শুধু ইয়েমেনেই অনাহারে, অপুষ্টিতে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার শিশু :ইন্টারনেট
৬ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ৪:০৭

বিশ্বে দুর্ভিক্ষের মুখে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ

বিশ্বে চরম অপুষ্টির শিকার ১০ কোটিরও বেশি মানুষ অনাহারে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) জরুরি বিভাগের পরিচালক ডমিনিক বারগুইন বলেছেন, ‘মানবিক সাহায্য পাশাপাশি কৃষকদের কাছে আরো বেশি সহায়তা প্রদান না করলে মানুষের চরম দুর্ভোগ আরো দীর্ঘায়িত হবে এবং লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাবে।

সর্বশেষ প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর ১০ কোটি ২০টি মানুষ দারিদ্র্যের প্রান্তসীমানায় অবস্থান করছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। ২০১৫ সালে দারিদ্র্যের কিনারায় অবস্থানকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি। এই মানবিক বিপর্যয়ের শিকার দেশগুলো হলো ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়া। এসব দেশে সংঘর্ষ ও প্রচণ্ড খরায় খাদ্য উৎপাদন সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে এসেছে।

থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের সাথে সাক্ষাৎকারে বারগুইন বলেন, ‘মানবিক সহায়তা অনেক মানুষকে প্রাণে বাঁচিয়ে রেখেছে তবে সেখানকার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ বাড়ানো এবং কৃষি ফসল উৎপাদন করে নিজেরাই যেন নিজেদের সমস্যা হ্রাস করতে পারে সে দিক লক্ষ রেখে এসব দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিমান দিয়ে আসি এবং তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি। তবে আমরা তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করি না।’ তিনি বলেন, ‘দুর্ভিক্ষ থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি এবং তাদের গিরি খাতে পতিত করছি।’

সোমালিয়ায় প্রচণ্ড খরা
ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে আফ্রিকার দরিদ্র দেশ সোমালিয়া। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অংশই এ দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে বলে মনে করছে জাতিসঙ্ঘ। তীব্র ক্ষুধা ও ব্যাপক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কলেরার প্রকোপে মাত্র দুই দিনেই মারা গেছেন অন্তত ১১০ জন। ধীরে ধীরে গভীর সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

স্থানীয় সময় শনিবার দুর্ভিক্ষ মোকাবেলাবিষয়ক জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এক বিবৃতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান আলি হাইরি জানান, পুরো দেশের মানুষ তীব্র খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে। সবচেয়ে কঠিন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। এ অঞ্চলে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্ষুধা ও কলেরার প্রকোপে তাদের মৃত্যু হয়। দেশটির কৃষক ও তাদের পোষা প্রাণীর জন্য এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি। দীর্ঘ দিন থেকেই দেশটিতে তীব্র খরা চলছে।

এর আগে খরায় সোমালিয়ায় জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহি ফারমাজো। মৃতের বেশির ভাগই দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম উপসাগরের তীরবর্তী গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। সেখানে খরার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। বাংলাদেশের মৃতের সংখ্যা যোগ করলে এ সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তীব্র খরায় ক্ষুধা ও পানিশূন্যতায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মরছে অসংখ্য মানুষ এবং গৃহপালিত পশু। খাবার ও পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করা মানুষের নিদারুণ কষ্টের কথা দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছে দুর্যোগ মোকাবেলা কমিটি।

জাতিসঙ্ঘের ধারণা, পুরো মাত্রার একটি দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় থাকা সোমালিয়ায় ৫০ লাখ মানুষের সাহায্য প্রয়োজন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে খাদ্য সহায়তার আশায় অনেকে রাজধানী মোগাদিসুর দিকে ছুটছেন। খাবারের খোঁজে একটি ফিডিং সেন্টারে জড়ো হয়েছেন বাস্তুচ্যুত হওয়া সাত হাজারেরও বেশি মানুষ।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিশুদের অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। সংস্থাটির ফেমিন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমস নেটওয়ার্ক বলছে, সোমালিয়ায় ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে প্রায় তিন লাখ ৬৩ হাজার শিশু। এর মধ্যে মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে ৭১ হাজার। এই শিশুদের দ্রুত চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

সোমালিয়া সরকার বলছে, ব্যাপক ক্ষুধার কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সন্ত্রাসী তৎপরতার মতো ঘটনা ঘটছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় চার দেশের জন্য ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা চেয়েছিলেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব। এ দেশগুলোর মধ্যে সোমালিয়ার নাম ছিল। ওই তালিকায় থাকা বাকি দেশগুলো হচ্ছে, নাইজেরিয়া, সাউথ সুদান ও ইয়েমেন।

সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/201130