. নাটোরের বড়াইগ্রামে একটি কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নেই; ২. ঈশ্বরদী উপজেলায় ঈশ্বরদী সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র; ৩. জলঢাকা উপজেলার ভোটারবিহীন দু’টি ভোটকেন্দ্র ও ৪. সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার একটি কেন্দ্রে কয়েকজন ভোটার
৭ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ৬:৪৮

উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন

কেন্দ্র দখল ভোট ডাকাতি এজেন্টদের মারধর

নজিরবিহীন কম ভোট পড়েছে

বরিশালের গৌরনদী, নীলফামারীর জলঢাকা, নাটোরের বড়ইগ্রাম ও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি, পাবনার সুজানগর ও ঈশ্বরদী, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর এবং সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় গতকাল চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন ও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপক প্রভাব বিস্তার ও কোথাও কোথাও নজিরবিহীন কম ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন আমাদের সংবাদদাতারা। বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ভোটাদের অনুপস্থিতিতে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, পোলিং এজেন্টদের মারধর ও পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়াসহ নানা কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গৌরনদী (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ভোটাদের অনুপস্থিতিতে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোটডাকাতি, পোলিং এজেন্টদের মারধর ও পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়াসহ নানা কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভোট কারচুপির ও মোটরসাইকেল বহরের ছবি ডিলিট করে দিয়ে পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ক্যামেরা ফেরত দেয়া হয়েছে। অবশ্য, আ’লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।

বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মনজুর হোসেন মিলন অভিযোগ করেন, আমি ৪৫টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোতে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট দিয়েছিলাম। রোববার রাতে ও গতকাল সোমবার সকালে সরকারি দলের স্থানীয় ও বহিরাগত ক্যাডাররা আমার পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। হুমকি উপেক্ষা করে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে যান। গতকাল সোমবার সকালে হোসনাবাদ নিজামউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষ মার্কার এজেন্ট মো: সুজনকে মারধর করে অন্য এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সরকারি দলের তিন শতাধিক ক্যাডার শরিকল ইউনিয়নের সাতটি ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালটে নৌকা মার্কায় সিল মের ভোট বাক্স ভর্তি করে। সরকারি দলের হুমকির কারণে উপজেলার অন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটাদের কোনো উপস্থিতি ছিল না। এ সুযোগে সরকারি দলের ক্যাডাররা ভোট ডাকাতি ও ব্যাপক কারচুপি করে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সকাল ১০টায় কটকস্থল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাড়ে ১০টায় কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১টায় ভূরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাড়ে ১১টায় পশ্চিম শাওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুপুর ১২টায় নাঠৈ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাড়ে ১২টায় মাহিলাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেলা ১টায় বাটাজোর অশি^নী কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেলা দেড়টায় চন্দ্রহার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বুথের ভেতরে ও কেন্দ্রের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। সাংবদিকদের উপস্থিতি টের পেলে তারা বুথ থেকে বের হয়ে কেন্দ্রের মাঠে চলে আসে। কমলাপুর ও কটকস্থল সরকারি প্রাথিমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে নৌকার দুই-তিনজন সমর্থককে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারতে দেখা গেছে। দৈনিক যুগান্তর, নয়াদিগন্ত ও কলমের কন্ঠ পত্রিকার গৌরনদী প্রতিনিধিসহ কয়েকজন সাংবাদিক দুপুর দেড়টার দিকে চন্দ্রহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে দায়িত্বরত এএসআই কামাল সাংবাদিকদের বাধা দেন। এ সময় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি দলের ক্যাডার আসলাম শিকদারের নেতৃত্বে সরকারি দলের ৩০-৩৫ জন ক্যাডার মোটরসাইকেলবহর নিয়ে চন্দ্রহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এ সময় দৈনিক কলমের কণ্ঠ পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক পার্থ হালদার মোটরসাইকেলবহরের ছবি ক্যামেরাবন্দী করলে আসলাম সাংবাদিক পার্থ হালদারের কাছ থেকে এসএলআর ক্যামেরাটি ছিনিয়ে নিয়ে ভোট কারচুপি ও মোটরসাইকেলবহরের ছবি ডিলিট করে সাংবাদিককে মারার জন্য তেড়ে আসেন। কর্তব্যরত পুলিশ ও কয়েকজন যুবলীগ নেতার হস্তক্ষেপে ক্যামেরা ফেরত দেন। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

বিএনপির প্রার্থীর আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, বানোয়াট বলে দাবি করে আ’লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেনÑ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররা যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেয়নি এটা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ব্যাপার। ভোটে মিলনের ভরাডুবি হবে বুঝতে পেরে কুৎসা রটাচ্ছে বলে মেরী জানান।

জানা গেছে, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শাহে আলম খানের মৃত্যুতে পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এ উপজেলায় সর্বমোট ১ লাখ ৪১ হাজার ২৯৬ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৭১ হাজার ৪১৯ ভোট ও মহিলা ৬৯ হাাজর ৮৭৭ ভোট। উপজেলার ৪৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটারদের উপস্থিতি একেবারে কম ছিল। কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো ভোটার ভোট দিতে যায়নি। সকাল সাড়ে ৯টার সময় জলঢাকা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ১০টায় টেংগনমারী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়, ১১টায় ডাকুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দুপুর ১২টায় মীরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। হাতে গোনা কয়েকজন ভোটার দেখা গেছে কেন্দ্র চত্বরে। কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের গল্পগুজব করে সময় কাটাতে দেখা গেছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে আনন্দ-উৎসাহ তেমন একটা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকে।

জলঢাকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে তিনজন প্রাথী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মশিউর রহমান বাবু, জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী গত উপজেলা নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত ফয়সাল মুরাদ (টিউবয়েল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা জাসদের সভাপতি গোলাম পাশা এলিচ (তালা)। ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার এ উপজেলায় দুই লাখ ৩০ হাজার ৫৯৪ জন ভোটারের জন্য ৮৩টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা কামরুল ইসলাম। 

নাটোর সংবাদদাতা জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের ভোটযুদ্ধে সাড়া দেননি সাধারণ ভোটাররা। গতকাল সোমবারের এই নির্বাচনে নজিরবিহীন কম ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৮টি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারের কোথাও কোনো লাইন দেখা যায়নি। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে তখন পর্যন্ত এক শ’র নিচে ভোট পড়ে। এই উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী নৌকা প্রতীকে এবং উপজেলা বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম রাসেল ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিকেল ৪টা পর্যন্ত বড়াইগ্রাম ডিগ্রি কলেজ, বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, বড়াইগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীরামপুর, চামটা, দিঘইর, তিরাইল উচ্চবিদ্যালয়, মৌখাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও মহিষভাঙ্গাসহ অন্তত ৩০টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কেন্দ্রেই ভোটারের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এসব কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তাদের দাঁড়িয়ে বসে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। মাঝে মাঝে দু’একজন ভোটারকে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে দেখা গেছে। অন্যান্য কেন্দ্রে খোঁজ নিয়েও একই রকম খবর পাওয়া গেছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত শ্রীরামপুর কেন্দ্রে ৩০ ভাগ এবং মহিষভাঙ্গা কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন এসব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসাররা। উপজেলার ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭৬ জন ভোটার ৮১টি ভোটকেন্দ্রে ৫৪৪টি বুথে সারা দিন যে ভোট প্রদান করেছেন তা কোনোভাবেই ৩৫ থেকে ৪০ ভাগের বেশি হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চামটা ও ভিটাকাজিপুরসহ কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির ভোটারদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন।

বড়াইগ্রাম থানার ওসি শাহরিয়ার খান জানান, প্রত্যেক কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল ফোর্স দায়িত্ব পালন করে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটসহ ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।

মূল দুই দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরও ভোটার উপস্থিতি এত কম কেন জানতে চাইলে সাধারণ ভোটাররা বলেছেন, উভয় দলের গ্রুপিং ও দলীয় কোন্দলের কারণে দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই ভোট দিতে আসেননি। আর উপনির্বাচন হওয়ায় সাধারণ ভোটারদের কাছে এটা তেমন গুরুত্বও পায়নি। ফলে ভোটার উপস্থিতি এত কম হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একরামুল আলম মারা গেলে এই পদটি শূন্য হয়।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে পুনর্নির্বাচনের দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গির হোসেন আকন (ধানের শীষ)। গতকাল দুপুরে তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন। তিনি তার সাতজন কর্মী-সমর্থককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনা আটক করেছে বলে দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর হোসেন আকন আরো বলেন, গতকাল সকাল থেকে এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বে¡ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের আশ্বাস পেয়ে আমি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এ নির্বাচনে অংশ নেই। কিন্তু তার বাস্তবায়ন ঘটেনি। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে। সাধারণ জনগণের সমর্থন থাকায় আমি নির্বাচনী মাঠ থেকে উঠে আসিনি। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দেখি গোটা উপজেলা বহিরাগতে ছেয়ে গেছে। বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে।

এ উপজেলায় মোট ৩০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু একটি মাত্র কেন্দ্র আমলীবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যতীত সব ক’টি কেন্দ্র দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তার দলীয় ক্যাডারেরা। এর আগে ৩ মার্চ গত শুক্রবার মৌডুবি বাজারে নির্বাচনী পথসভায় আওয়ামী লীগের হামলায় আমার প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করলে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো অন্যায় ভাবে তারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি কবির হোসেন তালুকদার, মোশারফ, আবু সালেহ, রিপন, মাইনুল ইসলাম ও জাকির প্যাদা নামে সাতজন কর্মী-সমর্থককে আটক করেছেন। এ ছাড়াও ভোটকেন্দ্র থেকে আমার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চলমান নির্বাচন বাতিল করে আবার সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

রাঙ্গাবালী থানার ওসি শামসুল আরেফীন জানান, বিএনপির প্রার্থীর কোনো নেতাকর্মীকে আটক করা হয়নি এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেনি।

খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা জানান, খাগড়াছড়ি জেলার নব সৃষ্ট গুইমারা উপজেলার প্রথম নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
গুইমারা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষ বুথে ৬২.২ এবং মহিলা বুথে ৫৬.৭ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার রিয়াদ হোসেন ও মাঈন উদ্দিন। একই কেন্দ্রে বিকেল সাড়ে ৩টায় জালভোট দেয়ার অভিযোগে ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো: নোমান ২ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন। অন্য দিকে আড়াইটার দিকে জালিয়াপাড়া কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটে। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে মারধরের অভিযোগ করেছেন।

রাত থেকে প্রচুর বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বেলা ১১টা পর্যন্ত কেন্দ্রেগুলোতে ভোটার উপস্থিতি খুব কম ছিল। অনেক বুথ ছিল একবারেই ফাঁকা। বৃষ্টি থামার পর বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। হাফছড়ি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পাহাড়ি-বাঙালি ভোটারেরা ভোট দিচ্ছেন। বৃষ্টিতে কষ্ট হলেও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরে ভোটারেরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। এ ছাড়া নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মোট ৮৭টি ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। বেশির ভাগ কেন্দ্রের ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। সর্বশেষ ভোট গণনার কাজ চলছে।

এ দিকে উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সরকার দলের পক্ষে জালভোট দেয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে ভোটকেন্দ্র থেকে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। আটকের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ।

৮ বছর পরে অনুষ্ঠিত জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এই উপজেলা মোট ভোটারের সংখ্যা ১৬৭ হাজার ৪৯৯ জন।
পাবনা সংবাদদাতা জানান, পাাবনার সুজানগর ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে ইতিহাসের সর্ব নি¤œ ভোটার উপস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কেন্দ্রেই ভোটারদের কোনো লাইন নেই। বিএনপির প্রার্থীদের অভিযোগ তাদের ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে তারা উপস্থিত হয়নি। অনেককে কেন্দ্রে আসার পথে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকদেরও ভোটকেন্দ্রে তেমন দেখা যায়নি। দুই একজন এসে ভোট দিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে। এমন কম ভোটার উপস্থিতির নির্বাচন পাবনার ইতিহাসে এটাই প্রথম বলে প্রবীণরা জানিয়েছেন।

সুজানগরে ৬৩টি কেন্দ্রে এবং ঈশ্বরদীতে ৭৪টি কেন্দ্রে এই ভোটগ্রহণ চলে।

সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের মৃত্যু ও সদ্য সমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহজেবীন শিরিন পিয়া প্রার্থী হওয়ায় ওই দু’টি আসন শূন্য হওয়ায় এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

সুজানগর উপজেলায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল কাদের রোকন। অপর দিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজারী জাকির হোসেন চুন্নু।

ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহমুদা বেগম ও আওয়ামী লীগের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস রুনু কলস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।

ওসমানীনগর (সিলেট) সংবাদদাতা জানান, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। তবে গোটা উপজেলার সব ক’টি কেন্দ্রেই ভোটারদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। সকালে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। দুপুর ঘনিয়ে এলে কেন্দ্রগুলোতে সামান্য সংখ্যক ভোটার আসতে থাকে। যারাই ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসে তাদের বেশির ভাগই ছিল রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থক ও রাজনৈতিক পরিবারের। সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি অন্যান্য নির্বাচনের মতো ছিল না। প্রসঙ্গত, নবগঠিত ওসমানীনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ভোটার সংখা হল ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৬০ জন। এবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/201547