রংপুরে পার্কের মোড়ে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদা না পেয়ে ভাঙচুর করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পুরো পার্কের মোড় এলাকা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দেশি অস্ত্র হাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে
৫ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১:৪৩

রংপুরে চাঁদা না পেয়ে খাবার দোকানে তাণ্ডব ছাত্রলীগের!

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্কের মোড়ে রিফা ফাস্ট ফুড অ্যান্ড কনফেকশনারিতে তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চারটি ফ্রিজসহ মালামাল ভাঙচুর ও লুট করেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে মামলার কথা শুনে বিকেলে আবারও ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের দাবি করা এক লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মেহেদীর সহযোগী ওই সংগঠনের কর্মীরাই এ হামলা ও লুটপাটে অংশ নেয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা নগরের পার্কের মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দোকানপাট বন্ধ করে ধর্মঘটও করেছে তারা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গতকাল শনিবার সকালে ছাত্রলীগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির তাঁর দলবল নিয়ে রিফা ফাস্ট ফুড অ্যান্ড কনফেকশনারিতে গিয়ে মালিক মাজেদুল ইসলামের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করার কিছুক্ষণ পর সকাল ১০টার দিকে শিশিরের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কনফেকশনারিতে হামলা চালিয়ে চারটি ফ্রিজসহ দোকানের মালামাল ভাঙচুর করে। এ সময় তারা নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মাল লুট করে নিয়ে যায়।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পার্ক মোড়ের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে রংপুর-কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির পুলিশ এসে ব্যবসায়ীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

কিন্তু বিকেল ৫টার পর পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মামলার খবর শুনে মেহেদী হাসান শিশিরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ব্যবসায়ীরাও পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্যদিকে পার্কের মোড়ের সাত-আটটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ব্যাপারে রিফা ফাস্ট ফুড অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক ও পার্কের মোড় ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক মাজেদুল ইসলাম জানান, ছাত্রলীগ সভাপতি শিশির এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি দলবল নিয়ে দোকানে তাণ্ডব চালিয়েছেন। এতে তাঁর প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিশিরের অব্যাহত চাঁদাবাজিতে পার্কের মোড়ের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বারবার অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। ’

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) এরশাদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কনফেকশনারিতে হামলার কথা স্বীকার করেন। জরুরি প্রয়োজনে তিনি রংপুরের বাইরে আছেন জানিয়ে এএসআই শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দেন। কিন্তু বারবার ফোন করা হলেও শাহীন তাঁর ফোন রিসিভ করেননি।

মেহেদী হাসান শিশির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। শুনেছি ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে একজন সাধারণ ছাত্রের কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এখানে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই। ’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন জানান, সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।

এ ব্যাপারে মেহেদী হাসান শিশিরের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনকে আসামি করে গতকাল বিকেলে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মাজেদুল ইসলাম।

কোতোয়ালি থানার ওসি এ বি এম জাহিদুল ইসলাম দোকান ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/03/05/470721