৮ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১২:৩৪

খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল

গুদামে পড়ে আছে ১৫৮ কোটি টাকার পণ্য

খুলনাঞ্চলের নয়টি পাটকলে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় গুদামে পড়ে আছে। ইতিমধ্যে গুদামগুলোতে অন্তত ১৫৮ কোটি টাকার পণ্য মজুত হয়েছে। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। এদিকে পণ্য বিক্রি না হওয়ায় শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পড়ছে।

বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে গত রোববার দুই ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ রেখে ধর্মঘট করেছেন খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকেরা।

নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল হলো খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর, আলীম ও ইস্টার্ন জুট মিল এবং যশোরের জেআই ও কার্পেটিং জুট মিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব পাটকলে ৪ মার্চ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৮৮৫ মেট্রিক টন হেশিয়ান, স্যাকিং বস্তাসহ বিভিন্ন পাটজাত পণ্য মজুত রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা। বেশির ভাগ পণ্যই ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্টের জন্য তৈরি। তা ছাড়া বিদেশে কার্পেটিং ব্যাগিং ক্লথের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে এসব পণ্য গুদামে পড়ে আছে।

পাটকলগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, কঠোর নজরদারি না থাকায় ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্টের জন্য তৈরি পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোতে নিচের দিকে থাকে প্লাস্টিকের বস্তা আর ওপরের দিকে দৃশ্যমান স্থানে রাখা হয় পাটের বস্তা। এ কারণে বাজারে পাটের বস্তার চাহিদা বাড়ছে না।

খালিশপুর জুট মিলের প্রকল্প প্রধান জুলফিকার আলী বলেন, তাঁদের এই কারখানায় ২০১৬ সালে তৈরি ৬ লাখ ৬২ হাজার পিস প্যাকেজিং অ্যাক্টের পণ্য মজুত রয়েছে। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় তাঁরা বিপদে পড়েছেন। যেসব পণ্যে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তা মানতে প্রশাসন যদি একটু কঠোর ভূমিকা নেয়, তাহলে প্রতিটি কারখানার মতো তাঁর কারখানায়ও পণ্য পড়ে থাকবে না।

প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. বনিজ উদ্দীন মিয়া বলেন, পণ্য উৎপাদন করতে যে টাকা খরচ হয়, বিক্রি করে যদি ওই টাকা
তোলা না যায়, তাহলে প্রতিবছরই লোকসান হবে। তাই শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পড়া স্বাভাবিক। তবে মজুরি পরিশোধের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনাঞ্চলের সমন্বয়কারী মারুফ হোসেন বলেন, কিছু কিছু বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে, বিজেএমসি থেকে মজুরি পরিশোধের জন্য টাকা এসেছে, কয়েক দিনের মধ্যেই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।

পাট দিবস পালিত
খুলনায় পালিত হয়েছে প্রথম পাট দিবস। দিবসটি উপলক্ষে পাটের কারখানাগুলোতে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। শ্রমিকদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। এ ছাড়া চলে আলোচনা সভা। কিছু কিছু কারখানায় রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

গত সোমবার জেলা প্রশাসন ও পাট অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান। তিনি বলেন, পাট ছিল বাংলাদেশের সোনালি আঁশ। পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে পাটপণ্যের ব্যবহার বহুবিধ করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করে বিদেশে পাটপণ্য রপ্তানি বাড়াতে হবে। পাটশিল্পকে আধুনিকায়ন করে খুলনাকে পাটের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জুট মিলস খুলনাঞ্চলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, ক্রিসেন্ট জুট মিলের উপমহাব্যবস্থাপক আবদুল কালাম হাজারী ও বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুল লতিফ, বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, জেলা তথ্য কার্যালয়ের উপপরিচালক ম. জাভেদ ইকবাল, পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল করিম প্রমুখ।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1100926