৫ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১:৪৫

মাতারবাড়ি বিদ্যুত্ কেন্দ্র নিয়ে নয়া জটিলতা!

ধীরগতি পিছু ছাড়ছে না দেশের অন্যতম বড় বিদ্যুত্ প্রকল্প মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্রের। প্রকল্পের স্থান নির্ধারণে বিলম্ব, হলি আর্টিজানে হামলার পর বিশেষজ্ঞদের দেশত্যাগ ও অনীহার পর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিতে কয়েক দফা সময়ক্ষেপন করেছে। এবার দরপত্র জমাদানকারী কোম্পানি আর্থিক সংকটের মুখে পড়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নতুন করে ধীরগতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুত্ বিভাগ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে এই বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ (সিপিজিসিবিএল)। প্রকল্পে সিংহভাগ অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস পর গত ৩১ জানুয়ারি এটি নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে জাপানের কোম্পানি মারুবেনি এবং তশিবা-সুমিতমো কনসোর্টিয়াম। প্রাক যাচাইয়ের মাধ্যমে এ দুই কোম্পানির দরপত্র জমা নেওয়ার পর তাদের প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করেছে সিপিজিসিবিএল’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

তবে দরপত্র যাচাই কমিটি সূত্র জানায়, প্রস্তাব জমা দেওয়া দুটি কোম্পানিরই বেশ কিছু অযোগ্যতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির ৪৯৯.৯ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন লোকসানের কথা উল্লেখ রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকেই কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। কোম্পানিটি পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০১৭ সালেও তাদের লোকসানের পরিমাণ ৩৯০ বিলিয়ন ইয়েন হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুত্ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, দরপ্রস্তাব যাচাই বাছাইয়ের সময় কোম্পানির আর্থিক সচ্ছলতা বিশেষ করে চলতি বছর ও প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন বছরগুলোতে লাভজনক আছে কি না তা বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তা না হলে প্রকল্পে ধীরগতির শঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু দাতা সংস্থা যে দরদাতার প্রস্তাব নির্বাচিত করতে বলছে, তারা লোকসানে রয়েছে। এখন উভয় সংকটে পড়েছেন তারা। তবে জাইকা যেহেতু প্রকল্প খরচের সিংহভাগ দিবে তাই ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

সিপিজিসিবিএল সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দিবে ২৯ হাজার কোটি টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে। অবশিষ্ট দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা কেন্দ্রটির মালিক ও বাস্তবায়নকারী কোম্পানি সিপিজিসিবিএল দিবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিপিজিসিবিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, বিদ্যুেকন্দ্রটি নির্মাণ নিয়ে আমরা কোনো আপস করবো না। যে কোম্পানি সার্বিকভাবে উপযুক্ত হবে তাদেরকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।

জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় ১৫ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৪ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, মূল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কারিগরি কাজ, পূর্ত কর্ম, কেন্দ্র এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ, স্থায়ী টাউনশিপ নির্মাণ ও ফ্লু গ্যাস ডি-সালফারাইজেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া কয়লা পরিবহন ব্যবস্থা, কয়লা খালাসের জন্য পৃথক জেটি নির্মাণ, কয়লা মজুতের জন্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের কথা রয়েছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া অন্য কাজগুলোতে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি নেই।

সিপিজিসিবিএল’র এক কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের মধ্যে বিদ্যুেকন্দ্রটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালে গৃহীত প্রকল্পটির অগ্রগতি এখনও দুই শতাংশও হয়নি। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় জাপানি নাগরিক নিহতের পর বিভিন্ন জাপানি কোম্পানি ও প্রকৌশলীরা এ দেশে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত আপত্তি জানায়। পরে সরকার তাদেরকে নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপরও তারা দরপ্রস্তাব জমা দেওয়ার সময়সীমা কয়েক দফায় বাড়িয়ে নেয়।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2017/03/05/180190.html