৩ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩৯

তিন বছরে বিদেশ থেকে ফিরেছে দশ হাজার লাশ

অদক্ষতায় মৃত্যুর হার বাড়ছে; দূতাবাসগুলোর তদারকি নেই

প্রবাসে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বের কোনো-না-কোনো দেশ থেকে আসছে লাশ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিগত তিন বছরে লাশ হয়ে ফিরেছেন সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশী। এ হিসাবের বাইরে অনেকের লাশ অর্থ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে বিদেশের মাটিতেই দাফন করা হয়েছে। বিদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করা বাংলাদেশীদের মৃত্যু হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাশ গোপনে দাফন বা সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান নেই।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশী বৈধভাবে অবস্থান করছে। অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের সংখ্যা এ হিসাবের প্রায় অর্ধেক। প্রবাসীদের মধ্যে বেশির ভাগই শ্রমজীবী। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত চার বছরে এ মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে। ২০০৫-এর তুলনায় ২০১৬ সালে এ বৃদ্ধির হার ৬০ শতাংশ।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, প্রবাসে বাংলাদেশী মৃত্যুর হার বৃদ্ধির প্রধান কারণ সুষ্ঠু শ্রম ব্যবস্থাপনা। বিভিন্ন দেশে কর্মরতদের বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। অদক্ষতার পাশাপাশি শারীরিক সক্ষমতার অভাব ও পুষ্টিহীনতা মৃত্যুর অন্যতম কারণ। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার গোড়াতেই গলদ থাকায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কর্মসন্ধানী মানুষকে। এ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। তারা বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল ও দরিদ্র যুবকদের বিদেশে পাঠাচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার আগে ন্যূনতম শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও নেয়া হচ্ছে অসাধু পন্থার আশ্রয়। জটিল রোগ ও নির্ধারিত কাজের অক্ষমতা নিয়েই বিদেশে যাচ্ছেন এসব কর্মী। সেখানে গিয়ে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কন্সট্রাকশন, ফ্যাক্টরি ও বাগানে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি। কেননা এসব কাজে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে যাওয়া কর্মীদের ক্ষেত্রে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে সঠিকভাবে ট্রেনিং, প্রি-ব্রিফিং ও মেডিক্যাল-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবগত না করাই এ মৃত্যুর হার বাড়ছে। এমনিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় দেশেও তারা অপুষ্টিতে ভুগে। বিদেশে গিয়ে নতুন পরিবেশে হাড়ভাঙা খাটুনি তারা সহ্য করতে পারেন না। তারপর কাক্সিক্ষত বেতন না পাওয়ায় সেখানেই তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হন। এ শ্রেণীর কর্মীদের বেশির ভাগই বিদেশে যাওয়ার জন্য ধারদেনা করে বা জমি বন্ধক রেখে যান। সেখানে গিয়ে কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী বেতন ও সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে তারা মানসিক চাপে পড়েন। দেশে ঋণের বোঝা আর বিদেশে স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে তারা দিন দিন নিস্তেজ ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চাপ সইতে না পেরে তারা অসুখে মারা যান। আবার অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরে মনির হোসেন নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে। তার বাড়ি ঢাকার দোহারে।

আরো একটি শ্রেণী রয়েছে, যারা এতটাই অদক্ষ যে, বিদেশের মাটিতে স্বাভাবিক চলাফেরার যোগ্যতাটুকুও তাদের নেই। ফলে তাদের একটি অংশ মারা যাচ্ছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। বিদেশের রাস্তায় গাড়ির গতি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় রাস্তা পারাপারের সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা দুর্ঘটনায় পড়ছেন। আরেকটি বড় কারণ বাংলাদেশের রাস্তায় হাঁটার নিয়ম অন্য দেশের উল্টো। এতে অনেকেই ভুল করে রাস্তায় নেমে দুর্ঘটনায় পড়ছেন। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বিদেশে বাংলাদেশীদের ৬০ শতাংশেরই মৃত্যু হচ্ছে সড়ক ও কর্মস্থানে দুর্ঘটনায়। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মো: রহমত উল্লাহ। ২৯ বছর বয়স্ক এ তরুণের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচংয়ে।

এ ছাড়া পরিবেশগত তারতম্যের জন্যও অনেকে মারা যাচ্ছেন। এ জন্য প্রধানত দায়ী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা ছেলেটি বিদেশে বৈরী পরিবেশে টিকতে পারবে কি না তা দেখা হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, বিশ্বের কোনো দেশের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আবার কোনো দেশের মাইনাস ৫০ ডিগ্রি। যার কোনোটাই বাংলাদেশীদের জন্য যুতসই নয়। এতে অনেকেই সেসব দেশে গিয়ে পানিশূন্যতা, পেটের পীড়া, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে জ্বালা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের অনেকেই এসব রোগে মারাও যাচ্ছেন।

সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র লক্ষ করা গেছে বাংলাদেশের নিকটবর্তী কয়েকটি সমুদ্র-তীরবর্তী দেশে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশে অবৈধ পথে চাকরির খোঁজে গিয়ে নির্বিচারে মারা পড়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে বিগত ২০১৬ সালে এ কয়টি দেশের বনজঙ্গলে অসংখ্য গণকবর থেকে নরকঙ্কাল উদ্ধারের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। পাচারের শিকার হওয়া হাজার হাজার দরিদ্র বাংলাদেশীর কোনো হদিস নেই। গণকবরেও স্থান হয়েছে অনেকের। এভাবে বিদেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করা বাংলাদেশীদের কোনো পরিসংখ্যান নেই। তা ছাড়া ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, চাঁদাবাজি ও অপরাধ চক্রের সাথে জড়িয়ে বিদেশে খুন হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। গত মাসেই নিউ ইয়র্কে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী জাকির খান নিহত হন। তার বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে।

বিশেষজ্ঞ মতামত : রিফ্যুজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসোর্স ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, শ্রমিকেরা বিদেশে যাচ্ছেন। সেখানে অনেকে মারা যাচ্ছেন। এর মধ্যে একটা আছে স্বাভাবিক মৃত্যু। বয়স হলে মারা যাবে। কিন্তু যারা মারা যাচ্ছে তাদের তথ্য থেকে দেখা গেছে, তাদের গড় বয়স ৩৬-৩৭ বছর। তার মানে তারা যুবক অবস্থায় মারা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বলা হয়, হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিওর। এখন ৩৬-৩৭ বছর বয়সে হার্ট ফেইলিওর হওয়াটা একটু অস্বাভাবিক। দেখা যাচ্ছে অন্য কারণে মৃত্যু হলেও সার্টিফিকেটে কারণ হিসেবে হার্ট অ্যাটাক বা ফেইলিউর উল্লেখ করা হচ্ছে। এতেই আমরা সন্তষ্ট থাকছি। বিদেশী কর্তৃপক্ষ সাধারণত ঝামেলা এড়ানোর জন্য অন্য কোনো কারণ উল্লেøখ করে না। বিদেশে মৃত্যুবরণকারীদের বিষয়ে আমাদের সরকারের নজরদারি থাকা প্রয়োজন।

এ জন্য গবেষণা প্রয়োজন। জানা প্রয়োজন কেন তারা এত অল্প বয়সে মারা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, অনুসন্ধানে কতগুলো কারণ বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। এরা অনেক বেশি মানসিক চাপে থাকেন। হয়তো বা লোন করে বিদেশে গেছেন, কিন্তু ওখানে গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না। কিন্তু ঋণ দেশে শোধ করতে হচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার পর দুর্ঘটনায় মৃত্যু আরেকটা বড় কারণ। রাস্তা যে পার হতে হয় অর্থাৎ আমাদের দেশে যে দিক থেকে রাস্তা পার হতে হয় তার উল্টো দিক থেকে বিদেশে রাস্তা পার হতে হয়। যার ফলে অনেকেই ভুল করেন এবং রাস্তায় মারা যান। তাই আমাদের দেশের মানুষকে জানানো দরকার কিভাবে রাস্তা পার হতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় একটা বড় সংখ্যক লোকের মৃত্যু হচ্ছে। ট্রেনিংয়ে এসব বিষয় জানানো হয় না। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত অসুবিধাও রয়েছে। হার্ট অ্যাটাকের পর পানিবাহিত রোগেও মানুষ মারা যাচ্ছেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন। মরুভূমিতে এর আধিক্য। এসব বিষয় শ্রমিকেরা জেনে গেলে তাদের সমস্যা হতো না।

বিদেশে মৃত্যুর পরিসংখ্যান : জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৩ বছর এক মাসে (২০১৪ -২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি) সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশীর লাশ বিমানযোগে দেশে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও কাতারে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪ সালে বিদেশ থেকে তিন হাজার ৩৩৫ ব্যক্তির লাশ দেশে আসে। এর মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে দুই হাজার ৮৭২ জন, চট্টগ্রাম শাহ আমানতে ৪১১ জন এবং সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে ৫২টি লাশ আসে। একইভাবে ২০১৫ সালে তিন হাজার ৩০৭ জনের লাশ আসে। এর মধ্যে শাহজালালে দুই হাজার ৮৩১, শাহ আমানতে ৪০৭ এবং ওসমানী বিমানবন্দরে ৬৯ জনের লাশ আসে। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৪৮১ জনে। এর মধ্যে শাহজালালে লাশ আসে দুই হাজার ৯৮৫ জনের। শাহ আমানতে আসে ৪২১ জন আর ওসমানী বিমানবন্দরে আসে ৭৫ হতভাগ্যের লাশ। অপর দিকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৩০৯ প্রবাসীর লাশ আসে। তার মধ্যে ঢাকায় স্বজনরা গ্রহণ করেন ২৭১ জনের লাশ। সবমিলিয়ে লাশের সংখ্যা ১০ হাজার ৪৩২ জন। ফেব্রুয়ারি মাসের পুরো হিসাব জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দফতর। সেই হিসাব যোগ হলে লাশের সংখ্যা আরো বাড়বে।

বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের অবহেলা : বিভিন্ন দেশে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশী কর্মী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট উইংগুলো মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে পারে না এবং এ ব্যাপারে মামলা হওয়ার পরও শ্রমিকদের পক্ষে নিয়োগকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা উদ্ধারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয় না। তবে মাঝে মধ্যে নিহতের ওয়ারিশরা ক্ষতিপূরণের টাকা পান।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশী কর্মীর লাশ তার পরিবারের মতামত সাপেক্ষে দেশে আনা হয়। যদি কোনো মৃত ব্যক্তির পরিবার লাশ সংশ্লিøষ্ট দেশে দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে সে দেশে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। মৃতের লাশ দেশে প্রেরণে নিয়োগকর্তা খরচ বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করলে এবং মৃতের পরিবার লাশ দেশে আনতে খরচ বহনে অক্ষম হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলের অর্থায়নে সেই লাশ দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার সৌদি আরবে স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন নরসিংদীর মনোহরদী এলাকার বাসিন্দা রেনু মিয়া (৪৮)। ঢাকার বনানীর ধামাসি নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তিনি দুই মাস আগে সৌদি আরব যান। যে কাজের কথা বলে তাকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল সেই কাজ তাকে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন মারা যাওয়া রেনু মিয়ার স্ত্রীর বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন।

রেনু মিয়ার লাশ দেশে আনার আকুতি জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমাণাদিসহ লিখিত আবেদন করেন। তবে রেনু মিয়ার লাশ কত দিনে দেশে আসতে পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের কেউ কিছু জানাতে পারেননি।

কর্তৃপক্ষ যা বলছে : ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহকারী পরিচালক জাহিদ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিদেশে যেসব শ্রমিক মারা যাচ্ছেন তাদের লাশ দেশে আনার পর দাফন ও ট্রান্সপোর্ট বাবদ ৩৫ হাজার টাকা বিমানবন্দরে দেয়া হচ্ছে। পরে নিহতের পরিবারকে এককালীন তিন লাখ টাকা কল্যাণ বোর্ড থেকে ওয়ারিশদের অনুদান দেয়া হচ্ছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাসের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অপর এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের কোনো দেশ থেকে আমাদের লাশ আনতে জটিলতা হয় না। ব্যতিক্রম শুধু সৌদি আরব। তিনি বলেন, একজন শ্রমিক বা অন্য কোনো পেশার বাংলাদেশী মারা গেলে আবেদন করার পরও ওই লাশ আসতে তিন মাস লেগে যায়। কারণ এ জন্য ওই দেশের সাতটি ডিপার্টমেন্টের অনুমতি লাগে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়োগকর্তার সহযোগিতা ছাড়া দ্রুত এসব কাজ সম্পাদন করা যায় না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেখানে শ্রমিক মারা যাচ্ছেন সেখান থেকে দূতাবাসের দূরত্ব এক থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার।

বিদেশে বাংলাদেশী মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অল্প সংখ্যক খুন ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে স্বজনরা লাশ দেশে না এনে বিদেশেই দাফন করে দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে স্বজনদের লিখিত অনুমতি লাগে।

মাইগ্রেশনের সাথে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত এক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ নয়া দিগন্তকে বলেন, উচ্চ অভিবাসন ব্যয় করে শ্রমিকেরা বিদেশে যাওয়ায় তারা সার্বক্ষণিক টেনশনে থাকেন। এ ছাড়া গরম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শ্রমিকদের থাকা-খাওয়া ও আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে না পারাও মৃত্যুর অন্যতম কারণ। রয়েছে পারিবারিক কলহও। এ ছাড়া ব্যুরোতে যখন ব্রিফিং হয় তখন শ্রমিকেরা তেমন মনোযোগী না হওয়ায় বিদেশে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। তার মতে, বিদেশগামীদের জন্য অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে একই সাথে দূতাবাসের সহযোগিতায় কাজের পরিবেশ নিশ্চিত ও ব্রিফিং জোরদার করতে হবে। তাহলেই বিদেশে মত্যু কমে আসবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/200323