৪ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১:৪২

কিশোর অপরাধীর দাপট ঢাকাজুড়ে

৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর সড়কের মাথায় একটি চায়ের দোকানে সাত-আটজন কিশোর আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় এক কিশোর মোবাইল ফোনে উচ্চ স্বরে কাউকে বলতে থাকে—‘তুই আমাকে চিনিস না। তোকে হয় মেরে ফেলব, না হয় জেলের ভাত খাওয়াব। ওই দিন দেখিস নাই, অস্ত্র তাক করে রবিনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। এই হুংকার দিয়েই সে লাইন কেটে দেয়। নাম জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে ক্ষেপে ওঠে সে। উল্টো প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় পেয়ে কিশোর জানায়, তার নাম রুদ্র। বাসা উত্তরাতেই। লেখাপড়া করছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এলাকায় একটু-আধটু তাফালিং করতেই হয়। এটা দোষের কিছু না। এরপর সিগারেট ধরিয়ে বলতে থাকে, ভাই আপনি আপনার কাজে যান। মাথা গরম আছে। কী করে ফেলি বলা যায় না। ’ পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুদ্রর বাবা একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ছেলের ব্যাপারে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

রুদ্রর মতোই উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কিশোর অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে গ্যাংস্টার গ্রুপ। এসব বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ নগরবাসী। তার পরও ভয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না কেউ। এসব গ্যাংস্টারের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তবে তাদের চালাচ্ছে একাধিক বড় ভাই। যেকোনো ধরনের অপকর্মে এদের বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা নেই। হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংসতাও ঘটাচ্ছে তারা অবলীলায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিচ্ছে সন্ত্রাস। হত্যার ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করছে। রাস্তায় তুমুল বেগে গাড়ি, মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। তাদের কাছে থাকছে আগ্নেয়াস্ত্র। পাড়া-মহল্লায় গ্রুপ বেঁধে চলাফেরা করে ওরা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। স্কুল-কলেজের মেয়েদের দেখলেই ইভটিজিংয়ে মেতে ওঠে ওরা।

উত্তরা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আদাবর, পুরান ঢাকা, মতিঝিল, কাকরাইল ও মগবাজারসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে কিশোর গ্যাংস্টারদের এসব তথ্য। বিভিন্ন জনের অভিযোগ—থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি না থাকায় বখে যাওয়া কিশোররা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এদের বেশির ভাগই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তারা স্কুল ব্যাগ, জুতার মধ্যে অস্ত্র বহন করে নির্দিষ্ট স্পটে বিক্রি করছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে।

উত্তরা জোনে ৩০টি গ্রুপ : উত্তরাসহ এর আশপাশে এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কাকরা গ্রুপ, জি ইউনিট, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইট, ফিফটিন, ডিসকো বয়েস, নাইনস্টার, নাইন এম এম বয়েজ, পোটলা বাবু, সুজন, আলতাফ, ক্যাসল বয়েজ ও ভাইপার; পাওয়ার বয়েজ, ডিজে বয়েজ, জি স্টার, ফোর সিভি বয়েজ, সেভেন স্টার, ব্ল্যাক, কিং নাইন, দাদা বয়েজ, রেড লাইট, প্রাণ টিএমসিসহ ৩০টির মতো গ্রুপ। পাওয়ার বয়েজের সদস্য ৪৫০, ডিজে বয়েজে আছে দেড় শতাধিক। এসব গ্রুপের সদস্যদের বয়স ১৩ থেকে ২০ বছর। তাদের প্রিয় হলো মাদক ও অস্ত্র। বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে ঝড়ের বেগে বাইক চালানো আর রাস্তায় মেয়েদের হয়রানি করা কিশোরদের নিত্যদিনের কাজ। এদের কেউ কেউ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা হাই স্কুল, নওয়াব হাবিবুলাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে।

নাইমুর রহমান অনিকের নেতৃত্বে ডিসকো গ্রুপ এবং তালাচাবি রাজুর নেতৃত্বে চলছে নাইন স্টার গ্রুপের কার্যকলাপ। এ দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে গত ৬ জানুয়ারি খুন হয়ে যায় স্কুলছাত্র আদনান কবির। গত মাসে উত্তরার ৯/এ নম্বর রোডে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় ডিসকো গ্রুপের ছোটন খান ও সাকিব নাইন স্টার গ্রুপের তালাচাবি রাজুর ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে।

ওই ঘটনায় এক শিল্পপতির ছেলে নাফিস মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নাফিস পুলিশকে জানায়, বছরখানেক ধরে সে এলাকায় সন্ত্রাসে জড়িয়েছে। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে। তুরাগ থেকে উত্তরা আবাসিক এলাকা, ফায়দাবাদ, খিলক্ষেত ও আশকোনা এলাকার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ঘরের কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া আক্তারুজ্জামান ছোটনের বাবা আব্দুস সামাদ, শাহীনুর রহমানের বাবা আব্দুল খালেক র‌্যাব কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, সন্তানকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না তাঁদের। খারাপ সঙ্গে পড়ে তারা বখে গেছে। এই দুই কিশোরের সঙ্গে রমজান মোবারক, সেলিম খান, ইব্রাহিম হোসেন ওরফে সানি, মিজানুর রহমান সুমন ও জাহিদুল ইসলাম জুইসকেও গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

উত্তরা ১১ নম্বর সেকশনের কল্যাণ সমিতির এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকায় কিশোর অপরাধীদের আনাগোনা বন্ধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অলিগলিতে তারা আড্ডা দিচ্ছে, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার এক ভাতিজা পর্যন্ত গ্যাং পার্টিতে চলে গেছে। তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে পারব বলে মনে হয় না। ’

ডিএমপির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকায় কিশোর অপরাধীদের মধ্যে বেশির ভাগই ধনাঢ্য পরিবারের সদস্য। মাঝে মধ্যে তাদের ধরা হলে তদবির করে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশ পাওয়া গেছে। এলাকাভিত্তিক তালিকা করে ডিএমপি ও পুলিশ সদর দপ্তরকে জানানো হচ্ছে।

মাইলস্টোনের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম জানান, নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে স্কুল পরিচালনা করছেন তাঁরা। কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে আধা ঘণ্টার মধ্যেই অভিভাবকদের অবহিত করা হয়। আর সাত দিন গরহাজির শিক্ষার্থীদের বাসায় শিক্ষকরা যান। ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ বাইরে যেতে পারে না। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ হোসেনের বাবা আকরাম হোসেন বলেন, ‘কিশোর অপরাধ ঠেকাতে পুলিশের উদ্যোগে আমরা খুশি। আমরা তাদের সহযোগিতা করতে চাই। পারিবারিকভাবে সবাই সচেতনও আছি। ’

তেজগাঁওয়ে ১৩ গ্রুপ : তেজকুনিপাড়ায় কিশোর সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘গ্যাং পার্টি’ খুন করে ফুটপাতের শসা বিক্রেতা আব্দুল আজিজকে। নিহতের বাবা বসির মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, সায়মন মনিরের গ্রুপ চাঁদা না পেয়ে তাঁর ছেলেকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে। তিনি যোগ করেন, ছেলে তো আর ফিরে আসবে না, তবে আমি চাই এত অল্প বয়সে যারা খুনি, অপরাধী হয়ে উঠছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হোক। তা না হলে আরো অনেক বাবা-মায়ের বুক খালি করবে ওরা। ’

জানা গেছে, সায়মন মনির গ্রুপের দলনেতা সায়মন মাদকাসক্ত। তার গ্রুপে আছে অন্তত ১৩ জন কিশোর। তারা স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র। তবে দলনেতা স্থানীয় কপিক্ষেত বস্তিতে থাকে।

তার ঘনিষ্ঠ মনিরও মাদকসেবী। তার বিরুদ্ধে নরসিংদীর রায়পুরায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা দুজন স্কুল-কলেজের কিশোরদের মাদক সরবরাহ করে।

তেজগাঁও রেলওয়ে খেলাঘর সমাজকল্যাণ সংঘের যুগ্ম সম্পাদক (ক্রীড়া) রুহুল আমিন জানান, সচ্ছল ও অভিজাত পরিবারের সন্তানরা এসব দলের সদস্য। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই তারা মারামারি করে। তবে এসব শিশু-কিশোরের বিপথে যাওয়া ঠেকাতে তাঁরা এদেরকে খেলাধুলায় আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তেজগাঁও এলাকার প্রতিটি দলে চার-পাঁচজন থেকে ১০-১২ জন করে সদস্য রয়েছে। ডেডলি রকার্স, কেইউ, এসকে ৩০, ইএস ১৩ এবং পিপিসহ বিভিন্ন নামের গ্রুপ আছে। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নামে চলে ১৫-২০ জনের একটি গ্যাং। এই গ্যাংয়ের সব সদস্যের বয়স ১৮ বছরের নিচে।

স্থানীয় এক কমিশনারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত উজ্জ্বল ও ফরহাদের নেতৃত্বে আছে ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ। তেজকুনিপাড়ায় খেলাঘর মাঠের পাশে তারা বেশ কিছু অবৈধ দোকানপাট বসিয়েছে। হায়দার ও সোহাগের নেতৃত্বে তেজগাঁও এলাকায় আছে আরেকটি গ্রুপ। তেজগাঁও থানার পাশে থার্ড গলির একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে ববি নামের এক কিশোর। স্টেশন রোড থেকে তেজকুনি বাজার পর্যন্ত এলাকায় একটি গ্যাংস্টার গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার নেতৃত্বে আছে একটি গ্রুপ। নাখালপাড়া, পলিটেকনিক কলেজ, তেজকুনিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় গ্যাংস্টার গ্রুপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

মোহাম্মদপুর ও আদাবরে ১৫টি গ্রুপ বেপরোয়া : মোহাম্মদপুর এলাকায়ও উঠতি বয়সী ১৫টি কিশোর অপরাধী গ্রুপ সক্রিয়। এর মধ্যে বিহারি ক্যাম্প কেন্দ্রিক সাতটি গ্রুপ দাপিয়ে বেড়ায় পুরো মোহাম্মদপুর।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই এলাকার বেশির ভাগ গ্রুপই চলছে ব্যক্তির নামে। যেমন সলিমুল্লাহ রোডে তৎপর মামুনের গ্রুপ। পাপ্পু গ্রুপের প্রধান পাপ্পু কারাগারে। নূরজাহান রোডে সক্রিয় আলিফ গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপেই ১০-১২ জন করে সদস্য রয়েছে। আলিফ গ্রুপের সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। স্থানীয়রা জানায়, বাঁশবাড়ী কারখানা এলাকার নিয়ন্ত্রণ জসিম গ্রুপের হাতে।

বিজলী মহল্লা এলাকা চলে ফিরোজের নেতৃত্বে। টাউন হলে সক্রিয় জলিল গ্রুপ। লালমাটিয়ায় নেতৃত্বে আছে সোহরাব ও রাজ্জাক। স্থানীয়রা জানায়, সোহেল বাবু নামের একজন দরগাহ শরিফ বানিয়ে এলাকায় ইয়াবা, ইন্টারনেটসহ নানা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। বাঁশবাড়ী কারখানা এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তরুণ ও কিশোরদের আড্ডা বসে। সলিমুল্লাহ রোডের পানির ট্যাংক মাঠে আসর বসে মামুন গ্রুপের।

মোহাম্মদপুর হুমায়ুন রোডের বাসিন্দা মো. সালাউদ্দিনের অভিযোগ, রাস্তা দিয়ে চলাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা হলেই মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে কিশোর বখাটেরা। দিনের বেলা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখলেই টিজ করে। প্রতিবাদ করলেই হুমকি আসে। তিনি আরো জানান, মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা রমরমা। প্রতিটি গলিতে, বাসার সামনের সড়কেও মাদকসেবীদের উৎপাত। সরেজমিনে খোঁজ নিয়েও এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গ্যাং কালচার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।

মিরপুরে তালিকাভুক্তরা অধরা : মিরপুর এলাকায়ও একাধিক গ্রুপ রয়েছে। এর প্রভাব স্থানীয় স্কুল-কলেজগুলোতেও পড়ছে। এর আগে কিশোর সন্ত্রাসীরা মিরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র পিয়াসকে হত্যা করে। সম্প্রতি র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক অভিভাবক অভিযোগ দিতে আসেন। তখন র‌্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগটি ছিল, মনিপুর স্কুলে একই ক্লাসের দুটি সেকশনে গ্যাং গ্রুপের প্রভাব পড়েছে। এ নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এতে শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। সম্প্রতি মিরপুর রূপনগরে হুজাইফা গ্রুপের সদস্য সারাফাত ইসলাম রিফাতকে মারধর করে কিশোর রাব্বী গ্রুপের সদস্যরা। এ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত রিফাতের বাবা রাব্বী গ্রুপের আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। তাদের মধ্যে মাহিন, আলিফ ও রাব্বীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘গ্যাং কালচার বা বেপরোয়া কিশোরদের নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল দেখলেই চেকপোস্টে আটকিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করছি। বিভিন্ন মোটিভেশনাল কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ’

রমনা থানা এলাকায় কিশোর অপরাধীদের অন্তত সাতটি গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে স্কুলকেন্দ্রিক তিনটি গ্যাং পার্টি রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ১০-১২ জন করে সদস্য। পুরান ঢাকায় অন্তত ১২টি গ্রুপ সক্রিয়। মতিঝিলে আইডিয়াল গ্রুপের তৎপরতায় অস্থির এলাকার মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক কালের কণ্ঠকে বলেন, রমনা এলাকার মধ্যে মগবাজারে মাদক ব্যবসায় কিশোরদের জড়ানো হচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে মিশছে। মাদকই তাদের নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে এলাকায় খুন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। তাদের কাছে পুলিশ অসহায়।

রমনা বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার শেখ মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের গ্যাং কালচারের কারণে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে রমনা এলাকায় গ্যাং পার্টির তেমন প্রভাব নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে তৎপর রয়েছে পুলিশ।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/03/04/470347