চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় আনা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ
৬ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৭:৪৮

মেশিনারিজ ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি

এবার মিলল শত কোটি টাকার নিষিদ্ধ পণ্য

মদ এলইডি টিভি সিগারেট উদ্ধার * বড় জালিয়াত চক্রের কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর -শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক

কারখানার যন্ত্রপাতি আনার নামে এবার আনা হল আমদানি নিষিদ্ধ বিদেশী মদ, ব্রান্ডেড সিগারেট ও এলইডি টিভি। রোববার চট্টগ্রাম বন্দরে ছয়টি কনটেইনার পরীক্ষা করে এসব পণ্য পাওয়া গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব পণ্যের মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। এছাড়া এতে অন্তত ৮০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে। তবে এ চালানে আসা আরও ছয়টি কনটেইনার এখনও পরীক্ষা করা হয়নি। আজ তা খোলা হতে পারে। সেখানেও এমন পণ্য রয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান রোববার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, বড় ধরনের জালিয়াত চক্র এ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। চক্রটি এর আগে আরও ৭১টি চালান একইভাবে খালাস করেছে। আমরা এর তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি।

পোলট্রি ফিড কারখানার যন্ত্রপাতির (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) ঘোষণা দিয়ে এসব পণ্য এনেছে ঢাকার খিলক্ষেত থানার ডুমনি এলাকার হেনান আনুহি এগ্রো নামের এক কোম্পানি। চীন থেকে এসব পণ্য আনতে আইএফআইসি ব্যাংকের আইএফআইসি ভবন মতিঝিল শাখায় খোলা হয় এলসি। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের রাবেয়া অ্যান্ড সন্স। শুল্ক গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আমদানিকারক ও এজেন্টের যে নাম-ঠিকানা দেয়া হয়েছে, সেখানে তেমন কাউকে বা কোম্পানি খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরুর পর খালাসের জন্য যোগাযোগকারীরা গাঢাকা দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিতে (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল) দুপুরে ছয় কনটেইনার শতভাগ কায়িক পরীক্ষার জন্য খোলা হয়। রাত পৌনে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ষষ্ঠ কনটেইনার থেকে পণ্য উদ্ধার ও গণনা চলছিল। সে সময় ড. মঈনূল খান যুগান্তরকে বলেন, ৪০ ফুটের এ কনটেইনার থেকে বিদেশী বিভিন্ন ব্রান্ডের আনুমানিক ১০ কোটি টাকার মদ উদ্ধার করা হয়েছে। ব্রান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিভাস রিগাল, ১০০ পাইপারস, ব্ল্যাক লেভেল, ব্যালান্টাইসন, রয়াল স্যালুট। এছাড়া শাকিলা সিলভা নামে একটি হুইস্কিও রয়েছে। এখনও গণনা চলছে।

ড. মঈনূল আরও বলেন, উদ্ধার করা এলইডি টিভিগুলো সর্বনিন্ম ২৯ ইঞ্চি থেকে সর্বোচ্চ ৯০ ইঞ্চি। ৯০ ইঞ্চির একেকটি এলইডি টিভির দাম ৪০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, একেকটি একেক ধরনের ও সাইজের হওয়ায় এবং বিভিন্ন ব্রান্ডের হওয়ায় এসব টিভির দাম ও সংখ্যা নির্ণয় করতে সময় লাগছে।

এর আগে সন্ধ্যা ৬টায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক যুগান্তরকে বলেন, ‘কায়িক পরীক্ষার জন্য খোলা ছয় কনটেইনারের দুটিতে এলইডি টিভি ও তিনটিতে আমদানি নিষিদ্ধ (এসেক্স ব্ল্যাক) সিগারেট পাওয়া গেছে। সর্বশেষ সন্ধ্যায় খোলা ৬ নম্বর কনটেইনারে পাওয়া গেছে বিদেশী মদ। এ পর্যন্ত ৬ কনটেইনার থেকে জব্দ করা পণ্যের আনুমানিক মূল্য ১০০ কোটি টাকা। বাকিগুলো গণনা চলছে। এসব পণ্যে প্রায় ৮০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি হয়েছে বলে ধারণা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ চালান এবং আগের চালানগুলো নিয়ে আমরা এখন গভীর অনুসন্ধান করব, তদন্ত করব। চোরাচালান চক্রটিতে কারা আছে, তা খুঁজে বের করব। এসব অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, তাদের এবং সহযোগী সবাইকে আইনের আওতায় আনব।’

সূত্র জানায়, এ চালানের পণ্যভর্তি ১২টি কনটেইনার চীনের একটি বন্দরে দুই জাহাজে তোলা হয়। প্রথম তিনটি কনটেইনার তোলা হয় এমভি ভাসি সান এবং দ্বিতীয় তিনটি এমভি সিনার সুভাং জাহাজে। চীন থেকে জাহাজ দুটি আসে সিঙ্গাপুর। সেখান থেকে ছেড়ে আসে ২১ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি। মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলায় হয়ে মঙ্গল ও বুধবার জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে। এতে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আনা হচ্ছে- সোর্সের মাধ্যমে এ খবর জানতে পারেন শুল্ক গোয়েন্দারা। জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এলে রেকি করা হয়। সবশেষে সোর্সের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কনটেইনারগুলো চিহ্নিত করে প্রথম ধাপে তিনটি নামিয়ে স্ক্যান করা হয়। স্ক্যানিংয়ে সন্দেহজনক পণ্য নিশ্চিত হওয়ার পর রোববার ৬ কনটেইনার খুলে পরীক্ষা করা হয়। আজ সোমবার বাকি ছয় কনটেইনার বন্দরে নামিয়ে কায়িক পরীক্ষা করার কথা রয়েছে।

কায়িক পরীক্ষার সময় ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম কাস্টমস, বন্দর, শুল্ক গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, কনটেইনারগুলো ৪০ ফুটের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য ছয়টিতেও যদি আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য পাওয়া যায় তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরে এ যাবৎকালের এটাই হবে সর্বোচ্চ চোরাচালান বা মিথ্যা ঘোষণার চালান।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/03/06/106503