৬ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৭:৫৭

কাজ করছেন কর্ম সৃজনের শ্রমিকেরা

নাটোরে বিদ্যালয়ের জমিতে যুবলীগের কার্যালয় নির্মাণ!

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার কালীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের জমি দখল করে যুবলীগের কার্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। আর নির্মাণকাজে সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচির ৪৫ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত শনিবার দুপুরে পিপরুল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে কালীগঞ্জ সেতুসংলগ্ন প্রায় এক বিঘা জমিতে মাটি ভরাটের কাজ করছেন ৪৫ জন নারী শ্রমিক। জায়গাটির উত্তর পাশে বারনই নদ, পূর্ব পাশে কালীগঞ্জ সেতু ও দক্ষিণে বাজার। এ সময় নারী শ্রমিকদের পাশাপাশি রাজমিস্ত্রিদের পিলার নির্মাণের জন্য গর্ত খনন ও রড বাঁধার কাজ করতে দেখা যায়।

একাধিক নারী শ্রমিক বলেন, তাঁরা সরকারের ১০০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নিয়োগ করা সর্দার আবদুল হালিমের অধীনে কাজ করছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও যুবলীগের নেতারা তাঁদের এখানে কাজে দিয়েছেন। শুনেছেন, এখানে যুবলীগের কার্যালয় নির্মাণ করা হবে। এখন তাঁরা মাটি ভরাটের কাজ করছেন।

আবদুল হালিম বলেন, তাঁরা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আখের আলী ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেলওয়ার হোসেনের নির্দেশে যুবলীগের ক্লাবঘর করার কাজ করছেন। এই কাজের জন্য তিনি সরকারি কর্মসৃজন কর্মসূচির তহবিল থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা ও ৪৫ জন শ্রমিক ২০০ টাকা করে পাবেন। দলীয় কার্যালয় করার কাজ তো তাঁরা করতে পারেন না—এ কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা লেবার। মেম্বার-চেয়ারম্যান আমাদের যেখানে কাজ করতে বলবে, আমরা সেখানে করব।’

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুধন্য সরকার সেখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি দল করি। আমাদের বসার একটা ঘর দরকার। তাই নদীর চরে দলীয় অফিসঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।’ তিনি বলেন, ৫ শতাংশ জমির ওপর আরসিসি পিলার দিয়ে ঘর নির্মাণের পর পাশে মার্কেট নির্মাণ করা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী তাঁদের এখানে ঘর নির্মাণ করতে বলেছেন। সরকারি অনুমোদন নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না নেওয়া হয়নি।’

কালীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক বলেন, যুবলীগের কার্যালয় যে জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটির হাল দাগ নম্বর ৯৮৪। এটা ১৯৭৪ সালে রাধা গোবিন্দ বিগ্রহ কমিটি বিদ্যালয়কে দান করেছে। পরে বিগ্রহ কমিটি এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। মামলা বিচারাধীন আছে। জমির ওপর দিয়ে বর্ষাকালে বারনই নদ বয়ে যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে জমিটি বিদ্যালয়ের দখলে থাকে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধ সত্ত্বেও যুবলীগের সদস্যরা ক্লাবঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁরা থানায় অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ বলেন, তাঁরা আশপাশের বিভিন্ন জমিতে কার্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাধায় করতে পারেননি। অবশেষে সংসদ সদস্য এই জায়গায় ঘর করতে বলেছেন। তা ছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী এখানে ঘর নির্মাণ করার লিখিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৩৬ জনের সই করা একটা কাগজ দেখান। সেখানে ‘কালীগঞ্জ ক্লাবঘরের জায়গা’ লিখে ৩৬ জনের সই রয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত লেখা নেই। তিনি বলেন, এই জমি নিয়ে বিদ্যালয় ও রাধা গোবিন্দ বিগ্রহ কমিটির মধ্যে মামলা আছে। তবে তাঁরা মনে করেন, এটা নদীর খাসজমি। তাই এখানে ভবন করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা অনুমোদন নেননি। সরকারি শ্রমিক দিয়ে দলের কাজ করানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরাও তো সরকারি দলের লোক। মেম্বাররা তাঁদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।’

ইউপি সদস্য আখের আলী ও দেলওয়ারের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পিপরুল ইউপির চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন বলেন, ‘যুবলীগের ছেলেদের অনুরোধক্রমে আমি আমার কর্মসৃজন কর্মসূচি থেকে এক বেলার জন্য যুবলীগের নির্মাণাধীন কার্যালেয় মাটি ভরাট করতে শ্রমিকদের পাঠিয়েছিলাম।

নলডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জাহান বলেন, এ ঘটনাটি তিনি জানেন না। যদি যুবলীগের কার্যালয় নির্মাণ করার কাজ কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকদের দিয়ে করানো হয়, তাহলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

নাটোর-২ আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি যুবলীগের স্থানীয় কাউকে ওই জমিতে কার্যালয় করতে বলেননি। এটা অপপ্রচার। আর নির্মাণকাজে কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকেরা কাজ করলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1098898