রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে পানির জন্য হাহাকার। দোলাইরপার থেকে তোলা ছবি
৬ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৪:৩৩

ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ

রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে পানির নতুন লাইন স্থাপন করলেও শুষ্ক মওসুমের শুরুতেই বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তাতে দুর্গন্ধ। অনেক সময় কালো ও লালচে রঙের পানি আসে। ফোটালেও পানির দুর্গন্ধ যেতে চাই না, ফেনা হয়। হাত-মুখ ধুলে চোখ জ্বলতে থাকে। বাইরে থেকে বোতলজাত পানি কিনে খেতে হচ্ছে। আর যারা বেশি টাকা দিয়ে কিনতে পারছেন না তাদের এ নোংরা পানি খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানা অসুখে ভুগতে হচ্ছে।

ঢাকা ওয়াসার জনতথ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে রাজধানীতে ওয়াসার প্রায় চার লাখ গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন ২৩০ থেকে ২৩৫ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। তবে ওয়াসার সক্ষমতা রয়েছে আরো বেশি। ওয়াসা বর্তমানে ২৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করতে পারে। তবে ওয়াসার সিস্টেম লস রয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

জানা যায়, সম্প্রতি প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে নতুন পানির লাইন স্থাপন করেছে ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু এর পরও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলছে না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, ওয়াসার লাইনে যে পানি আসে তাতে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ পানি পান করে শিশুরা নানা রকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

মগবাজার নয়াটোলার বাসিন্দা নিজাম উদ্দীন বলেন, এক মাস ধরে নয়াটোলা এলাকায় ওয়াসার পানিতে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পানির রঙ কখনো লালচে আবার কখনো কালো। এ পানি খাওয়া তো দূরের কথা, গোসল ও কাপড় পরিষ্কার করলেও তাতে দুর্গন্ধ থেকে যায়। এ পানি ব্যবহার করায় শিশুরা ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে অনেকে জার পানি কিনে খাচ্ছেন। এ জন্য প্রতি মাসে ২০০-৩০০ টাকা বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিষয়টি ওয়াসার কর্মকর্তাদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, শীতলক্ষ্যার পানি শোধন করে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এখন পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বেশি ওষুধ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ কারণে দুর্গন্ধ হচ্ছে। বৃষ্টি হলে দুর্গন্ধ কমে যাবে।

মীরবাগের বাসিন্দা আজিজুর রহমান কাজল বলেন, দেড় মাস ধরেই মীরবাগ ও মধুবাগ এলাকার পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মধুবাগের ওয়াসার পানির পাম্প বন্ধ থাকায় সেখান থেকেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সরবরাহ করা জার পানি কিনে খাওয়া, রান্না ও গোসলের কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ওয়াসা অফিসে গিয়ে অভিযোগ (নম্বর ৩১৩) দিয়ে আসার পরও কোনো সুরাহা হয়নি। এলাকার হাজার হাজার মানুষকে দিনের পর দিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দোলাইরপাড়ের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল বাপ্পী বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে ওয়াসার পানি খাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দুর্গন্ধ। এ পানি খাওয়া তো যায়ই না, গোসল করলেও শরীর চুলকায়। ছেলেমেয়েদের গায়ে ফোসকা পড়ে গেছে।

কে এম দাস লেনের ২৬ নম্বর বাসার মালিক আশিক ইলাহি বলেন, পানিতে দুর্গন্ধের কারণে ছয়তলা ভবনের অনেকেরই ডায়রিয়া হয়েছে। আমি নিজেও পেটের পীড়ায় ভুগছি। এলাকার আরো অনেকেই জানিয়েছেন তাদের বাসার পানিতেও দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে নানা রকম পেটের পীড়ায় ভুগছেন এলাকাবাসী।

মানিকনগর, মুগদা, বাসাবো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এলাকাবাসী ওয়াসার পাম্পে ভোর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিচ্ছেন। বাসাবো কদমতলা সংসদ পানির পাম্পে আসা আবদুর রহিম বলেন, বাসায় সরবরাহ করা পানি কালো ও দুর্গন্ধ। খাওয়া, রান্না কিছুই করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পাম্পে এসে পানি নিতে হচ্ছে। সকাল ৬টায় এসেছি। দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু এখনো পানি নিতে পারিনি। গৃহবধূ রোমেচা খাতুন বলেন, আগে দু’টি লাইনে পানি পাওয়া যেত কিন্তু এখন পাম্পের বাইরে একটি মাত্র লাইনে পানি দেয়া হচ্ছে, এ কারণে সব সময়ই দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। আবার অনেকে পাম্প থেকে জারে করে পানি নিয়ে বাসাবাড়িতেও বিক্রি করে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসীম এ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। শীতলক্ষ্যার পানিতে দুর্গন্ধ হওয়ায় লাইনের পানিতে দুর্গন্ধ হচ্ছে এমন তথ্য সঠিক নয়। অনেক সময় দেখা যায়, পানির ট্যাংকি দীর্ঘ দিন পরিষ্কার করা হয় না, এ কারণেও দুর্গন্ধ হতে পারে। তিনি বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা সেই বাসার লাইন, পানির ট্যাংকি পরীক্ষা করে দেখে থাকি। এ জন্য কোনো অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি ওয়াসাকে জানানোর অনুরোধ জানান।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/201226