১০ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩৩

ফের মাঠে নামছেন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা

চরম বৈষম্যের শিকার সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা ফের আন্দোলনে নামছেন। ৫ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা শিক্ষকরা গতকাল সারা দেশের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা বাস্তবায়ন ও বেতন স্কেলের বৈষম্য দূর করে প্রবেশ পদে জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, সার্ভিস বেনিফিটসহ বেতন নির্ধারণ এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি চালু করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে এ আন্দোলন করে আসছে তারা। কর্মসূচির এক পর্যায়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে গত বছর শেষের দিকে কর্মসূচি স্থগিত করেন। প্রায় ৫ মাস পার হয়ে গেলেও এখনো সেই দাবির আশ্বাস মিলেনি। বাধ্য হয়ে আবার মাঠে নামার কথা বলছে শিক্ষক নেতারা।

তারা বলছেন, এরই অংশ হিসেবে গতকাল জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুর আড়াইটায় দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। এখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয় বলে জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি রিয়াজ পারভেজ। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পাঠানোর অনুরোধ জানান প্রধান শিক্ষকদের নেতারা। সমিতির সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও সমিতির মুখপাত্র এস এম ছায়েদ উল্লাহ বলেন, জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি ঢাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। অন্যদিকে ৩৪তম বিসিএসের নন ক্যাডার থেকে প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে ৮৯৮ জন নন ক্যাডাররা একই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ হয়। এরপর ২০১৩ সালে আরো ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ৯ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক যুগান্তকারী ঘোষণায় প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদায় উন্নীত করেন। তাছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’র আলোকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করায় এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮৯৮ জনকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষিত পরও পদমর্যাদা অনুযায়ী ১০ম গ্রেড গত তিন বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদেরকে জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে নাম উল্লেখ করে (ইু হধসব) গেজেট প্রকাশ না করায় পদমর্যাদা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। গত বছরের ১৪ই সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশ দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি মন্ত্রণালয়গুলো। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা প্রদানের ২০১৪ সালের ৯ মার্চের প্রজ্ঞাপনে ভুলবশত: ‘গেজেটেড’ শব্দটি না থাকায় ২০১৫ সালের ১৮ই মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান শিক্ষকদেরকে গেজেটেড পদমর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এমতাবস্থায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় প্রধান শিক্ষক পদের বেতন স্কেল জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডে পুনঃনির্ধারণ করে ২০১৪ সালের ৯ই মার্চ থেকে কার্যকর করাসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণে আপনার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। না হয় আবারো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=56824