৩ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১১:২০

হুন্ডি তৎপরতায় কমছে রেমিট্যান্স ফেব্রুয়ারিতে ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না, বরং দিন দিন তা তলানিতে যাচ্ছে। গেল ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ৯৩ কোটি ডলার, যা বছরের একই সময়ে এসেছিল ১১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারির রেমিট্যান্স গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ সময়ে এক মাসে এত কম রেমিট্যান্স আর আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হুন্ডি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায়ই মূলত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। হুন্ডি তৎপরতা বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা বন্ধ হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ঝুঁকির মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পাঁচ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে হুন্ডিতে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রেমিট্যান্স বেশি আসে এমন ২০ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠক করে এ উদ্বেগের কথা জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হুন্ডি প্রতিরোধে বিকাশের ক্যাশ আউট বন্ধের দাবি জানান ব্যাংকাররা। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠকে বলেন, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ছোট ছোট রেমিট্যান্স খেয়ে ফেলছে। এসব রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। এতে দেশ বঞ্চিত হলেও ফুলে ফেঁপে উঠছে বিকাশ, রকেট নামক প্রতিষ্ঠান। এ অপতৎপরতা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ না নিলে চাপের মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে হুন্ডিওয়ালারা যাতে কোনোভাবেই বিকাশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না পাঠায় সে ব্যাপারে কড়া বার্তাও দেয়া হয়। বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধে বিদেশে দূতাবাসগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া বৈধপথে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও প্রবাসী আয় না বাড়লে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেহেতু হুন্ডিরা ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশকে ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন-সেহেতু বিকাশের ক্যাশ আউট বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংকারদের এ ধরনের দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত আমলে নিচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যেটা ২৫ হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে ১৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৭৭ কোটি ডলার, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমে নেমেছে ৮১০ কোটি ডলারে। আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম এসেছে গত ফেব্রুয়ারিতে ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। আর গত ডিসেম্বরে এসেছিল ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/200356