৫ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১:১৩

গাবতলীতে পুলিশের ওপর হামলা আগুন

আসামিরা ঘুরছে প্রকাশ্যে পুলিশ বলছে পলাতক

‘আমি পালাব কেন? আমরা তো পালানোর কাজ করিনি’

পরিবহন ধর্মঘটের নামে রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশের ওপর হামলা, ট্রাফিক বক্সে আগুন ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মূল আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে, অফিস করছে। এরপরও পুলিশ বলছে তারা পলাতক। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় দারুস সালাম থানায় করা পাঁচ মামলায় নতুন করে কেউ গ্রেফতার হয়নি। এজাহারভুক্ত অধিকাংশ আসামি আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে এক দিনের রিমান্ড শেষে সাত আসামিকে আদালতে নেয়া হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।

দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জোবায়ের হোসেন যুগান্তরকে জানান, ‘আসামিরা রিমান্ডে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম বলেছে। যাদের নির্দেশে তারা পুলিশের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে নামগুলো বলা যাচ্ছে না।’ এজাহারে উল্লেখ করা প্রধান আসামিসহ অন্যদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এজাহারভুক্ত অধিকাংশ আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।’

স্থানীয় ও সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা হামলায় অংশ নিয়েছিল তাদের অধিকাংশই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর প্রধান আসামিসহ শ্রমিক সংগঠনের নেতারা প্রতিদিন অফিস করছেন।

পাঁচ মামলার চারটিতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে আন্তঃজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজকে। শনিবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি একটা সংগঠনের সভাপতি। আমি পালাব কেন? আর আমরা তো পালানোর কাজ করিনি।’

দারুস সালম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘যারা হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যাদের নির্দেশে হামলা হয়েছে, মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেকে হামলায় জড়িত ছিল। তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’ ওসি বলেন, ‘হামলার ইন্ধনদাতারা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

পুলিশ জানায়, ধর্মঘটের নামে গত মঙ্গল ও বুধবার গাবতলীতে পরিবহন শ্রমিকরা তাণ্ডব চালায়। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশের জনজীবনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে ধর্মঘটের নামে শ্রমিকরা গাবতলীতে ব্যাপক ভাংচুর চালান ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। শ্রমিকরা পুলিশ বক্স ও র‌্যাকারে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাধা দিতে গেলে এ সময় এক পুলিশ সার্জেন্টকে মারধর করে তার মোটরসাইকেলটিও পুড়িয়ে দেন শ্রমিকরা। এসব ঘটনায় বুধবার রাতে তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি মামলার বাদী মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ে ১১ নম্বর রোডের বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগম। বাকি দুটির পুলিশ। এ ঘটনায় পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা করে। পুলিশের করা মামলাগুলো রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) এবং পেনাল কোডের ১০৯, ১৪৮, ১৪৯, ৩০৭, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৫৩, ৪৩৫ ও ৪২৭ ধারায়।

এর মধ্যে মহাসড়কে যান চলাচলে বাধা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের কর্তব্যে বাধা দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় সাত পরিবহন শ্রমিককে এক দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে শনিবার তাদের ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হয়। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। বিপরীতে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী শামসুজ্জোহা। শুনানি শেষে বিচারক মো. খুরশীদ আলম তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই সাতজন হলেন : রফিকুল ইসলাম, হাসানুর, রবিন, মো. সোহেল, ফজলে রাব্বী, আলামিন ও এনামুল হক।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরের মৃত্যুর জন্য দায়ী বাসচালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে গত সপ্তাহে মানিকগঞ্জের আদালত রায় দেন। এর পর থেকে চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণের ১০ জেলায় ধর্মঘট শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এরপর সাভারে এক নারীর ওপর ট্রাক তুলে দিয়ে হত্যার অপরাধে আরেক চালকের মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়। এসব নিয়ে মঙ্গলবার দেশজুড়ে যানবাহন চালানো বন্ধ করে দেন পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাবতলীতে মঙ্গল ও বুধবার পুলিশের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মারা যান শাহিনুর আলম নামে এক বাসচালক। নানা চাপ ও সমালোচনার মুখে বুধবার বিনা শর্তে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/03/05/106196