৩ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১২:০১

ঠেঙ্গারচর কার?

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের জন্য বেছে নেয়া ঠেঙ্গাচরের মালিকানা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বির্তক। চট্টগ্রামে সাগরের মাঝখানে অবস্থিত সন্দ্বীপ এলাকার লোকজন চরটিকে আদিভূমি ‘নেয়ামস্তি’ বলে দাবি করেছে। এই নিয়ে তারা ‘জেগে ওঠা ভূমি রক্ষা পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন করে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে নোয়াখালীর হাতিয়ার মানুষ ঠেঙ্গারচর তাদের সীমানার মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে সেটিকে বসবাসের উপযোগী করার জন্য আন্দোলন শুরু করেছে। এমন অবস্থায় এই দুই অঞ্চলের মানুষজনের দাবির মুখে ঠেঙ্গারচর নিয়ে সরকার নতুন করে কী ভাবছে তা জানতে চাইছেন সাধারণ মানুষ। কেবল তা-ই নয়, এ নিয়ে নয়া জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান দুই অঞ্চলের সংগঠন দুটির নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মাঝামাঝিতে জেগে উঠেছে ঠেঙ্গারচর। ইতিমধ্যে সেখানে ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পরপরই চরটির মালিকানা নিয়ে শুরু হয় নতুন দ্বন্দ্ব। গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সন্দ্বীপের ‘জেগে ওঠা ভূমি রক্ষা পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। সেখানে ঠেঙ্গারচরকে তাদের আদিভূমি ‘নেয়ামস্তি’ বলে দাবি করা হয়। এরপর সেই দাবির এক সপ্তাহ পর কয়েক হাজার বাসিন্দা নিয়ে মানববন্ধনও করে তারা।

এ সময় বক্তারা জানান, ঠেঙ্গারচরে কারা থাকবেন, তা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই সন্দ্বীপবাসীর। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষ এ চরটিকে তাদের সীমানার সঙ্গে যুক্ত করতে চান। এ দাবি মানা না হলে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আদালত পর্যন্ত যাবেন অনেকে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠা ঠেঙ্গারচর ২৫ কি.মি. দৈর্ঘ্য ও ১২ কি.মি. প্রস্থ। যার আয়তন প্রায় ৩০০ বর্গ কিলোমিটার। চরটি সন্দ্বীপ উপজেলা থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে। যেতে লাগবে ৩০ মিনিট। আর হাতিয়া থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। এখানে রয়েছে বিশাল সমতল ভূমি। কেরফা গাছের বাগান। আছে অতিথি পাখির বিচরণ।

এ বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া বলেন, সীমানা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে চরটি দেখবেন। তারপর জানাবেন কীভাবে তা বসবাসের উপযোগী করা যায়। কোন অঞ্চল থেকে যাতায়াত করা বেশি সুবিধা হবে। অন্যদিকে সন্দ্বীপের ‘জেগে ওঠা ভূমি রক্ষা পরিষদর’-এর আহ্বায়ক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ঠেঙ্গারচরকে সন্দ্বীপের সঙ্গে যুক্ত না করলে সে সিদ্ধান্ত কখনই মেনে নেবো না আমরা। আমরা অচিরেই ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে পিলার স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে সন্দ্বীপবাসী ঠেঙ্গারচরে গিয়ে ‘নেয়ামস্তি ইউনিয়ন, উপজেলা-সন্দ্বীপ, জেলা-চট্টগ্রাম’ লেখা সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। এ নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে দুই অঞ্চলের মাঝে। ১৯৫৪ সালে সন্দ্বীপ চট্টগ্রাম জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর মধ্যে আন্তঃজেলা সীমানা নির্ধারণ হয়নি। সর্বশেষ গতকাল এ বিষয়ে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সন্দ্বীপের লোকজন। জানতে চাইলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী ঠেঙ্গারচরের বিষয়টি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান। সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী সময়ে তিনি করণীয় ঠিক করবেন বলে উল্লেখ করেন।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=55813