৭ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ৫:৩৪

ব্রাদারহুড সহিংস নয় সহিংসতার শিকার ব্রিটেন অবশেষে বাতিল করল বিতর্কিত রিপোর্ট

অবশেষে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিষয়ে ২০১৪ সালের বিতর্কিত রিপোর্টের মূল্যায়ন থেকে পিছু হটেছে ব্রিটিশ সরকার। সৌদি আরবে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার জন জেনকিনসের প্রস্তুতকৃত রিপোর্টে মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মকাণ্ডকে সহিংস উগ্রপন্থার ‘সূচনা’ হিসেবে মন্তব্য করা হয়েছিল। সম্প্রতি এই রিপোর্টটি বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

এটির পরিবর্তে এখন পার্লামেন্টের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির (এফএসি) মূল্যায়নের সাথে একমত পোষণ করতে যাচ্ছে সরকার। ইসলামি আন্দোলন বা ইসলামপন্থী রাজনীতি বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের নীতির আলোকে গত বছর একটি তদন্ত করেছে এফএসি। ওই তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে ইসলামপন্থী রাজনীতিকেরা সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধের দেয়াল হিসেবে কাজ করছেন। ক্ষমতার বাইরে বা ভেতরে যে অবস্থায়ই থাকুক, তাদের সাথে সহযোগিতা করা উচিত।

গত সোমবার প্রকাশিত ওই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কিছু প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একমত যে, ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদেরা কখনোই সহিংসতার সাথে জড়িত ছিলেন না। উল্টো তারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন। মন্ত্রণালয় এটি নিশ্চিত করেছে যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ইসলামপন্থী রাজনীতিকদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত এবং ব্রিটিশ সরকারেরও উচিত সর্বাবস্থায় তাদের সাথে কাজ করা।

কমিটির এই রিপোর্টের সাথে একমত হয়েছে ব্রিটিশ সরকার। রিপোর্টের সমাপনীতে বলা হয়েছে, সুদূর ভবিষ্যতের জন্য রাজনীতি ও ধর্মের সহাবস্থান করা উচিত। এতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ইসলামপন্থী রাজনীতিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সহিংসতায় জড়িত নয়।

ইসলামপন্থী রাজনীতির সাথে সম্পর্ককে ‘ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সাথে তারা ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের পথ হিসেবে সামরিক হস্তক্ষেপের’ বিরোধী বলে জানিয়েছে। এখনো মিসরের সিসি সরকারের সাথে কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সিসির ক্ষমতা গ্রহণের ঘটনাকে সামরিক বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টি বারবার প্রত্যাখ্যান করছে তারা। বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির প্রধান ক্রিসপিন ব্লুন্ট ইসলামপন্থী রাজনীতি প্রসঙ্গে ওই তদন্ত রিপোর্টের মূল্যায়নে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ব্রিটিশ সরকার জন জেনকিনসের রিপোর্টের শুধু ‘প্রধান উদঘাটনগুলো’ প্রকাশ করেছে। অন্য দিক জেনকিনস এফএসির কাছে এ বিষয়ক তদন্তের জন্য সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। জেনকিনসের রিভিউর সাথে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তার মূল্যায়নে ব্রাদারহুডকে আলকায়েদার সাথে জড়িত হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটি তাদের রিপোর্টে জেনকিনসের রিপোর্ট সম্পূর্ণ প্রকাশ না করার কারণ হিসেবে বলেছে, সেটি অস্বচ্ছ ও নিতান্ত গতানুগতিক। রিপোর্টটি মৌলিকভাবেই ত্রুটিপূর্ণ। কারণ, এতে ২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর ব্রাদারহুডের পরিচালিত দমন-নিপীড়নের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ব্রাদারহুডের শত শত নেতাকর্মীর নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হওয়া ও সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কারাগারে নিক্ষেপের ঘটনাগুলোও বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

গত সোমবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, ইসলামপন্থী রাজনীতিকেরা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় যারা বিক্ষোভের কারণে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, ভোটাধিকার হারিয়েছেন এবং রাজনীতি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন তাদের অবস্থার শান্তিপূর্ণ পরিবর্তন করা না গেলে তারা সহিংসতার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেয়া এবং সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে এটি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

মিডল ইস্ট আই অবলম্বনে

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/201489