৬ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৭:৫১

সরকারি ৪ ব্যাংকের লোকসান ৯২৯ কোটি টাকা

এক বছরে বেড়েছে ৬৩৭ কোটি টাকা

এক বছরে সরকারি চার ব্যাংকে নিট লোকসান হয়েছে ৯২৯ কোটি টাকা। এর আগের বছরের তুলনায় লোকসান বেড়েছে ৬৩৭ কোটি টাকা। যা অতীতে আর কখনও হয়নি। এর মধ্যে এককভাবে ৪২৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়ে শীর্ষে আছে সোনালী ব্যাংক। এর পরেই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অবস্থান। অথচ এসব ব্যাংকে আগের বছর নিট লোকসান ছিল মাত্র ২৯২ কোটি টাকা। অন্যদিকে আগের বছর মুনাফা করলেও লোকসান দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। তবে আলোচ্য সময়ে সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের নিট মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠেছে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছে, খেলাপি ঋণ কমাতে না পারলে সরকারি ব্যাংকের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম রোববার যুগান্তরকে বলেন, সরকারি ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। বর্তমানে তা সীমার বাইরে চলে গেছে। এই ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সরকারি ব্যাংকের সংকট কাটানো যাবে না।

জানা গেছে, বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই বছরে ব্যাংকগুলো গ্রস মুনাফার তথ্য পাওয়া যায়। এই মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন এবং সরকারকে দেয়া কর বাদ দিয়ে নিট মুনাফা হিসাব করা হয়। যা ব্যাংকের সত্যিকারের মুনাফা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এই মুনাফার তথ্য প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে এ তথ্য আবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেও (বিএসইসি) জানাতে হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলোর গ্রস পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ২১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে মুনাফা কমেছে ১১৬ কোটি টাকা। তবে আলোচ্য সময়ে অর্থাৎ ২০১৬ সালে নিট মুনাফা ৩৮৯ কোটি টাকা বেড়ে ৮ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা হয়েছে। আগের বছর যা ছিল ৭ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। মূলত প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমায় এমন হয়েছে। যদিও ২০১৫ সালে ব্যাংকগুলোকে ৭ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা প্রভিশন রাখার প্রয়োজন পড়েছিল। গত বছর সংরক্ষণ করতে হয়েছে ৭ হাজার ২১০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলো সরকারকে ৬ হাজার ৫০ কোটি টাকা কর দিয়েছে। আগের বছর যা ছিল ৬ হাজার ৭২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ২০১৬ সালে সরকারি ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংক ২ হাজার ১০ কোটি পরিচালন মুনাফা করেছে। কিন্তু তাদের নিট মুনাফা তো দূরের কথা, লোকসান হয়েছে ৫১১ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ১২৫ কোটি টাকা। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আগের বছর সরকারি মালিকানার বেসিক ব্যাংক লোকসানে থাকলেও এবারে নতুন করে লোকসানে পড়েছে রূপালী ব্যাংক। বেসিক ব্যাংক ২০১৫ সালে ২৩৮ কোটি টাকা নিট লোকসান দিলেও এবার আড়াই কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েছে। সরকারি অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকর নিট লোকসান বেড়ে ৩৮৮ কোটি টাকা হয়েছে। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের লোকসান ৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩০ কোটি টাকা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৮১৮ কোটি টাকা হলেও নিট হিসাবে লোকসান হয়েছে ৪২৪ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংক ৫৮৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করে নিট মুনাফা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। বিডিবিএল ৬৪ কোটি টাকা পরিচালনা মুনাফা করলেও নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের লোকসান ১৪ কোটি টাকা।

সার্বিকভাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৭ হাজার ৫২০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হলেও নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা ২ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।

নিট মুনাফায় সবার শীর্ষে আছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। আলোচ্য বছরে ব্যাংকটির মুনাফা ৮৩১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৮৩ কোটি টাকা নিট মুনাফাকারী ন্যাশনাল ব্যাংক। পরিচালন মুনাফায় শীর্ষে থাকলেও নিট মুনাফার তালিকায় তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বেসরকারি খাতের অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ৪৪৬ কোটি টাকা, দ্য সিটি ৩৯৬ কোটি টাকা, সাউথইস্ট ৩৪৩ কোটি টাকা, ইউসিবি ৩৩৩ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্ ৩১৯ কোটি টাকা, এক্সিম ২৮৭ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ২৮৪ কোটি, ইস্টার্ন ২৮০ কোটি, ঢাকা ২৫৬ কোটি, এনসিসি ২৪৮ কোটি, এসআইবিএল ২৩৯ কোটি, যমুনা ২৩৫ কোটি, মার্কেন্টাইল ২০৫ কোটি, ট্রাস্ট ২০২ কোটি ও পূবালী ২০০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। এ ছাড়া ব্যাংক এশিয়া ১৯০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ১৮৬ কোটি, ডাচ্-বাংলা ১৮১ কোটি, এবি ব্যাংক ১৭৯ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ১৬৯ কোটি, শাহজালাল ১৬০ কোটি, আইএফআইসি ১৫৮ কোটি, উত্তরা ১৫৮, প্রিমিয়ার ১৫৪ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ১৪৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ১০৪ কোটি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক আড়াই কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথ-বাংলা ৯৬ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ৮৫ কোটি, এনআরবি কমার্শিয়াল ৮৪ কোটি, মিডল্যান্ড ৬৬ কোটি, মেঘনা ৫৭ কোটি, এনআরবি ৫৩ কোটি, মধুমতি ৪৬ কোটি, এনআরবি গ্লোবাল ৪০ কোটি, ফারমার্স ২৪ কোটি টাকা ও সীমান্ত ব্যাংক ৫১ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/03/06/106510