনীতিকুমার চট্টপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭) ডায়্যালেক্ট শব্দটির বাংলা করেছেন প্রাদেশিক ভাষা। তবে যেহেতু বাংলা ভাষায় প্রদেশ শব্দটি ইংরেজি প্রবিন্স (Province) শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, তাই মনে হয় ডায়্যালেক্ট শব্দটার বাংলা প্রাদেশিক ভাষা না করে উপভাষা করাই ভালো। কাকে বলবো ভাষা আর কাকে বলবো উপভাষা, তা নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিক মহলেই আছে যথেষ্ট বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আর কেবল ভাষাতত্ত্বের এলাকায় থাকে না, যেয়ে পৌঁছতে চায় রাজনীতির চত্বরে।

ইংরেজি ভাষার অনেকগুলো ডায়্যালেক্ট আছে। কিন্তু আদর্শ বা প্রমিত ইংরেজি ভাষা বলতে বোঝায় করহম’ং ঊহমষরংযকে। অর্থাৎ বিলাতের রাজা যে ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন, তাই হলো প্রমিত বা আদর্শ কথ্য ইংরেজি ভাষা। সব দেশেই রাজার ভাষাকে আদর্শ ধরা হয়েছে। ইংরেজি ভাষা এর ব্যতিক্রম নয়। এভাবেই রাষ্ট্রিক কর্তৃত্ব জড়িয়ে পড়েছে ভাষার ইতিহাসের সাথে। ভাষাকে রাজনীতির ইতিহাসের থেকে বিছিন্ন করে দেখা চলে না। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে আদর্শ বা প্রমিত বাংলা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতার কথিত বাংলা। এর মূলেও আছে রাজনৈতিক কারণ। কলকাতা কেবল ব্রিটিশ আমলের বাংলা প্রদেশের রাজধানী ছিল না, ১৯১২ সাল পর্যন্ত সেটা ছিল সারা ভারতের রাজধানী। লর্ড হেস্টিংস এবং লর্ড বেন্টিং কলকাতার বাংলায় খুব সুন্দর কথা বলতে পারতেন।

এ দিক থেকে কলকাতার বাংলা বাংলা হয়ে উঠতে চায় প্রমিত বাংলা। কিন্তু বর্তমানে কলকাতা আর বাংলাদেশের রাজধানী নয়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজধানী হলো ঢাকা। তাই প্রশ্ন উঠছে কলকাতার বাংলাকে প্রমিত বাংলা ধরে নেয়া কত দূর যুক্তিযুক্ত হবে। ঢাকার বাংলা প্রমিত বাংলা হয়ে উঠবে কি না? বাংলাভাষার ইতিহাসে আমরা দেখি পর্তুগিজ খ্রিষ্টান মিশনারিরা ধর্ম প্রচারে যে বাংলা ভাষায় বই লেখেন, তা ছিল সাধু বাংলা। এই বাংলা তারা শেখেন ঢাকার ভাওয়াল অঞ্চল থেকে। ঢাকার আঞ্চলিক বাংলা তা নয়। কিন্তু এই বাংলা গদ্য সে সময় প্রচলিত ছিল ঢাকা অঞ্চলে। কিন্তু আমরা এখন সাধু বাংলা গদ্য বাদ দিয়ে গ্রহণ করেছি কথিত বাংলাকে। সাধু বাংলা কোনো বিশেষ অঞ্চলের বাংলা ছিল না। সেটা ছিল সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের লিখিত বাংলা। কিন্তু প্রমিত বাংলা তা নয়। তাই প্রশ্ন উঠছে প্রমিত বাংলা বাংলাদেশের জন্য কতটা উপযোগী, সেটা নিয়ে।

ভাষাতাত্ত্বিক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পাকিস্তান আমলে সঙ্কলন করেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার, তথা ডায়্যালেক্টগুলোর অভিধান (১৯৬০)। মনে হয় এই ডায়্যালেক্ট অভিধান থেকে শব্দ চয়ন করে রচনা করা যেতে পারে বাংলাদেশের প্রমিত বাংলা। আর আমার মনে হয় এটা করা উচিত। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার লেখকরা তাদের এলাকা থেকে উপযুক্ত কথিত শব্দ বেছে নিয়ে লিখলেও গড়ে উঠবে বাংলাদেশের প্রমিত বাংলা। বাংলা ভাষায় কতগুলো উপভাষা আছে তা নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিকদের মধ্যে আছে যথেষ্ট বিতর্ক। তবে এ ক্ষেত্রে ড. সুকুমার সেনের (১৯০১-১৯৯২) বক্তব্যকেই এখন অধিকাংশ ভাষাতত্ত্ববিদ মনে করেন গ্রহণযোগ্য হিসেবে। তিনি বাংলা ভাষার উপভাষাগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। এরা হলো : ঝাড়খণ্ডী, রাঢ়ি, বরেন্দ্রী, বাঙ্গালী এবং কামরূপী।

তিনি ঝাড়খণ্ডী বলতে বুঝিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত ও বিহার (বর্তমান ঝাড়খণ্ড) প্রদেশের বাংলা ভাষাকে। রাঢ়ি বলতে বুঝিয়েছেন, মধ্য-পশ্চিমবঙ্গের ভাষাকে। বরেন্দ্রী বলতে বুঝিয়েছেন ব্রিটিশ শাসনামলের বাংলা প্রদেশের উত্তরাংশের ভাষাকে অর্থাৎ যমুনা নদীর পশ্চিমের এবং পদ্মা নদীর উত্তরভাগে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের ভাষাকে। বাঙ্গালী উপভাষা বলতে বুঝিয়েছেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গের ভাষাকে। আর কামরূপী বাংলাভাষা বলতে বুঝিয়েছে, বর্তমান রংপুর বিভাগ ও তার সংলগ্ন আসামের কিছু অঞ্চলের প্রচলিত বাংলা ভাষাকে। এখন যাকে প্রমিত বাংলা বলা হচ্ছে, তার উদ্ভব ঘটে ব্রিটিশ শাসনামলের কলকাতা শহরে, শিক্ষিত হিন্দু বাংলাভাষীদের মধ্যে।

কলকাতা শহর রাজধানী না হয়ে যদি অন্য কোনো শহর রাজধানী হতো, যেমন চট্টগ্রাম; তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কথিত বাংলা হতো প্রমিত বাংলা। আমরা চট্টগ্রামের কথা বলছি, কেননা ইংরেজরা চেয়েছিল পর্তুগিজদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম দখল করে নিয়ে সেখানে ঘাঁটি গাড়তে। কিন্তু সেটা না পেরে কলকাতায় ইস্ট-ইন্ডিয়া কো¤পানি ঘাঁটি গাড়েন জবচার্নক। ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে বাংলা ভাষার ইতিহাস জড়িত হয়ে পড়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন আর নেই। এখন বাংলাদেশ একটা পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র, যার ইতিহাস চলেছে রচিত হয়ে। কেবল অতীতের দিকে তাকিয়ে আমরা আমাদের জাতীয় নীতিনির্ধারণ করতে পারি না। আমাদের তাকাতে হবে ভবিষ্যতের দিকে। একটি জাতি গড়ে ওঠে ইতিহাসের ধারায়, নানা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে। আমরাও গড়ে উঠছি।

বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব পণ্ডিত প্রমিত বাংলা নিয়ে খুব হই চই শুরু করেছেন, তারা প্রায় সবাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত। মনে হচ্ছে এরা চাচ্ছেন এদের ছেড়ে আসা পশ্চিমবঙ্গের সাথে বর্তমান বাংলাদেশকে এক করতে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ একটা স্বাধীন রাষ্ট্র নয়। সেটা ভারতের একটা প্রদেশ মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশকে এক করতে চাওয়ার বাস্তব অর্থ দাঁড়াবে, বাংদেশকেও ভারতের একটি প্রদেশ করে তোলা। যে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হলো হিন্দি। কে না জানে, হিন্দি আর উর্দুতে ব্যাকরণগত কোনো পার্থক্য নেই। যে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে আমরা এত আন্দোলন করেছি, এর ফলে তা সম্পূর্ণটাই যাবে নিষ্ফল হয়ে। আমরা কি সেটাই চাচ্ছি? পত্রিকার খবর পড়ে দেখছি, ভারত বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই যৌথ প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে হবে কেন? ভারতের শত্র“ আর বাংলাদেশের শত্র“ সব ক্ষেত্রে একই হতে পারে না। আমরা ভারতের স্বার্থে অন্য দেশের সঙ্গে নিশ্চয় শত্র“তা করতে যেতে পারি না। আমাদের দেশের থাকতে হবে নিজস্ব পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি। এটা একটা স্বতন্ত্র আলোচনার বিষয়।

কিন্তু এ বিষয় আমরা এখানে উল্লেখ করছি, কেননা ভাষার মাস ফেব্র“য়ারি গত হলো। এখন শুরু হয়েছে যুদ্ধের মাস, মার্চ মাস। এখন পত্রিকার পাতা ভরে উঠতে চাইবে ১৯৭১-এর যুদ্ধের নানা কাহিনীতে। ১৯৭১-এর যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বদলে গিয়েছিল, যাকে বলে The Kissinger Tilt -এর কারণে (দ্রষ্টব্য : Time, 17 January 1972) । আমাদের অনেক পত্রিকায় লেখা হচ্ছে মার্কিন Naval Task Force 74 নাকি বঙ্গোপসাগরে আসেইনি। এটা ছিল একটা ধাপ্পা। কিন্তু ১৯৭১ সালে আমি ছিলাম কলকাতায়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকায় মার্কিন সপ্তম নৌবহরের আসার খবর প্রকাশ হয়েছিল। আমার মনে হয়, এটা টাস্কফোর্স আসার কারণেই যুদ্ধ অত দ্রুত শেষ হতে পেরেছিল। না হলে যুদ্ধ আরো প্রলম্বিত হতো। আমরা এখন ১৯৭১-এর পরিস্থিতিতে নেই। ১৯৭১-এ পাকিস্তান একটা পারমাণবিক অস্ত্রধর রাষ্ট্র ছিল না। কিন্তু এখন সে একটা পারমাণবিক অস্ত্রধর রাষ্ট্র। কেবল তাই নয়, সে এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রকর্ষ অর্জন করেছে। ভারত যা এখনও পারেনি। বিরাট সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়েছে। রাশিয়া এবং ভারতের স¤পর্ক আর আগের মতো নেই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঁচটি রিপাবলিক উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তান, তুর্কমিনিস্তান, তাজাকিস্তান ও কিরঘিজস্তান এখন সামরিক জোট বাঁধতে চাচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে। অন্য দিকে চীন পাকিস্তানে পাঠিয়েছে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য। যেটা সে ১৯৭১-এ পারছিল না। এসব কিছুকে মিলিয়ে ভাবতে হবে আমাদের। আমরা ভারতের স্বার্থে কোনো রকম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারি না। আমরা কেবল আমাদের জাতীয় স্বার্থেই যুদ্ধ করতে পারি।

আজ আমরা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি, গান গেয়ে আমাদের দেশের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারব না। কেননা, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছিল সাবেক পাকিস্তানের রাষ্ট্রিক কাঠামোর মধ্যে, যার অস্তিত্ব এখন আর নেই। আমরা এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে এসে পড়েছি। তাই এখন আমাদের ভাবা উচিত অনেক ভিন্নভাবেই; বর্তমান পাকিস্তান বনাম বর্তমান বাংলাদেশ হিসেবে নিশ্চয় আর নয়। কারণ, পাকিস্তান পর্ব আমাদের জন্য আর বিদ্যমান নয়। আমাদের নীতি হতে হবে বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতির উপযোগী।

দেখে বিস্মিত হচ্ছি আমাদের শিশুমনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিক্ষার নামে এমন অনেক ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, যেটা ইতিহাসসিদ্ধ নয়। যেমন একটি পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়েছে, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কথা। বলা হয়েছে তিনিই প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলেন ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে। তাকে ১৯৭১ সালে কুমিল্লার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে শত্র“সেনারা হত্যা করে। তাকে হত্যা করার কথা মিথ্যা নয়। কিন্তু ১৯৪৭ সালে গঠিত হয় তমদ্দুন মজলিস। আর এই তমদ্দুন মজলিসই প্রথম তুলেছিল বাংলাকে পকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি। যেটা এখন ভুলে যাওয়া হয়, তা হলো বাংলাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছিল না। পূর্ব বাংলার মানুষ চেয়েছিল বাংলাকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম দাফতরিক ভাষা করতে। তারা আওয়াজ তুলেছিল, উর্দু বাংলা ভাই ভাই, উর্দুর সাথে বাংলা চাই। বাংলা ভাষার দাবি উর্দুবিরোধী ছিল না। কিন্তু ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের দাবি ছিল উর্দুবিরোধী। তার লক্ষ্য ছিল উর্দু-বাংলা বিরোধ সৃষ্টি। যেটা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল না।

এরকম ইতিহাসের অনেক বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয় ( দ্রষ্টব্য : আমার বাংলা বই, পঞ্চম শ্রেণী। পৃষ্ঠা-৪৬। ২০১৭)। অনেক কিছুই বলা হচ্ছে, যা কতটা সত্য সেটা নিয়ে থাকছে যথেষ্ট সংশয়ের অবকাশ। যেমন বলা হচ্ছে ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের মুনীর চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগের রশিদুল হাসান, ইতিহাসের গিয়াস উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী মেডিক্যাল অফিসার ডা: মর্তুজাকে পাকিস্তান বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। কিন্তু মুনীর চৌধুরী, মেডিক্যাল অফিসার ডা: মর্তুজা এরা দু’জন ছিলেন পিকিংপন্থী কমিউনিস্ট। যারা ১৯৭১-এর লড়াইকে বলতে চাননি মুক্তিযুদ্ধ। তাই এদের দু’জনকে পাকবাহিনী কেন ধরে নিয়ে গিয়ে খুন করবে, তা বোঝা যায় না। এ ছাড়া পাকিস্তান আর্মি এ সময় আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাদের বা তাদের সমর্থকদের তখন এরকম কিছু করার সাহস না করারই কথা। জহির রায়হানকে কে বা কারা হত্যা করে সে কথা এখনো থেকে গিয়েছে অজ্ঞাত। যত দূর সম্ভব ইতিহাসকে ছাত্রপাঠ্য বইতে বস্তুনিষ্ঠভাবেই উত্থাপন করা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

লক্ষ করার বিষয়, জহির রায়হানও ছিলেন একজন পিকিংপন্থী কমিউনিস্ট। ইন্দিরা গান্ধী সবচেয়ে বেশি সন্দিহান ছিলেন পিকিংপন্থী কমিউনিস্টদের নিয়ে। তিনি ভাবতেন আওয়ামী লীগ একটি বিপ্লবী দল নয়। পিকিংপন্থী কমিউনিস্টরা বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারে। এখন যত সহজভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা হচ্ছে, সে দিনের বাস্তবতা তা ছিল না। ১৯৭১-এ কলকাতায় ছিলাম। ট্রামে বাসে মুহাম্মদ তোয়াহাকে নিয়ে যত আলোচনা শুনেছি, অন্য কোনো নেতাকে নিয়ে সে রকম আলোচনা হতে শুনিনি।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/202539