৪ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১:৪৮

ট্রাক-মালিক-শ্রমিকরা গ্রেফতার আতঙ্কে

গাবতলীতে সহিংস ঘটনায় আরো দুই মামলা, আসামি ৮শ’

পরিবহন ধর্মঘট চলাকালে রাজধানীর গাবতলীতে সহিংস ঘটনায় আরো দুটি মামলা হয়েছে। এতে ৮শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় একটি এবং পুলিশ সদস্য আহত ও পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান করার অভিযোগে অপর মামলাটি দায়ের করা হয়। এ নিয়ে পরিবহন ধর্মঘটের দুই দিনে চলা সহিংস ঘটনায় ৫টি মামলা দায়ের করা হলো। এসব মামলার কারণে গাবতলী বাস টার্মিনালে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেফতার এড়াতে বিশেষ করে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে অনেক ট্রাক গতকাল শুক্রবারও চলাচল করেনি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে দায়ের করা মামলা দুটির বাদি পুলিশ। বৈশাখী পরিবহনের নিহত চালক শাহ আলমের (শাহিনুর প্রধান) মামলায় আসামিরা অজ্ঞাত। তবে পুলিশ সদস্য আহত হবার ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে বুধবার রাতে হামলা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পথচারী আহত হওয়ার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১২শ’ জনকে। এদিকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার গ্রেফতারকৃত ৭ পরিবহন শ্রমিককে এক দিনের রিমান্ড শেষে আজ শনিবার আদালতে পাঠানো হচ্ছে।

দারুস সালাম থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিমুজ্জামান বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত নতুন করে কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। তিনি জানান, রিমান্ডে থাকা ৭ আসামি হামলা-ভাঙচুরের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের নির্দেশে তারা হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে জানিয়েছে।

নতুন দুই মামলার ব্যাপারে ওসি বলেন, চালক শাহ আলমের পরিবারে কোনো সদস্য না পাওয়ায় পুলিশকে বাদি হতে হয়েছে। আর পুলিশ সদস্যদের আহত ও পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় রফিকুল ইসলাম বকুল, আবু মিয়া, হাবিবুল্লাহ, নাসির, ওবায়দুল্লাহ, সফিক, ফারুক, মিলন, হাবিব শিকদারসহ অজ্ঞাত ৮শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের পরিচয় সম্পর্কে তিনি বলেন, এদের অধিকাংশই ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

ওসি আরো বলেন, মঙ্গলবার রাতে হামলা-ভাঙচুরের পর পুলিশ গোটা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখে। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই ট্রাক মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের নির্দেশে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য মারাত্মক আহত হন। হামলাকারীদের সিংহভাগই মাটি বহনকারী ট্রাকের শ্রমিক। ঘটনার পর থেকে ট্রাক মালিক সমিতি ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশ আহত ও কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) জুবায়ের আহমেদ বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। কিন্তু কাউকেই পাওয়া যায়নি। সমিতির অফিসও তালা বন্ধ ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাবতলী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির একাধিক নেতা ইত্তেফাককে বলেন, গাবতলী এলাকায় হামলার ঘটনায় মালিক সমিতির কেউ জড়িত ছিল না। বরং তারা বারবারই শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরাও বিষয়টি অবগত আছেন। অথচ তাদের কয়েকজনের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে; যা সত্যি দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তারা আরো বলেন, গ্রেফতারের ভয়ে আমরা গত দুই দিন ধরে সমিতির কার্যালয় বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। একইভাবে ট্রাক শ্রমিক সংগঠনের অফিসগুলোও বন্ধ রয়েছে।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2017/03/04/179955.html