১০ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১০:১৪

পল্লী বিদ্যুতের ৭৯টি সমিতির মধ্যে ৫৯টিতেই সিস্টেম লস বেড়েছে

দেশের ৭৯টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৫৯টিতেই সিস্টেম লস বেড়েছে। এর পেছনে আন্ডার বিলিং ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকে দায়ী করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যেখানে পল্লী বিদ্যুতের দিনের পর দিন উন্নতি হওয়ার কথা সেখানে লোকসান বাড়ছে আশংকাজনক হারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ বছরে পল্লী বিদ্যুতের ৭৯টি সমিতি শুধুমাত্র সিস্টেম লসের নামে লোকসান হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫২ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর পল্লী বিদ্যুতে সিস্টেম লস হচ্ছে ১০ শতাংশের বেশি। আর্থিক ক্ষতি অনুযায়ী সিস্টেম লসে অতিরিক্ত লোকসান হচ্ছে বছরে ৮৪২ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে ৭৯টি সমিতির মাধ্যমে তা গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ( আরইবি)। বর্তমানে এ বিতরণ সংস্থার আওতায় গ্রাহক রয়েছেন ১ কোটি ৭৮ লাখ। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ১ কোটি ৫৯ লাখ। বাকি ১৯ লাখ ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প, বাণিজ্যিক, দাতব্য ও সেচ গ্রাহক।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত কিছু বিদ্যুতের অপচয় হয়, যা সিস্টেম লস নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য মাত্রা অনুযায়ী সিস্টেম লসের সর্বোচ্চ হার ৫ শতাংশ। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ক্ষেত্রে এ হার দ্বিগুণেরও বেশি। আর আন্তর্জাতিক মানদন্ডের চেয়ে বেশি সিস্টেম লসের কারণে আরইবির অতিরিক্ত ক্ষতি হচ্ছে বছরে ৮৪২ কোটি টাকা।

তবে পল্লী বিদ্যুতে সিস্টেম লস কমিয়ে আনার কাজ চলছে দাবি করে আরইবির পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ হোসাইন সম্প্রতি বলেছেন, সিস্টেম লস যত কমিয়ে আনা যায়, বিতরণ কোম্পানি তত বেশি লাভবান হয়। গত আট বছরে আমরা সিস্টেম লস অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ধীরে ধীরে এটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি।

সূত্র জানায়, বিতরণ লাইনের মাধ্যমে তড়িৎশক্তি প্রবাহকালে কিছু অংশ তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বিদ্যুতের সিস্টেম লসের এটি অন্যতম কারণ। পাশাপাশি সাব স্টেশন থেকে বিতরণ লাইন অনেক দূরে হলেও সিস্টেম লসের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া পুরনো বিতরণ লাইন, অবৈধ সংযোগ ও মিটার রিডিং কম দেখানোর কারণেও সিস্টেম লস হয়ে থাকে।

আরইবির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পিডিবির কাছ থেকে কেনা বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত বিতরণ ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে সিস্টেম লস হচ্ছে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ অতিরিক্ত সিস্টেম লসের পরিমাণ ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর ১ শতাংশ সিস্টেম লসের বিপরীতে সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় মাসে ১২ কোটি টাকা। এ হিসেবে অতিরিক্ত ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ সিস্টেম লসের কারণে আরইবির বাড়তি লোকসান হচ্ছে মাসে ৭০ কোটি টাকার বেশি। বছর হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪২ কোটি টাকা।

আরইবির গড় সিস্টেম লস ১০ দশমিক ৮৫ হলেও কোনো কোনো সমিতির চিত্র আরো ভয়াবহ। বিতরণ সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, আরইবির ৭৯টি সমিতির মধ্যে ৫৯ টির সিস্টেম লসই ১০ শতাংশের উপরে। এর মধ্যে ৩০টি সমিতি রয়েছে, যেগুলোর সিস্টেম লস ১০-১২ শতাংশ। এছাড়া ১২-১৫ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে ২০টি সমিতির। আর ১৫ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস নিয়ে চলছে আরইবির নয়টি সমিতি।

আরইবির বিতরণ লাইনগুলো দুর্গম এলাকায় হওয়ায় অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির চেয়ে তাদের সিস্টেম লস বেশি বলে দাবি সংস্থাটির। আরইবি কর্মকর্তারা বলছেন, গাছপালা ভেঙে ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় বিতরণ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সিস্টেম লস দেখা দেয়। এছাড়া উপকেন্দ্র থেকে বেশি দূরত্বে লাইন নেয়ার ফলেও বিতরণে সিস্টেম লসের পরিমাণ বেড়ে যায়।

জানা গেছে, সিস্টেম লস কমাতে আরইবি কারিগরি বিষয়ে নিয়মিত সভা করে দুর্বলতা নির্ণয়, দ্রুত লোড বিভাজন এবং লাইন ও উপকেন্দ্র বাড়ানো কাজ করছে। এর পরও গত এক বছরে আরইবির ১৩টি সমিতিতে সিস্টেম লস বেড়েছে। সমিতিগুলো হলো সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, শরীয়তপুর, চাঁদপুর-২, রাজবাড়ী, কুমিল্লা -২, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, রংপুর-১ ও দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরইবিতে এখনো অবৈধ ও বাইপাস সংযোগ রয়েছে। এসব অবৈধ সংযোগ ও বাইপাস লাইনের বিদ্যুৎ হিসাবের বাইরে থেকে যায়। ফলে পিডিবি থেকে কেনা বিদ্যুৎ ও বিতরণকৃত বিদ্যুতের পরিমাণের মধ্যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়। সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা এটি সিস্টেম লস বলে চালিয়ে দেন। এছাড়া মিটার রিডিং কর্মীরাও শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের যোগসাজশে

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দাবী করেন , আরইবির বিতরণ লাইনে অনেক পুরনো ‘তার’ রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে সংস্থাটি বেশ অগ্রগতি করেছে। সিস্টেম লস কমানোর জন্য নতুন নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

তবে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ডের বিতরণ লাইন অন্যান্য সংস্থার চেয়ে উন্নত। এ ধরনের বিতরণ লাইনে ৫ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস হওয়া প্রশ্নবিদ্ধ। বর্তমানে ১০ শতাংশের বেশি সিস্টেম লসের কারণ হতে পারে আন্ডারবিলিং ও অবৈধ সংযোগ।

http://www.dailysangram.com/post/275010