ব্যবসায়ী-ছাত্রলীগ সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় গেটে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ
৫ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১:১১

রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্র

ছাত্রলীগ-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ

পুলিশ সাংবাদিকসহ আহত ৪০ * বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত, সভাপতিসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা

রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যায় ওই সংঘর্ষে আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্রসহ প্রায় ৪০ জন আহত হন। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা গুরুতর।

সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে প্রায় ৪ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।

জানা গেছে, সকালে চাঁদার এক লাখ টাকা না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পার্কের মোড়ের রিফা ফাস্টফুড অ্যান্ড কনফেকশনারিতে ভাংচুর চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দুটি দোকানে আগুন দেয়া হয় এবং বেশকিছু গাড়ি ভাংচুর করা হয়। সংঘর্ষের কারণে রংপুর-কুড়িগ্রাম ও রংপুর-লালমনিরহাট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির তার দল নিয়ে রিফা ফাস্ট ফুড অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক মাজেদুল ইসলাম লাভলুর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করার কিছুক্ষণ পর শিশিরের নেতৃত্বে ১৫-২০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ওই কনফেকশনারিতে হামলা চালিয়ে ৪টি ফ্রিজ ও কয়েকটি র‌্যাক ভাংচুর করে। এ সময় তারা নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

জানা যায়, দোকান ভাংচুরের প্রতিবাদে পার্কের মোড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যা ৬টায় সমাবেশ করে। ওই সমাবেশ থেকে হঠাৎ করে একদল যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে হামলা করে। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাসহ সাধারণ ছাত্ররা সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় ঢাকা-রংপুর-কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে। এতে রাত ৯টা পর্যন্ত ওই পথে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় গেটসহ আশপাশ এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনার খবর সংগ্রহ আর ছবি তুলতে গিয়ে দৈনিক যুগান্তরের ফটো সাংবাদিক উদয় চন্দ্র বর্মণসহ ৫ সাংবাদিক আহত হন। এছাড়া পুলিশের এসআই সাইফুল ইসলাম, এসআই তারেক রহমান, ব্যবসায়ী সোহাগ, মজিবর, শামছুল ইসলাম, নয়ন, ওয়াহেদ, ফারুক , সোহাগ, নওসিন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করলেও নীরব ভূমিকা পালন করে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছে।

সকালের ঘটনায় দুপুরে বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে শনিবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন মাজেদুল ইসলাম লাবলু।

এ ব্যাপারে রিফা ফাস্ট ফুড অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক ও পার্কের মোড় ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক মাজেদুল ইসলাম বাবলু জানান, ছাত্রলীগ সভাপতি শিশির এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় দলবল নিয়ে দোকানে তাণ্ডব চালিয়েছে সে। এতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

বিষয়টি অস্বীকার করে বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি শিশির বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। ব্যবসায়ীর সঙ্গে একজন সাধারণ ছাত্রের কথাকাটাকাটির জের ধরে ওই ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এখানে ছাত্রলীগের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।

কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম জাহিদুল ইসলাম দোকান ভাংচুরের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাংচুরের ঘটনা শুনেছি। যারাই ঘটাক না কেন, ঘটনাটা দুঃখজনক।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া আজ যে বিশৃংখল ঘটনা ঘটেছে, সেখানে যদি ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কেন্দ্র থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্র শেখর মণ্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দীন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ।