৬ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৪:৩৬

বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটছে না

জানুয়ারিতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ

আগামী জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু জানুয়ারি শেষে তা অর্জিত হয়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এবারও বেসরকারি খাতের ঋণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছরের জুনে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে এসে তা নেমে আসে ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি অনুযায়ী বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন না হওয়ায় আগামী জুনের জন্য মুদ্রানীতিতে তা লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সাড়ে ১৬ শতাংশ করা হয়। কিন্তু জানুয়ারিতে তা কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। এটা স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি নয় বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। মূলধনি যন্ত্রপাতিও আমদানি করে শিল্প স্থাপন করেছেন। কিন্তু গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় তারা চালু করতে পারছে না। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। এতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা না পাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তহবিলও বেড়েছে।

এ দিকে, সরকার তার বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহে ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ ঋণ নেবে তার একটি আগাম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহেই সরকারের ঋণ জোগানের জন্য ব্যাংকগুলোর জন্য নিলামের আয়োজন করে। কিন্তু দেড় বছর ধরে সরকারও ব্যাংক থেকে কাক্সিক্ষত হারে ঋণ নিচ্ছে না, বরং সঞ্চয়পত্র থেকে উচ্চ হারে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের কম সুদের ঋণ পরিশোধ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত জানুয়ারি মাসে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে সরকার কোনো ঋণ নেয়নি, বরং অতিরিক্ত ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ পরিশোধ করেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক দিকে ঋণ দেয়ার মতো নতুন উদ্যোক্তা পাওয়া যাচ্ছে না, পাশাপাশি সরকার ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করায় ব্যাংকগুলোর অলস অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়। কারণ, ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ আমানত গ্রহণ করছে তা বিনিয়োগ করতে না পারায় তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে এখন আমানত সংগ্রহে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে। আমানতের সুদহার কমতে কমতে এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।

দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এক দিকে সরকার ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে, অপর দিকে ভালো উদ্যোক্তা না পাওয়ায় তাদের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল বেড়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলো এখন বিকল্প দিকে ঝুঁকে পড়েছে। অর্থাৎ অনেকেই এখন ভোক্তাঋণসহ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করছে। এসব ঋণ জামানতবিহীন হওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বিকল্প খাতে ঋণ দেয়ায় ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ সামান্য বেড়েছে। তবে এটা স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি নয়। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে হবে। তা না হলে এবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/201224