২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৬

পানি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সংবাদে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ

ভোক্তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই বছর শেষ হতে না হতেই বাড়ানো হচ্ছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। উৎপাদন খরচের দোহাই দিয়ে এই তিনটি খাতে দাম বাড়ানো হলেও এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট তেলের দাম আরো কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনগণের আয়ের পরিমাণ না বাড়লেও বছর বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় এই তিনটি জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনও পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সংবাদে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এমনিতে সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছে, তার ওপর বছরের শুরু থেকে দাম বাড়ালে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বেড়ে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে জনগণের অতি প্রয়োজনীয় নিত্যব্যবহার্য সবকিছুর ওপর। অতিষ্ঠ হবে জনজীবন। ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কষ্টকর হবে।
লুটপাট চালাতেই সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব জিনিসের দাম আবার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এই সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ঘোষণা ছাড়াই পানির দাম বাড়ানো হলো। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। শুনেছি বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে এসব জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে অবৈধ সরকারের আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মানুষকে হতবাক করেছে। তিনি বলেন, গ্যাস খাতে সরকারের কোনো লোকসানতো নেই-ই বরং মোটা অংকের মুনাফা হচ্ছে। কোম্পানিগুলো যেমন মুনাফা করছে, তেমনি সরকারের কোষাগারে দিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। তারপরও কেন গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে? বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পানির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। অনেকেই দাম বৃদ্ধির বিষয়টি জানেও না। রিজভী বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত গণবিরোধী ও অযৌক্তিক এবং বেআইনী। তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লুটপাট। সরকারি দল ও ক্ষমতাসীনদের স্বজনদের পকেট ভারী করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে প্রায় দ্বিগুণ করার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান। গেল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছেন তা সম্পূর্ণ অন্যায়, অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত নয় বলেই গত ৯ মাসের মধ্যে গ্যাসের মূল্য দ্বিতীয়বার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত হলে এ ধরনের গণবিরোধী অন্যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতো না।
সূত্র মতে, রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির সংকট। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় সরবরাহও অনেক কম। তাতে কি? পানি সরবরাহে সমস্যার মধ্যে ঢাকা ওয়াসা চার মাসের মাথায় আবারও পানির দাম বাড়ালো। অথচ বাধ্য হলেই কেবল প্রতি বছর মাত্র ৫ পয়সা করে বাড়ানোর কথা ছিল। প্রতিষ্ঠাটি আবাসিক ক্ষেত্রে দাম প্রতি ইউনিটে (এক হাজার লিটার) ১ টাকা ৫১ পয়সা এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৩ টাকা ৭২ পয়সা বাড়িয়েছে। যা ঘোষণার থেকেও ১৭ ও ১৩ শতাংশ বেশী। বছরে একবার দাম বাড়ানোর কথা থাকলেও এবার দুই দফায় বাড়ানোর কারণে মোট দাম বাড়ল আবাসিকে ২২ শতাংশ এবং শিল্প ও বাণিজ্যিকে ১৮ শতাংশ।
সূত্র মতে, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গ্রাহক, বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মতামত নিতে গণশুনানির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভোক্তাদের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পানির ক্ষেত্রেও এমন শুনানি জরুরি। তবে কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু গণশুনানীকে সরকার তেমন পাত্তা দেয়না, তাই ওয়াসার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হবে। তীব্র বিরোধীতা সত্ত্বেও সরকার তাদের ঘোষণা মতে দাম বাড়াবেই।
জানা গেছে, গত নবেম্বর মাসের বিলের সঙ্গে সর্বশেষ বাড়তি বিল পৌঁছেছে গ্রাহকের কাছে। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মাহমুদ হাসান জানান, পানির দাম বাড়ানোর কারণে তিন রুমের ফ্ল্যাটে তাকে কমপক্ষে বাড়তি আরও দুই থেকে আড়াইশ টাকা দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বাড়তি বিল সাধারণ মানুষের আয়ের সঙ্গে কিছুতেই সংগতিপূর্ণ নয়। বাড়তি বিলের সব বোঝা পড়বে ভাড়াটেদেরই কাঁধে। প্রমিন্যান্ট হাউজের এক ভাড়াটিয়া জানান, প্রতি মাসে গড়ে পানির বিলসহ দারোয়ানের বেতন নেয়া হত দুই হাজার টাকা। এখন সেটি আর তিনশত টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা বলছে, পানির উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দাম বাড়িয়েও সংস্থাকে লোকসান গুণতে হচ্ছে। একই বছরে দ্বিতীয় দফায় দাম বাড়ানোর পর এখন আবাসিক ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ১০ টাকা, শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে তা ৩২ টাকা। গত বছরের জুলাইয়ে আবাসিক ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দাম ৮ টাকা ৯ পয়সা করা হয়েছিল। চলতি বছরের জুলাইয়ে একই হারে বাড়ানোর পর দাম হয় ৮ টাকা ৪৯ পয়সা। সর্বশেষ নবেম্বরে প্রায় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে যোগ করা হয় ১ টাকা ৫১ পয়সা। শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গত বছরের জুলাইয়ে দাম বাড়ানোর পর দাঁড়ায় ২৬ টাকা ৯৪ পয়সা। আর চলতি বছরের জুলাইয়ে ৫ শতাংশ বাড়ানোর ফলে দাম দাঁড়ায় ২৮ টাকা ২৮ পয়সা। সর্বশেষ দাম বাড়ানোয় হয়েছে ৩২ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত ওয়াসা বোর্ড ৫ শতাংশ হারে পানির বিল বাড়াতে পারে। এবার বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত জুলাইয়ে ওই হারেই দাম বাড়ানো হয়। পরে ওয়াসারই আবেদনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ কমিটি বাড়তি হারে দাম নির্ধারণ করে। ওয়াসা সে অনুযায়ী নবেম্বর থেকে দাম বাড়িয়েছে। হঠাৎ উচ্চ হারে দাম বাড়ানো সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ঢাকা ওয়াসা পানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং চওড়া পাইপের সরবরাহ লাইন বসিয়েছে। এডিবির তাগিদ ছিল পানির দাম বাড়াতে হবে, যা হবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পানির দাম বাড়ানোর ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকেরও তাগিদ ছিল। কর্মকর্তারা বলেন, ওয়াসা আইন, ১৯৯৬-এ বলা আছে, পানির দাম উৎপাদন খরচের সমান বা বেশি হতে হবে। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা কখনো উৎপাদন খরচের সমান পানির দাম নির্ধারণ করতে পারেনি। এক লাফে না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে দাম বাড়ানো হলে সাধারণ গ্রাহকদের সমস্যা কম হতো।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। পানির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দাম বাড়ানোর পুরো দায়টা আসবে ভোক্তাদেরই ওপর। ঢাকা ওয়াসার অপচয়ের শেষ নেই। পানির পাইপের লিকেজের কারণে ভোক্তারা বিশুদ্ধ পানি থেকেও বঞ্চিত হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ওয়াসার সিস্টেম লসের বিষয়েও অনেক কিছু শোনা যায়। এগুলো কমানো গেলে পানির দাম বাড়াতে হয় না। তিনি বলেন, পানির দাম বাড়ানোর জন্য ভোক্তাদের মতামতের মূল্য দেয়া উচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর নজির আছে।
এদিকে সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা শিগগিরই আসছে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এ বিষয়ে হিসাব চূড়ান্ত করেছে। সে অনুযায়ী আবাসিক খাতে ২ চুলার জন্য ১ হাজার এবং ১ চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হতে পারে। আর যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম হতে পারে প্রতি ঘনমিটার ৪০ টাকা। বর্তমানে আবাসিকে ২ চুলার জন্য ৬৫০ ও ১ চুলার জন্য ৬০০ টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্প, বাণিজ্যিক, চা-বাগান প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই গ্যাসের দাম বাড়ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুল হক বলেন, যেকোনো দিন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হতে পারে। দাম যতটাই বাড়ানো হোক, তার প্রধান কারণ গ্যাসের দামের ওপর থেকে সরকারের শুল্ক ও কর সংগ্রহের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এস এম শামসুল আলম বলেন, ১৯৯৮ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে ৫৫ শতাংশ রাজস্ব (৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ মূসক) না নিয়ে গ্যাস খাত পরিচালনায় তা ব্যয় করার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে এসআরও (২২৭ নম্বর) জারি করেছিল, এখন তার অন্যথা করা জনস্বার্থের অনুকূল নয়। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা আরও বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য বাড়তি যে অর্থ সংস্থাগুলোর প্রয়োজন, তার সংস্থান তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়েই করা সম্ভব। গ্যাস খাতের প্রতিটি কোম্পানির হাতে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে, যা এ খাতের উন্নয়নের কোনো কাজে লাগছে না। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংকট দূর করতে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের সংকট তীব্র হচ্ছে। এই সংকট দূর করার ব্যাপারে তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো আশার কথা শোনাতে পারেননি। তারা বলেছেন, সমাধানের চেষ্টা করছেন। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের এই সংকটের মধ্যে বাড়তি পাওনা হতে চলেছে মূল্যবৃদ্ধি।
বিইআরসির সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছিল, গ্যাসের দাম গড়ে ৯০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর। কিন্তু গণশুনানির সময় তা কমিয়ে ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর সংশোধিত প্রস্তাব দেয়া হয়। ওই প্রস্তাবের ওপর শুনানিতে অনেক বিষয় উঠে আসে, যাতে ৬৫ শতাংশ দাম বাড়ানোরও যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়নি। কাজেই ওই প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়ছে না। তখন আবাসিকে ২ চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা, ১ চুলার জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা, আবাসিকে মিটারযুক্ত গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের বর্তমান দাম ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৩২ শতাংশ, সারে প্রায় ৩৬ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, শিল্পে প্রায় ৫৬ শতাংশ, বাণিজ্যে ৬৭ শতাংশ, চা-বাগানে ৬৮ শতাংশ ও সিএনজিতে ৪৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়।
এর আগে গত বছরের (২০১৫ সাল) ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন ২ চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ এবং ১ চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। এছাড়া সব গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারি।
পানির দাম বৃদ্ধির পর বাড়ছে গ্যাসের দামও। থেমে নেই বিদ্যুৎ বিভাগও। বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির আয়োজন করা হবে। এ বছরের শুরুর দিকেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ (পিডিবি) এ খাতের সব সংস্থা বিইআরসির কাছে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমেছে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম না কমিয়ে উল্টো বাড়ানোর প্রক্রিয়া খুবই হতাশাজনক।
সূত্র মতে, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ গত বছর প্রতি ইউনিট (১ কিলোওয়াট) ছিল ৬ টাকা ২৭ পয়সা। এ বছর তা কমে ৫ টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি (ফার্নেস) তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হলে খরচ আরও কমবে। এই অবস্থায় আরও একবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিতরণ কোম্পানিগুলো এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এর মধ্যে পিডিবি বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রির জন্য বিদ্যুতের পাইকারি দাম ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে ছয়বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় না করার কোনো যুক্তি নেই। সরকার ফার্নেস তেলের দাম সমন্বয় করে বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে দেশের প্রায় সব মানুষ উপকৃত হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, পৃথিবীর সব জায়গাতেই এখন জ্বালানির দাম কম। তাই কিছুটা হলেও বিদ্যুতের দাম কমানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু সরকার আবারও একই ভুল করতে যাচ্ছে। এতে করে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং সক্ষমতা কমছে। এমনটি হলে অন্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকতে পারব কি না সন্দেহ আছে।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য সেলিম মাহমুদ বলেন, প্রস্তাবগুলো নিয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বছরে সরকারের অতিরিক্ত আয় হবে ৭১৬ কোটি টাকা। অথচ রেন্টাল বিদ্যুকেন্দ্রগুলো থেকে গচ্চা সরিয়েই এ খাতে সরকার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বাঁচাতে পারতো। কিন্তু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গচ্চা না কমিয়ে বিদ্যুতের খুচরা ও পাইকারি মূল্য বাড়িয়ে জনগণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হবে।
http://www.dailysangram.com/post/265200-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A7%8E-%E0%A6%93-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AC%E0%A7%83%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%A4%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7