২ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:০৫

১৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য দেশে আনেনি সোনালী ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্বেগ ; প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফেরত আনার নির্দেশ

পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন (এলসি খোলা) করা হয়েছে। অর্থও বিদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সমপরিমাণ পণ্য দেশে আসছে না। এ রকম ১৩ হাজার কোটি টাকার অধিক পণ্য দেশে না আনার অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে সোনালী ব্যাংকের বকেয়া বিলের পরিমাণ মোট বকেয়ার ৭১ ভাগ। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনালী ব্যাংকের এমডিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে প্রেরিত অর্থ দেশে ফেরত আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আমদানির বিপরীতে পরিশোধিত বৈদেশিক মুদ্রার সমমূল্যের পণ্য দেশে আনার প্রমাণস্বরূপ সমমূল্যের বিল অব এন্টি দাখিল করা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। কিন্তু সোনালী ব্যাংক বিপিসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যে পরিমাণ পণ্য এলসি খুলেছিল সমপরিমাণ পণ্য দেশে আনেনি। একমাত্র বিপিসি আমদানির বিপরীতে পরিশোধিত বৈদেশিক মুদ্রার চেয়ে কম মূল্যের ১৫৫টি বিল অব এন্টি দাখিল না করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ১৫৫টি বকেয়া বিলের বিপরীতে আটকে রয়েছে ১৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ অনুযায়ী প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা অপেক্ষা কম মূল্যের বিল অব এন্ট্রি দাখিলের কোনো সুযোগ নেই।

সাধারণত, এলসি খোলার পর অর্থ পরিশোধ হলে ৪ মাসের মধ্যে পণ্য দেশে এনে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংক বা বিপিসি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাদের পণ্য না আনার বিষয়ে অবহিত করেনি। অথবা পণ্য আমদানি করলেও সোনালী ব্যাংক ও বিপিসি তা কাস্টমস সার্টিফায়েড বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেনি। এটা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত, পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলে অর্থ পরিশোধ করা হয়। সমপরিমাণ পণ্য দেশে না এলে ধরে নেয়া হয় অর্থ পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে পণ্য আমদানির জন্য অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে কিন্তু পণ্য দেশে আসেনি এমন মাত্র ৮ শতাংশ হলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। আর বাকি ৯২ শতাংশই হলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০ শতাংশই হলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসির।

ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বকেয়া বিল রয়েছে এমন ৯১ দশমিক ১৬ শতাংশই হলো সরকারি সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের। বাকি মাত্র ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হলো বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিপিসিসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মেয়াদোত্তীর্ণ বিল অব এন্ট্রিগুলো বিবেচনায় আনলে সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া ব্যাংকিং খাতের মেয়াদোত্তীর্ণ বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে জড়িত অর্থের পরিমাণ মাত্র ৮ শতাংশ বা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনিষ্পন্ন ৯২ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বিল অব এন্ট্রির কারণে এক দিকে যেমন দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঝুঁকির মুখে পড়ছে, অন্য দিকে ইন্টারনাল ও কমার্শিয়াল অডিট আপত্তিসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার ঝুঁকি কমাতে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা দ্রুত দেশে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনালীসহ চার সরকারি ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব আমদানির বিপরীতে পরিশোধিত বৈদেশিক মুদ্রার চেয়ে কম মূল্যের বিল অব এন্টি দাখিল করা হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে সমমূল্যের কাস্টমস সার্টিফায়েড বিল অব এন্টি অথরাইজ ডিলার শাখায় দাখিল করে অনলাইন সিস্টেমে ম্যাচিং অথবা প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা যথাযথ প্রক্রিয়ায় দেশে ফেরত এনে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/200108