৮ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১২:১৬

নগদ ডলার মজুদ তলানিতে

কার্ব মার্কেটে অস্বাভাবিক দাম

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ মার্কিন ডলারে টইটম্বুর। বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকলেও মার্কিন ডলারের নগদ মজুদ (স্থিতি পরিমাণ) চার বছরের চেয়ে তলানিতে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে নগদ মার্কিন ডলারের এখন তীব্র সংকট। এই কারণে বাণিজ্যিক অনেক ব্যাংকই চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহককে ডলার দিতে পারছে না। এ সুযোগে কার্ব মার্কেটে বেড়েছে ডলারের অস্বাভাবিক দাম। এতে শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণ এবং ব্যবসার কাজে বিদেশগামীদের বৈদেশিক মুদ্রার পেছনে খরচ বাড়ছে। পাশাপাশি কমেছে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সার্বিক এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় এক কোটি পিস মার্কিন ডলারের নোট দ্রুত আমদানি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনায় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, মুদ্রা বিনিময় হার বৃদ্ধি ভালো। তবে বেশি বেড়ে যাওয়া ভালো নয়। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। যাতে আর না বাড়তে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ডলার আমদানি প্রসঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রীকে। সেখানে তিনি ডলার আমদানির পক্ষে ইতিবাচক মত দিয়েছে। এছাড়া নগদ এবং কার্ব মার্কেটে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির কারণ বিশেষভাবে পরীক্ষা করা আবশ্যক বলে জানিয়েছেন। তবে ড. মসিউর রহমান মনে করেন, বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের কারণে কার্ব মার্কেটে চাহিদা বৃদ্ধি যুক্তিসংগত, যা গভীরভাবে পরীক্ষা করা দরকার বলে তিনি মত দেন। ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলারের নোট মজুদ (স্থিতি) ছিল। ২০১৬ সালের একই সময়ে এই নোটের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬৮ লাখ ৮০ হাজার।

২০১৪ সালের হিসাবে তা ৪ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার এবং ২০১৩ সালে ছিল ৩ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার। এই হিসাবে বিগত চার বছরের তুলনায় বর্তমান ডলারের নগদ পরিমাণ সবচেয়ে কম। জানতে চাইলে সদ্য বিদায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ডলার আমদানিতে আরোপিত শুল্ক তুলে নেয়া উচিত। এ ব্যাপারে এনবিআরের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। কারণ ডলার সংকটের কারণে ইতিমধ্যে খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে উল্লেখযোগ্য হারে নগদ মার্কিন ডলারের নোটের মজুদ হ্রাস পেয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৩০ লাখ ডলার আমদানি করেছিল। তবে বর্তমান মুদ্রার বাজারে সংকট থাকায় ডলারের নোট এবং আমদানি পর্যায়ে বিনিময় হারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারতম্য হচ্ছে। এতে ডলার বিনিময় হার ৭৯ দশমিক ৫০ টাকা হলেও নগদ বিক্রয় হচ্ছে ৮৪ দশমিক ৫০ টাকায়, যা অস্বাভাবিক। এর ফলে বিদেশগামী ব্যক্তিদের ডলার কেনার পেছনে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সার্বিক এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এক কোটি পিস মার্কিন ডলারের নোট আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ডলার আমদানি পর্যায়ে উচ্চ শুল্ক আরোপ থাকায় এখনও তা আনা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এনবিআরের কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। জাতীয় স্বার্থে শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অর্থ মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত নোট না থাকায় অনেক ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে পারছে না। তবে বাজারে নগদ ডলার সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমেই এর বিনিময় হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া আমদানিকৃত মার্কিন ডলার শুধু অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে।

জানা গেছে, বিদেশ ফেরত বাংলাদেশী, অন্যান্য জাতীয় নাগরিকদের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা কিনে থাকে। আবার বিদেশ গমন ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ভ্রমণ, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক কাজে তা ব্যবহার করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩ হাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের রিজার্ভ নগদ নোট আকারে দেশের ভেতর রাখা হয় না। তা বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা (স্থিতি), বৈদেশিক বন্ড ও এসডিআরসহ নানাভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যে কারণে উচ্চ অবস্থায় রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রার অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোর (এডি ব্যাংক) কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল থাকলেও এই সংকট দূর করতে কাজে আসছে না।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/03/08/107086