৮ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১২:০০

সরকারি বেতনভাতা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে

ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা নির্ধারণী ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। কাজটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। এতে প্রতি বছর একজন সরকারি চাকরিজীবীর বেতন কতদূর পর্যন্ত বাড়ানো হবে তা নির্ধারণ করা হবে। বর্তমানে প্রতি বছর চাকরিজীবীদের ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি পায়। এই হার আগামীতে আরো বাড়ানো হবে। মূল্যস্ফীতির সাথে সঙ্গতি রেখে তা ৮ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আগামী রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আগামীতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতায় কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে সে বিষয়ে একটি ধারণাপত্র দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়ন বিভাগ থেকে একটি সার-সংক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়। এই সার-সংক্ষেপের ওপর অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, ‘এবারের বেতনভাতা নির্ধারণে (২০১৫ সালে পে-স্কেল) আমাদের লক্ষ্য ছিল যে এখন থেকে বেতনভাতা বাজারের সমতুল্য হবে। সেজন্য ভবিষ্যতে পাঁচ বছর পর পর কমিশন (বেতন কমিশন) নিয়োগ করতে হবে না। আমরা এখন থেকে একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বেতনভাতার বিষয়ে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেবো। তিনি যে অসঙ্গতি দেখা যায় সেগুলো দেখবেন। শুধু তাই নয় তিনি এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বছর শেষে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও দেবেন।’

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, ‘সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বেতনভাতার কোনো পরিবর্তন করতে হলে তা যথাসময়ে করা যেতে পারে। বিষয়টি হবে একটি বড় পরিবর্তনের ব্যাপার। তাই এ বিষয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে একটি বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজন। আমরা এই আলোচনা এ বছরই করে ডিসেম্বরের মধ্যে ভবিষ্যতের বেতনভাতা নির্ধারণ ও পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাস্তবায়ন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আগামীতে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা নির্ধারণের জন্য কোনো পে-কমিশন গঠন করা হবে না। এর পরিবর্তে সরকারি একজন সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে একটি সার্বক্ষণিক ডেস্ক তৈরি করে দেয়া হবে। তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতি বছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা সমন্বয় করা হবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হারকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় আনা হবে। মূল্যস্ফীতির হারের সাথে সমন্বয় করে চাকরিজীবীদের ইনক্রিমেন্টের হার নির্ধারণ করা হবে। বর্তমানে বছরে ৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়ানো হলেও আগামীতে তা আরো বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা বাজারের সাথে সমন্বয় করতে পাঁচ বছর অন্তর পে-কমিশন গঠন করা হয়। পে-কমিশন বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে পে-স্কেল নির্ধারণ করে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে অষ্টম পে-কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার অষ্টম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করে।

সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত পে-কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। আর ভাতা কার্যকর হয়েছে গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে। সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনি¤œ ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল বেতন ধরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বেতনকাঠামো অনুমোদন করা হয়। এতে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ে গ্রেডভেদে ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/201799