৫ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১:৩২

১১শ’ কোটি টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে

সৌর প্যানেল আমদানির বিরূপ প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে সম্ভাবনাময় এ খাত

সৌর প্যানেল আমদানি বন্ধের জোড়ালো দাবি উঠেছে। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ সোলার প্যানেল উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে বিদ্যমান দেশীয় কোম্পানিগুলোর। এরপরও বিদেশ থেকে নিম্নমানের প্যানেল আমদানি কেন করা হচ্ছেÑ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। জানা গেছে, অবিলম্বে বিদেশী প্যানেল আমদানি বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে সম্ভাবনাময় এ খাতটি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সূত্র মতে, সৌর প্যানেল আমদানির কারণে বর্তমানে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

এ খাতের বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশের শহরে ও গ্রামে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখনও সে সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। তারা মনে করেন, সরকারের উচিত সুষ্ঠু নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এ খাতকে এগিয়ে নেয়া। সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে বছরে সৌর প্যানেলের চাহিদা ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে প্রায় ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে দেশীয় ৯টি প্রতিষ্ঠানের।
বর্তমানে এই শিল্পটি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- আর্থিক দূরাবস্থা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা আর্থিকপ্রণোদনা, আমদানিকৃত প্যানেলের উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ, নতুন গ্রাহক তৈরি করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাজার বৃদ্ধি, কর-শুল্ক মওকুফ এবং ভর্তুকির বিষয়টি সরকারকে বিবেচনার দাবি জানিয়ে আসছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সৌরবিদ্যুতের বিপুল চাহিদা থাকলেও সে অনুপাতে বাজার বা ভোক্তা তৈরি হয়নি। অনেকদেশ এক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। আমরা পেছনে পড়ে রয়েছি। জনগণও এখনও মনে করে এ বিদ্যুৎ ব্যয়বহুল। এ বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে। নতুন গ্রাহক তৈরি করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাজার বড় করতে হবে। তিনি বলেন, এটা ঠিক যে, কর-শুল্ক মওকুফ বা ভর্তুকির বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের আগে এগিয়ে আসতে হবে।

নসরুল হামিদ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশের জন্য মিরসরাই ও গাইবান্ধায় ২০০০ একর জমি নিয়ে সোলার পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। গ্রীডও নির্মাণ করবে সরকার। সেখানে বেসরকারি উদ্যোক্তারা সহজেই বিনিয়োগ করতে পারবেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান জোদ্দার বলেন, প্রত্যন্ত ও গ্রীডবিদ্যুৎহীন এলাকায় বিদ্যুৎসেবা স¤প্রসারণে সৌরবিদ্যুৎ সবচেয়ে ভালো ও উপযোগী মাধ্যম। সৌরবিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে একদিকে আরো প্রাযুক্তিক উন্নয়ন দরকার; অন্যদিকে আর্থিক প্রণোদনাসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করারও প্রয়োজন রয়েছে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক পৃথক গ্রিন ফান্ড তৈরি করেছে। ব্যাংকগুলোকে গ্রিন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আর ইডকল’র প্রধান নির্বাহী মাহমুদ মালিক বলেন, সোলার হোম সিস্টেমে বাংলাদেশ দারুণ সাফল্য পেয়েছে। এরপরও আমাদের ব্যবহৃত জ্বালানির সামান্যই নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদিত। ২০২১ সালের মধ্যে জ্বালানি মিশ্রণে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থাকবে। তখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে সিংহভাগই হবে সৌরবিদ্যুৎ।

একইভাবে সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র সভাপতি মনোয়ার মেজবাহ মঈন বলেন, সরকারের গৃহিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সাল নাগাদ আরও ৩০ লাখ পরিবারকে সৌর বিদ্যুৎ দেয়ার কথা। সৌর প্যানেলের আমদানি বন্ধ না হলে সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাবে। দেশে বর্তমানে বছরে সৌর প্যানেলের চাহিদা ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে প্রায় ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে দেশীয় ৯টি প্রতিষ্ঠানের।

মনোয়ার মেজবাহ মঈন আরও বলেন, সৌর প্যানেলের চাহিদার পুরোটাই যোগান দেয়ার সক্ষমতা দেশীয় উৎপাদনকারীদের রয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত প্যানেলের অসম মূল্যের প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের সম্ভাবনাময় এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে আমদানিকৃত প্যানেলের উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

https://www.dailyinqilab.com/article/67774