১০ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩০

এজেন্সিগুলোর হজ প্রাক নিবন্ধন ফাঁদ

দেশের বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো হজের প্রাক নিবন্ধন ফাঁদ পেতে বসেছে। সিরিয়াল পেছনে পড়বে এমনটা জেনেও টাকা নিচ্ছে অনেক এজেন্সি। দালালরা তাদের আশ্বাস দিয়ে বলছে, নম্বর পেছনে থাকলেও হজে যেতে সমস্যা হবে না। সরকারি কোটা পূরণ হবে না। ওই কোটা থেকে আপনাকে নিয়ে যাবো। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হজে যেতে আগ্রহী অনেকেই হজের প্রাক নিবন্ধন ফি ৩০ হাজার ৭৫২ টাকার পাশাপাশি প্যাকেজের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করেছেন। নির্দিষ্ট কোটার বেশি প্রাক-নিবন্ধিত হওয়ায় এ বছর ৬৩ হাজার মানুষ হজে যেতে পারছেন না। অথচ এই ৬৩ হাজার মানুষের অধিকাংশের কাছ থেকে হজযাত্রা ব্যয়ের বেশির ভাগ টাকা নিয়েছে হজ এজেন্সি ও দালালরা। কিন্তু নিজের প্রাক-নিবন্ধন সিরিয়াল নাম্বার জানে না অনেকে। এ অবস্থায় গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন সংশ্লিষ্ট এজেন্সিতে ধরনা দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব-এর সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার মানবজমিনকে বলেন, নিবন্ধিত যেসব ব্যক্তি এবার হজে যেতে পারবেন শুধু তাদের কাছ থেকেই হজ এজেন্সিগুলো টাকা নিতে পারবে। আর যারা নিবন্ধন করেও হজে যেতে পারছেন না তাদের কাছে থেকে নিবন্ধন ফি’র বাইরে কোনো টাকা নেয়া যাবে না। তবে এ বছর কত জন হজে যেতে পারবেন ওই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাই ভুল বুঝিয়ে টাকা পয়সা নেয়া হাব এটা কোনোভাবে সমর্থন করে না এবং এটা কাম্য নয়। প্রতারণাকারী এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাইনি।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর হজে যাওয়ার জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৫৫ জন প্রাক নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে এক লাখ দুই হাজার ৫০০ জন লোক সৌদি আরবে যায় ও হজ করে। তাই গেল বছর কোটা জটিলতার কারণে ৩৭ হাজার ৪৮৪ জন হজ করতে পারেনি। এ বছর সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার এবং বাকিরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। গতকাল পর্যন্ত বেসরকারিভাবে হজে যেতে ১ লাখ ৮২ হাজার জন নিবন্ধন করেছেন। তার মধ্যে ৩৭ হাজার ৪৮৪ জন গত বছরের নিবন্ধন করা। এ কারণে নিবন্ধিত ৬৩ হাজার মানুষের ইচ্ছা থাকলেও এবার হজে যেতে পারবেন না। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরিয়ালের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের যে কোনো উপায়ে হজে নিয়ে যেতে চায় কয়েকটি এজেন্সি।

এজন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা তদবির করছেন তারা। অনেকে ধর্ম মন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে চেষ্টা তদবির করছেন। হজ শাখা সূত্রে জানা গেছে, এবার হজে যাওয়ার সর্বশেষ নিবন্ধন নম্বর ২২১০০০-এর কম বা বেশি হতে পারে। নিবন্ধন নম্বর ২২২০০০-এর পর কারও হজে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সরকারি কোটার এখনও ৭ হাজার খালি আছে। আরো দুই মাস সরকারি ব্যবস্থাপনার নিবন্ধন চালু থাকবে। তারপরও সরকারি কোটা পূরণ না হলে তা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া হবে। ওই আশায় পথ চেয়ে আছে কয়েকটি এজেন্সি।

এদিকে চলতি বছর হজের প্রাক নিবন্ধনে অনিয়ম হয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। এজন্য আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুইটি কমিটি করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অন্যটি ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক- নিবন্ধনে অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কমিটিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ ভুঁইয়াকে প্রধান করা হয়েছে। এ কমিটি আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশনের বিরুদ্ধে হাবের অভিযোগ তদন্ত করে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।

এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) হাফিজুর রহমানকে প্রধান করে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি বিজনেস অটোমেশনের আইটি সার্ভার ক্রাশ করার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজ নিজ আইডি ব্যবহারের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। এ ছাড়া নামে-বেনামে এজেন্সি খুলে ভাড়া দেয়ার বিষয়টি জানাবে একই কমিটি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, এসব তদন্ত কমিটির কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি প্রাক-নিবন্ধনের অনিয়ম খুঁজে বের করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুনকে আহ্বায়ক ও ধর্ম সচিব আবদুল জলিলকে সদস্য সচিব করে একটি ‘পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠন করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিষয়টি তদন্ত করে সংসদীয় কমিটির আগামী বৈঠকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=56834