৬ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৭:৪৫

এমপি পুত্রে নিঃস্ব মনসুর

৩৬ শতক খাসজমি কিনে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৫৮ শতক দখল * বিক্রি না করেও হাতছাড়া জমি * বাড়িঘর ভেঙে দিয়ে মূল মালিককে উচ্ছেদ

বগুড়ার শেরপুর-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কের পাশে শেরুয়া মৌজায় প্রায় ৩ কোটি টাকার জমি আছে মনসুর বেপারী দরবেশের। এই জমি তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। বয়সের ভারে ন্যুব্জ তিনি। এ অবস্থায় কোটি টাকার সম্পদ থাকার পরও দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করেন। স্ত্রী মমতা বেগমও একটি চাতালের শ্রমিক। অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে খাসজমি কিনে মনসুরের ৫৮ শতক পৈতৃক জমির পুরোটাই দখল করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের ছেলে আসিফ ইকবাল সনি। খাসজমির দাগ নম্বর এবং মনসুরের দাগও ভিন্ন। সরকারি কাগজপত্রে মনসুরই এ জমির মালিক। চলতি ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করেছেন তিনি। জমি বিক্রিও করেনি। কিন্তু বাস্তবে জমি তার হাতে নেই। জরিপের সময় স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ঘরবাড়ি ভেঙে রাতের আঁধারে মনসুরকে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদও করা হয়েছে। নিঃস্ব মনসুরের জমির দাগ খতিয়ান উল্লেখ করে সেখানে ফিলিং স্টেশন স্থাপনের আবেদন করেন ক্ষমতাধর এই এমপিপুত্র।

অনুসন্ধানে জানা গেছে মনসুর পৈতৃক সূত্রে শেরুয়া মৌজার ৭২৭ নম্বর দাগে ৫৮ শতক জমির মালিক। প্রতিবেশী ভূমিহীন ছামসুল হককে সরকারিভাবে বিভিন্ন মৌজা থেকে ২ একর ৬১ শতাংশ খাসজমি বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে শেরুয়া মৌজায় ১২৭ নম্বর দাগে ৯৬ শতাংশ জমি আছে। কিন্তু ছামসুল হক ১২৭-এ না গিয়ে ৭২৭ নম্বর দাগের মনসুরের ৩৬ শতাংশ জমি দখল করেন। ছামসুলের মৃত্যুর পর এই ৩৬ শতাংশ জমিই তার স্ত্রী-সন্তানরা বিক্রি করেন স্থানীয় প্রভাবশালী এনামুলের কাছে। এনামুলের কাছ থেকে কিনে নেন এমপিপুত্র আসিফ ইকবাল সনি। ৩৬ শতাংশ জমি কিনলেও তিনি মনসুরকে পুরো জমি থেকেই (৫৮ শতাংশ) উচ্ছেদ করেন।

রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইনকানুন থাকলেও এই জমি বেচাকেনায় বারবার এ আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। প্রভাব বিস্তার করে একাধিক সাবরেজিস্ট্রারের সহায়তায় কয়েক দফায় রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটে। মূল্যবান এ জমি জবরদখলের বিচার পেতে জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন অসহায় মনসুর। কিন্তু এমপির ক্ষমতার কাছে বারবার হেরে গেছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ ইকবাল সনি যুগান্তরকে বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার এনামুল সাহেবই দীর্ঘদিন এ জমির মালিক ছিলেন। তিনি আমার আত্মীয়। তার কাছ থেকেই জমিটি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি। মনসুর দরবেশকে আমি চিনি না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা-মোকদ্দমা ছিল। এরপর এসি ল্যান্ড অফিসের মাধ্যমে যে ডকুমেন্ট হয় সেগুলো উনার-ই (এনামুল) ছিল। ত্রুটিপূর্ণ নথিপত্রের মাধ্যমে মূল মালিক ছাড়া কীভাবে এ জমি রেজিস্ট্রি করে নিলেন- জানতে চাইলে সনি বলেন, ‘মনসুর আলীর নাম এই প্রথম শুনলাম।’ এরপর বারবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।

জমির মালিকানা নিশ্চিত করে শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম তোতা যুগান্তরকে বলেন, শেরপুরের শেরুয়া মৌজার ৭নং খতিয়ানে ১০০নং জেএলস্থিত ৭২৭ দাগে ৫৮ শতক জমির মালিক মনসুর আলী বেপারী। ২০১০ সালের ১৪ নভেম্বর এ জমি তার নামে খারিজ হয়েছে। তিনি বলেন, মনসুর বেপারী ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল (বাংলা ১৪২৩ সাল) পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করেছেন।

ভুক্তভোগী মনসুর বেপারী যুগান্তরকে বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রারের সহায়তায় আমার পৈতৃক সম্পত্তি দফায় দফায় বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু কেউ আমাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। এমপিপুত্র পুলিশের সহায়তায় আমাকে উচ্ছেদ করে শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছেন।’ তিনি বলেন, সেল অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টের ভুল দাগ-খতিয়ান থাকা সত্ত্বেও ’৯৮ সালে তিনবার ৩৬ শতক জমি এলাকার প্রভাবশালী কানাডা প্রবাসী প্রকৌশলী এনামুল হকের কাছে বিক্রি করা হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছামসুল হক নামে একজন ভূমিহীনকে সরকার শেরুয়া মৌজায় ১২৭ দাগে জমি দেয়। সেই জমির স্থলে আমার ৭২৭ দাগের জমি প্রথম জালিয়াতির মাধ্যমে তার তিন মেয়ে, এক ছেলে ও তার স্ত্রীর নামে ভাগ করে দেন। এরপর এনামুল হক এই ওয়ারিশদের কাছ থেকে আমার জমি কিনে নেন। এরপর ২০১২ সালে এনামুল হক এমপি হাবিবর রহমানের ছেলে আসিফ ইকবাল সনির কাছে বিক্রি করেন। এভাবেই আমার পৈতৃক সম্পত্তি সাবরেজিস্ট্রারের সহায়তায় বারবার হাতবদল হয়েছে।’

তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, যমুনা নদীভাঙনে বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে মনসুরদের পূর্বপুরুষ নিঃস্ব হয়ে যান। ১৯৪৬ সালে বগুড়ার সারিয়াকান্দির মাঝিড়া গ্রাম থেকে তার বাবা গেন্দা বেপারী শেরপুরে আসেন। ১৯৫৫ সালে শেরপুর উপজেলার ধরমোকাম এলাকায় জনৈক দিনু রায়ের ছেলে শ্যামল রায়ের কাছ থেকে শেরুয়া মৌজায় ৭২৭ দাগে ৫৮ শতক জমি কিনে বসতি শুরু করেন। ১৯৮০ সালে প্রতিবেশী মরহুম ছামসুল হক ওই জমি বর্গা নেয়ার প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে মনসুর বেপারীকে অর্ধেক ফসল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এরপর মনসুর ভারতের আজমীর শরিফে চলে যান। ১৯৮৪ সালে এলাকায় ফিরে এসে দেখেন, বর্গাচাষী ভূমিহীন মৃত ছামসুল হক তৎকালীন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি খাসজমির আওতায় ফেলে লিজ নেয়ার চেষ্টা করছেন।

নজিরবিহীন জালিয়াতি যেভাবে : শেরপুরের ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী মনসুর বেপারীই এ জমির মালিক। কিন্তু কীভাবে ব্যক্তি মালিকানা জমি বারবার বেচাকেনা হয়েছে, তার রহস্য উন্মোচনে গিয়ে পাওয়া যায় একটি সেল অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টের (ভূমিহীনকে দেয়া লিখিত নথি) দলিল। এতে দেখা যায়, ভূমিহীন হিসেবে ১৯৮৯ সালের ৯ এপ্রিল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সরকারের পক্ষে ছামসুল হককে শেরপুরের বিভিন্ন মৌজায় দুই একর ৬১ শতক জমি ২৫ বছর মেয়াদি বরাদ্দ দেন। সেল অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টে সরকার কঠিন শর্তও জুড়ে দেয়। একই সঙ্গে সরকার তাকে গৃহ নির্মাণে ৪০০ টাকা, হালচাষের জন্য গরু কিনতে ২০০ টাকাসহ মোট ৬৩০ টাকাও দেয়। এই ‘শেরুয়া মৌজায়’ ‘১২৭নং দাগে’ ছামসুল হককে ৯৬ শতক জমি (বাড়ি শ্রেণী) বরাদ্দ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ৯ পৃষ্ঠার ওই দলিলের এক জায়গায় বলা হয়, ‘২৫ বছরের আগে এ জমি বিক্রি করা যাবে না বা অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। ২৫ বছর পর জমি অন্যত্র হস্তান্তরেও সরকারের অনুমতি নিতে হবে।’ ছামসুল হককে বরাদ্দ দেয়া ২ একর ৬১ শতক জমির অবশিষ্ট অংশ অন্য মৌজা ও দাগে। কিন্তু শেরুয়া মৌজায় ‘৭২৭ দাগে’ মনসুর বেপারীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৫৮ শতকের মধ্যে ৩৬ শতক জমি ছামসুল হক জালিয়াতি করে তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে ভাগ করে দেন। এরপর থেকেই এ জমি বারবার রেজিস্ট্রি দলিলে বেচাকেনা ও জবরদখল করা হয়। এ ক্ষেত্রে একাধিক সাবরেজিস্ট্রার জমি নিবন্ধনের আইনকানুনও মানেননি। বরং প্রভাবশালী জবরদখলকারীদের সহযোগিতাই করেছেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর ধুনট উপজেলার সরু গ্রামের কানাডা প্রবাসী এনামুল হক ও তার স্ত্রী প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের জমি ২৭ লাখ টাকায় এমপিপুত্র আসিফ ইকবাল সনির কাছে বিক্রি করে দেন।

১২৭ দাগই নেই : সেল অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টে উল্লিখিত শেরুয়া মৌজার ১২৭নং দাগের অনুসন্ধান করা হয়। মির্জাপুর তহশিল অফিসের রেকর্ডপত্র তল্লাশি করে ভূমি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম তোতা বলেন, ১৯৮৯ সালে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ভূমিহীন হিসেবে ছামসুল হককে শেরুয়া মৌজায় যে ৯৬ শতক জমি বরাদ্দের কথা উল্লেখ করেন তার কোনো অস্তিত্বই নেই। অর্থাৎ শেরুয়া মৌজার ১০০ জেএলস্থিত ১নং খতিয়ানে জমির ওই দাগই নেই। অন্য খতিয়ানে ১২৭ দাগের উল্লেখ থাকলেও ওই জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। যা লিজের আওতাভুক্ত নয়। রহস্যজনক এ দাগের বিষয়টি উল্লেখ করে সেল অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টের আওতাভুক্ত করার বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয় তৎকালীন বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সঙ্গে। কিন্তু তিনি অনেক আগেই চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। ওই কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী আতাউর রহমান বলেন, ’৮৯ সালে মোশাররফ হোসাইন দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বেঁচে আছেন কিনা আমি জানি না। তিনি বলেন, ‘আসলে অনেক আগের সেল অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টের নথি খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। তবে জমির দাগ ভুল হয়ে থাকলে তৎকালীন কর্মকর্তাই দায়ী। তবে সরকারি খাস খতিয়ানের এ জমি বিক্রি করা যায় না।’

২০১২ সালে আসিফ ইকবাল সনির নামে জমিটি রেজিস্ট্রির সময় শেরপুরের সাবরেজিস্ট্রার ছিলেন জহুরুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে জয়পুরহাট সদরে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়, সেল অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টে ভুল দাগ-খতিয়ান এবং শর্তভঙ্গ করে ২০১২ সালে এমপিপুত্র আসিফ ইকবাল সনির নামে জমিটি কীভাবে রেজিস্ট্রি হল। জবাবে জহুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘এত আগের দলিলের বিষয়ে আমার মনে নেই।’ দলিল রেজিস্ট্রির সময় আইনানুযায়ী ‘সম্পত্তি মালিকানার গত ২৫ বছরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনার রেকর্ডপত্র যাচাই করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে রেকর্ডপত্র বানিয়ে নিয়ে এলে আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।’

এ বিষয়ে নিবন্ধন পরিদফতরের মহাপরিদর্শক (জেলা ও দায়রা জজ) খান আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কীভাবে ভূমিহীনের নামে একাধিকবার রেজিস্ট্রি হয়েছে তা তিনি তদন্ত করে দেখবেন।

অভিযোগের বিষয়ে মরহুম ছামসুল হকের মেয়ে শাহানাজ পারভীন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার বাবা পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ৭২৭ দাগে এ জমি লিজ পেয়েছিলেন। এ দাগে আমরা ৩৬ শতক জমি ভোগদখল করছিলাম। বাকি জমি বিভিন্নজন দখল করেছে। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সূত্রে আমরা তিন বোন ও এক ভাই এই ৩৬ শতক জমি ’৯৮ সালে ১৫ হাজার টাকা শতক দরে কানাডা প্রবাসী এনামুল হক ও মফিজ নামের দুই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করি। মফিজ পরে তার অংশ এনামুলের কাছে বিক্রি করেন।’ অন্যের মালিকানা জমি কীভাবে বিক্রি করে দিলেন- জানতে চাইলে শাহনাজ বলেন, ‘বাবার লিজের দলিল (সেল অ্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্ট) দিয়েই আমরা বিক্রি করেছি। তখন কেউই তো কোনো বাধা দেয়নি। এই ৩৬ শতক জমি এনামুল হকের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে এমপির ছেলে সনি এ জমি কিনে ভোগদখল করছেন।’

এমপিপুত্র সনির কাছে জমিটি বিক্রিকারী ধুনটের সরু গ্রামের এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে বসবাস করায় তা সম্ভব হয়নি। তার বড় ভাই শাহাদত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘এনামুল হক সম্প্রতি কানাডা থেকে অন্য দেশে বদলি হয়েছেন। যে কারণে তার নম্বর আমরা এখনও পাইনি।’ মনসুর আলীর জমি এনামুল হক কীভাবে কিনেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রিফিউজিদের কাছ থেকে এই জমিটা কেনা হয়। ওই দাগে মনসুরের কোনো জমি নেই। বরং মনসুর আমাদের অনেক হয়রানি করেছেন। তিনি মামলা করে বারবার হেরে গেছেন।’

পুলিশ দিয়ে উচ্ছেদ : জমির রেকর্ডপত্র সংশোধন করতে অসহায় মনসুরকে পুলিশ দিয়ে উচ্ছেদও করা হয়। এ বিষয়ে মনসুর বলেন, ‘আমি জমিতে গেলে হাত ভেঙে দেয়ার হুমকি দেন এমপির ছেলে। থানায় ডেকে নিয়ে তৎকালীন ওসি মিজানুর রহমান আমাকে বলেন, এমপির জায়গায় তুমি ঘর তুললে কেন? এরপর পুলিশ ওই জায়গা থেকে ঘর ভেঙে ও গাছ তুলে নিতে চাপ দেয়। বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কারণ ছিল সেটেলমেন্ট জরিপে সনির নামে দাগ-খতিয়ান ঠিক করে নেয়া। তিনি আমাকে উচ্ছেদ করে সেটেলমেন্ট জরিপকারীদের দেখিয়েছেন তিনি জমিতে ভোগদখল করছেন। জরিপ কর্মকর্তারাও নির্দয়ভাবে আমার আপিল খারিজ করে এমপির ছেলের নামে রেকর্ড সংশোধন করে দেন। এরপর পাশের দহপাড়া গ্রামে এসে আড়াই শতক জমি কিনে ঘর তুলি।’ মনসুর বলেন, ‘এর কিছুদিন পর এমপি হাবিবর রহমানের ছেলের লোকজন তার দুবলাগাড়ির বাসার পাশে কোল্ডস্টোরেজে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে এমপির ভাই অ্যাডভোকেট তোজাম্মেল হক দু’পক্ষের কাগজপত্র দেখে এমপির ছেলে সনিকে বলেন, এ সম্পত্তি তুমি পাবে না। তুমি যে দলিল করেছ সেটার দাগ ১২৭। আর মনসুরের দাগ ৭২৭। তখন তোজাম্মেল হক দরবেশকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে জমিটি দলিল করে দেয়ার প্রস্তাব দেন। এর জবাবে আমি তোজাম্মেলকে বলি, প্রতি শতক জমির দাম ৬ লাখ টাকা হিসাবে ৫৮ শতকের মূল্য সাড়ে তিন কোটি টাকা হয়। আমাকে ৫০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু তারা ৬ লাখের বেশি দিতে রাজি হয়নি।’ এ বিষয়ে এমপি হাবিবর রহমানের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট তোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি।’ এর বেশি কথা বলতে তিনি রাজি হননি।

মনসুর বেপারীকে উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর সদর থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) বর্তমানে নওগাঁ পুলিশ লাইনে নিয়োজিত ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘মনসুরের বিষয়টি আমি জানতাম। তবে তাকে উচ্ছেদের সময় এলাকায় ছিলাম না।’

মনসুর দরবেশের স্ত্রী মমতা বেগম যুগান্তরকে বলেন, ‘একদিন মানুষ আমাদের বাড়িতে কাজ করত। কিন্তু এখন আমিই অন্যের চাতালে ধান শুকানোর কাজ করে স্বামী ও দুই মেয়ের মুখে অন্ন তুলে দেয়ার দায়িত্ব পালন করছি। এমপিপুত্রের দখল থেকে জমি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।’

http://www.jugantor.com/first-page/2017/03/06/106502