৪ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১:৪৬

ইবিতে প্রশ্ন ফাঁসে ছাত্রলীগ যুবলীগ

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষায় এফ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত অনেকের নাম বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তদন্ত কমিটি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বলা হলেও জানা গেছে, এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। সুকৌশলে তাদের হাতে প্রশ্ন তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ইবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতিরও জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। চিহ্নিতদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পরীক্ষার সময় তাদের মোবাইল কথোপকথনও সংগ্রহ করা হয়েছে। পুরো বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সমকালের অনুসন্ধানে জানা যায়, এফ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী কৌশলে প্রশ্ন বাইরে নিয়ে আসেন। তারা ওই প্রশ্ন ক্ষমতাসীন দলের একটি চক্রের হাতে তুলে দেন। পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আওয়ামী লীগ কর্মী তবিবর রহমান তোতার বাড়িতে কথিত 'ক্যাম্প' খোলা হয়। সেখানে অর্থের বিনিময়ে ভর্তিচ্ছু প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন দেওয়া হয়। তোতা ছাড়াও ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সদর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনিচুর রহমান বিকাশ, ইবির কর্মচারী আলালসহ আরও কয়েকজন বিষয়টির সমন্বয় করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি হরিণারায়ণপুর, পূর্ব আবদালপুর, শান্তিডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকার অভিভাবকরা এ চক্রের কাছ থেকে প্রশ্ন কেনেন।

পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ ওঠার পরই আমরা প্রশ্ন ফাঁসের তদন্ত শুরু করি। কয়েকজনের ফোন রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। এ ঘটনার সঙ্গে এক সময়ের আলোচিত চরমপন্থি নেতা তবিবর রহমান তোতা, যুবলীগ নেতা আনিচুর রহমান বিকাশসহ আরও কয়েকজনের যোগসূত্র থাকার প্রমাণ মিলেছে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সাইফুল ইসলাম ও তোতার মাধ্যমে দুই লাখ টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য প্রশ্ন কেনেন শান্তিডাঙ্গার পল্লী চিকিৎসক ও বিএনপি নেতা লাল্টু। তার মেয়ে গণিত বিভাগে ভর্তি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাইফুলের সঙ্গে লাল্টুর বেশ কিছুদিন আগে বাকবিতণ্ডা হয়। ওই পল্লী চিকিৎসকের পরিবারের অভিযোগ, কয়েকদিন আগে সাদা পোশাকে একদল লোক লাল্টুকে বিত্তিপাড়া বাজার থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তবে অনেকের ধারণা, প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে লাল্টুর কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। তাই তাকে আটক করা হতে পারে।

ইবির কর্মচারী আলাউদ্দিন আলাল সমকালকে বলেন, পরীক্ষার আগের দিন তোতা ও সাইফুল আমাকে প্রশ্ন বিক্রির জন্য ভতিচ্ছু শিক্ষার্থী সংগ্রহ করতে বলেন। একজন ছাত্রী সংগ্রহ করে সাইফুরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলেন_ 'এখন আর হবে না।' দুই লাখ টাকায় চুক্তি হলেও ওই ছাত্রীর পরিবারের কাছ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। পরে তোতা আমাকে কমিশন বাবদ ১০ হাজার টাকা দেন। ওই কর্মচারী জানান, তার ওপর চাপ আসছে। সাইফুলকেও ইবি প্রশাসন সন্দেহ করছে। এ ঘটনায় তোতা, বিকাশ, মোক্তারসহ আরও কয়েকজন জড়িত।
নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে সাইফুল ইসলাম বলেন, 'তোতা ও বিকাশ জড়িত থাকতে পারে।' প্রক্টর স্যারের

সঙ্গে কথা বলার পর আবার কথা বলব বলেই তিনি ফোন রেখে দেন। একাধিকবার তোতার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। তবে বিকাশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে বলেন, 'ভর্তির সময় অনেকের সঙ্গেই ফোনে কথা হয়েছে।'
এদিকে ঘটনা তদন্তে ২৫ জানুয়ারি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এক মাসেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, তদন্তের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত_ সে বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া আগে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। যথাসময়ে মিডিয়াকে সব জানানো হবে।

প্রশ্ন পেয়ে মেধা তালিকায় শীর্ষে! :গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এফ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরের দিন ফল প্রকাশ করা হয়। অভিযোগ ওঠে, প্রথম দশের মধ্যে চারজনই প্রশ্ন পেয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছেন। সমকালের অনুসন্ধানে এর প্রমাণও মেলে। অভিযুক্তরা হলেন_ তিথি খাতুন (মেধাক্রম দ্বিতীয়), শিলন হোসেন (তৃতীয়), হিরামুন মণ্ডল (চতুর্থ), নিরা খাতুন (অষ্টম), মো. সাইদুর রহমান (১৮তম), সুমাইয়া তাবাসসুম (৩০তম) ও ইনতে খা বিনতে সাগর (৩২তম)। জানা যায়, তিথি খাতুন এফ ইউনিটের এমসিকিউ ৮০ নম্বরের প্রশ্নে গণিতে ৬০-এর মধ্যে ৫১ এবং ইংরেজিতে ২০-এর মধ্যে ১৪ পান। অথচ তিনি বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ই ইউনিটের পরীক্ষায় ফেল করেন। তিনি ই ইউনিটে গণিত প্রশ্নে হাত দেননি। ডি ইউনিটে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও তার অবস্থান সাতশ' জনের পরে। 

http://bangla.samakal.net/2017/03/04/274561